ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বনানীতে ব্যবসায়ী খুন

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

বনানীতে ব্যবসায়ী খুন

রাজধানীর বনানীতে নিজ অফিসে খুন হয়েছেন এক জনশক্তি রফতানিকারক (আদম ব্যবসা) ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার দুর্বৃত্তরা তার অফিসে ঢুকে এই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওই অফিসে আরও তিনজন আহত হন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান-বনানী। রাতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকে এই আবাসিক এলাকা। এই বেষ্টনী ভেদ করে প্রবেশ করা সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়িতে গুলিতে খুন হন এই ব্যবসায়ী। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর গুলশান-বনানীর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। এলাকা দুটিতে বিশেষ বাস ও রিকশা সার্ভিস নামানো হয়। পুরো গুলশান-বনানী সিসি টিভির আওতায় এনে জনসাধারণের চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরও এই ধরনের হত্যাকান্ড-! এই খুন গুলশান-বনানীর নিরাপত্তা বেষ্টনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কারণ, বনানীর প্রতিটি রোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাস্তার মাঝখানে চেক পয়েন্ট রয়েছে। সন্ধ্যা হলেই সড়কগুলোর মুখ ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো থাকে। প্রায় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য। সড়কের মোড়, সড়কের ওপর ও বাসা-অফিসের সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানো। এত সব নিরাপত্তার আয়োজন থাকার পরও কিভাবে ঘটে গেল দুর্বৃত্তের এই হামলা। বনানী-গুলশান মূলত ভিআইপি আবাসিক এলাকা। এখানে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক অফিস এবং এখানে তাদের প্রতিনিধিরাও থাকেন। এর আগে হলি আর্টিজানে হামলা এবং যুবলীগ নেতা মিলকী খুনের ঘটনা এই এলাকার নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। নিরাপত্তা ঘাটতি যে এখনও রয়েছে বনানীর এই ঘটনা আবারও তারই আভাস দিল। এ কথা সত্যি যে, আবাসিক এলাকা হলেও এখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসের কারণে সরগরম থাকে সর্বদা। ফলে প্রতিদিন শত শত লোকের সমাগম ঘটে ব্যবসায়িক কারণে। এই গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষ করে নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। ইদানীং অপহরণ ও নিখোঁজের ঘটনা বেড়ে চলেছে। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে হতভাগ্যদের মৃতদেহ, আবার কারও কারও খোঁজও মিলছে না। বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনাও। বলা চলে সারাদেশেই অপরাধ কর্মকাণ্ড জেঁকে বসছে। এগুলো পরিকল্পিত কি-না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর মাত্র এক বছর বাকি। এই সময়ের মধ্যে নানা অপশক্তি দেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চাইবে। বিভিন্ন সময় জঙ্গী হামলার ঘটনাগুলোও এখানে উল্লেখ করার মতো। এদিকে অভিযোগ রয়েছে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে চিহ্নিত অপরাধীরা। কারও কারও ক্ষেত্রে অপরাধ করেও রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশ্রয় পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও। অনেক সময় দেখা যায়, একটি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটার পর তার তদন্তে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। ততদিনে জন্ম নেয় নতুন নতুন অপরাধীচক্র। সংঘটিত হয় নতুন নতুন অপরাধ। আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার কারণেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, মাত্র ১০ শতাংশ মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হয়। বাকিরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, তদন্তের দুর্বলতা, পুলিশের দুর্নীতিগ্রস্ততা ও সদিচ্ছার অভাবসহ নানা কারণে পার পেয়ে যায়। মৃত্যু জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি। কিন্তু এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখলে থমকে দাঁড়াতে হয়। এই ধরনের হত্যাকান্ড- কারও প্রত্যাশিত নয়। এই হত্যার বিচার জরুরী। একই সঙ্গে যেসব অপরাধী এসব অপরাধের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখানে কালক্ষেপণের কোন সুযোগ নেই।
×