রাকা থেকে আইএস জঙ্গীদের পালাতে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন!

সিরিয়ার যে শহরকে নিজেদের স্বঘোষিত খেলাফতের রাজধানী বানিয়েছিল ইসলামিক স্টেট, কিছুদিন আগে সেই রাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পশ্চিমা কোয়ালিশন সমর্থিত কুর্দী ও আরব কয়েকটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী। এই রাকা নগরীর পুনঃনিয়ন্ত্রণ নেয়ার স্বল্প সময় আগে ইসলামিক স্টেট আইএসের হাজার হাজার বিদেশী জঙ্গী সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র। মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। তবে বিবিসির সংবাদদাতারা এক অনুসন্ধানের পর বলছেন যে, যুদ্ধরত কয়েকটি পক্ষের মধ্যে এক গোপন চুক্তির অধীনে কয়েক হাজার আইএস জঙ্গীকে তাদের পরিবারসহ নিরাপদে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। তারা এখন সিরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এমনকী তুরস্কেও প্রবেশ করেছে। এসব জিহাদীদের মধ্যে ছিল ফ্রান্স, তুরস্ক, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সৌদি, চীন, তিউনিসিয়া, মিসরের নাগরিক। কীভাবে পরাজিত হওয়ার পরও অক্ষত দেহে পালাতে পারল তারা, সেটা এমন এক গল্প যা সব পক্ষই গোপন রাখার চেষ্টা করছে। অথচ রাকা পুনঃদখলের আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বলেছিল, আইএস জঙ্গীদের কাউকে পালাতে দেয়া হবে না। বিবিসির সাংবাদিক কুওয়েন্টিন সমারভিল বলছেন, রাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য আইএস জঙ্গীদের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছিল, যার আওতায় রাকায় থাকা আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের লোকরা অনেকে বাসে করে অন্য জায়গায় চলে যেতে পেরেছিল। রাকা শহরের সিটি হাসপাতাল ভবনে আইএস জঙ্গীরা কয়েক মাস ধরে লুকিয়ে ছিল। এই হাসপাতালের সামনে থেকেই তাদের বহনকারী বাসগুলো অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এই বাসগুলোতে ছিল আইএস জঙ্গীরা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং তাদের হাতে আটকে থাকা জিম্মিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে যাওয়ার সময় আইএসের জঙ্গীদের মোটেও পরাজিত বা হতাশ মনে হয়নি, বরং তারা উজ্জীবিত ছিল। এখানে এসেই তারা বুঝতে পারে যে আরাও একটি যুদ্ধের জন্য তারা বেঁচে থাকতে পারবে। যে চুক্তির ফলে তারা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছিল তা নিয়ে এখানে কেউই কথা বলতে চায় না। এটা হচ্ছে রাকার গোপন কথা। এখানে কি তাহলে কুর্দী, আরব ও পশ্চিমা কোয়ালিশন একসঙ্গে বসে একটা চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল যার ফলে আইএস শুধু যে রাকা থেকে পালাতে পেরেছিল তাই নয়- তাদের সবচেয়ে দুঃসাহসী জঙ্গীরা শহরের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিল? বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন- এই চুক্তির প্রথম করণীয় ছিল সংবাদমাধ্যমকে কিছুই জানতে না দেয়া, একটা মিডিয়া ব্ল্যাক-আউট। ইসলামিক স্টেটের পলায়ন টিভিতে দেখা যায়নি। বিশ্বকে বলা হয়েছে শুধু কিছু স্থানীয় জঙ্গীদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে, কোন বিদেশী ছাড়া পায়নি, কোন অস্ত্রও তারা নিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু সাধারণ লোকদের তোলা ভিডিওতে বিষয়টি ধরা পড়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি আইএস জঙ্গী ভর্তি ট্রাকের বহর যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে- তাদের হাতে ভারি অস্ত্র। কেউ কেউ তখনও আত্মঘাতী বেল্ট পরে আছে। বেশ কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর বিবিসি আইএস জঙ্গীদের বহন করা ট্রাকগুলোর খুঁজে পায় তাবকা শহরে। পাওয়া যায় বেসামরিক ড্রাইভারদেরও। তাদের ভাড়া করেছিল কুর্দী- নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স এসডিএফ।