ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেনাবাহিনীর অস্বীকার ॥ মুগাবে সুস্থ ও নিরাপদে

জিম্বাবুইয়ে সেনা অভ্যুত্থান

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

জিম্বাবুইয়ে সেনা অভ্যুত্থান

অভ্যুত্থান ঘটানোর কথা অস্বীকার করেছে জিম্বাবুইয়ের সেনাবাহিনী। বুধবার সকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেশটির সেনাপ্রধানের একটি বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়েছে। এতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তারা ক্ষমতা দখল করেননি। এর আগে মঙ্গলবার রাজধানী হারারের রাজপথে সাজোঁয়া যানের উপস্থিতি লক্ষ্য করে ধারণা করা হয়েছিল দেশটিতে হয়ত অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। অনেকে বলছেন, দেশটির নিয়ন্ত্রণ এখন কার্যত সেনাবাহিনীর হাতে। খবর এএফপি, বিবিসি ও সিএনএনের। মঙ্গলবার হঠাৎ করে খবর পাওয়া যায় যে, জিম্বাবুইয়ের সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্টানটিনো চিওয়েঙ্গার অনুগত বাহিনী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন জেডবিসির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বুধবার টেলিভিশনে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের ওই অভিযান পরিচালিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা ‘অপরাধীদের চক্রকে’ লক্ষ্য করে। ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে ও তার পরিবার ‘সুস্থ ও নিরাপদে’ আছেন বলে জানা গেছে। অভিযান শেষ হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, ‘জিম্বাবুইয়ের প্রতিরক্ষা বাহিনী এখন দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা করছে। এসব সমস্যা সমাধান করা না হলে সংহিস সংঘাত বেধে যেতে পারে। সেনাপ্রধান জনগণকে শান্ত থাকার এবং অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি না করার পরামর্শ দেন। সম্প্রতি মুগাবে শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজের দল জানু পিএফের মধ্যে শুদ্ধি অভিয়ান শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি গত সপ্তাহে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করেন। এর পর থেকেই মূলত বর্তমান সঙ্কট শুরু হয়েছে। নানগাগওয়াকে এতদিন মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হলেও সম্প্রতি তার জায়গায় ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের নাম সামনে চলে আসে। মুগাবের স্ত্রীর সঙ্গে নানগাগওয়ার এই বিরোধ ক্ষমতাসীন দলে বিভক্তি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক করে গ্রেস বলেছেন, নানগাগওয়া তার বিরোধীদের নির্মূল করতে চান। এদিকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মর্গ্যান চ্যাঙ্গিরাই সেনাবাহিনীর এ পদক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাজ্যের কেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রভাষক এ্যালেক্স ম্যাগেইসা বলেছেন, একটি ব্যাঙকে যে নামে ডাকা হোক, ব্যাঙ ব্যাঙই। জিম্বাবুইয়েতে যা ঘটেছে তা যে কোন বিচারে অভ্যুত্থান। যদিও তারা বলছে মুগাবে ক্ষমতায় রয়েছেন। বাস্তবতা হলো তাকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী এখন দেশ চালাবে। নানগাগওয়াকে এভাবে সরিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী পছন্দ করেনি। জেনারেল চিওয়েঙ্গা সম্প্রতি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের টানাপড়েন মিটিয়ে দিতে তার বাহিনী তৈরি আছে। এরপর জানু-পিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেনাপ্রধান উস্কানিমূলক ওই বক্তব্য দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। পাল্টাপাল্টি এ বক্তব্যের মধ্যে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে মোড় নেয়। মঙ্গলবার হারারের বাইরে বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনীর ট্যাংক আর সাজোঁয়া বহর অবস্থান নিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী জেডবিসি টেলিভিশন ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সময় এর কয়েকজন কর্মী মারধরের শিকার হন। টেলিভিশন কর্মীদের বলা হয়, সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতেই এসেছে, সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। মুগাবের বাসভবনের কাছাকাছি এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এদিকে বুধবারও জানু-পিএফের অফিসের সামনে সামরিক যানবাহন ছিল বলে এএফপি জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত জিম্বাবুইয়ের রাষ্ট্রদূত আইজ্যাক ময়ো সেনা অভ্যুত্থানের খবর নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ অখনও অটুট রয়েছে। হারারেতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক টুইটে জানিয়েছে, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে বুধবার তাদের অফিস বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দেশটিতে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যও তাদের নাগরিকদের একই পরামর্শ দিয়েছে।
×