ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুনের মোটিভ ও ক্লু খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ

বনানীতে নিজ অফিসে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

বনানীতে নিজ অফিসে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বনানীতে নিজ ব্যবসায়িক অফিসে সিদ্দিক মুন্সীকে (৫৫) হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে ধারণা করছে পুলিশ। ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে। তবে স্বজনদের দাবি- চাঁদা না দেয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বুধবার সকালে পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদ গণমাধ্যমকে জানান, চার থেকে ছয় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। তবে এখনও কেউ ধরা পড়েনি। এ বিষয়ে নিহতের স্ত্রী জোছনা বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে কাউকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে নিহত ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহতের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ জানান, গুলিতেই নিহত হয়েছেন সিদ্দিক হোসেন। ওই ব্যবসায়ীকে দু’টি গুলি করা হয়েছিল। একটি গুলি তার বাম হাতে লেগে বুকের ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আরেকটি গুলি বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ডান পাশে গিয়ে আটকে ছিল, যা উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে বনানীর ৪ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাসায় ঢুকে সিদ্দিক হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মির্জা পারভেজ (৩০), মোখলেছুর রহমান (৩৫) ও মুস্তাফিজুর রহমান (৩৯) নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনার সময় উপস্থিত আরেক কর্মচারী আবু জাফর বলেন, দুর্বৃত্তদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। তারা প্রত্যেকেরই মুখোশ পরা ছিল। পরনে ছিল প্যান্ট, শার্ট। গুলিবিদ্ধ হয়ে মালিক লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ড্রয়ার থেকে টাকা লুট করে। তবে কত টাকা লুট হয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত সিদ্দিক হোসেন মুন্সী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি জনশক্তি রফতারিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন। তার বাসা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে। নিহত সিদ্দিক টাঙ্গাইল কালিহাতীর পাড়ক্ষি মধ্যপাড়ার আনছার আলীর ছেলে। স্ত্রী জোসনা বেগম, দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা, সাবিহা সিদ্দিক ও ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় থাকতেন। সিদ্দিক এক সময় পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে প্রবাসে কষ্টের জীবন কাটিয়েছেন। প্রবাস জীবনের অর্জিত টাকা দিয়েই তিনি জনশক্তি রফতানির ব্যবসা শুরু করেন। অল্প সময়েই তিনি ব্যবসায়িক সাফল্য পান। তার ব্যবসায়িক সাফল্যে অনেকেই হিংসায় মেতে ওঠে বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। প্রতিদিনই বনানী অফিসে ব্যবসায়িক লেনদেন হতো। এ নিয়ে তিনি মাঝে মধ্যেই নিরাপত্তাহীনতাবোধ করতেন। এদিকে তিনটি বিষয় সামনে রেখে বনানীতে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সী হত্যার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পারিবারিক, ব্যবসায়িক বা স্থানীয় কোন ঝামেলার কারণে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বুধবার গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। পারিবারিক, ব্যবসায়িক বা স্থানীয় কোন ঝামেলায় এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে কিনা, তা সামনে রেখে তদন্ত চলছে। ডিসি মোস্তাক বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা ৫৫ মিনিটে দুর্বৃত্তরা বনানী ৪ নম্বর সড়কে ভিকটিমের অফিসে এসে গুলি করে হত্যা করে। চার যুবক মুখোশ পরে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সীকে গুলি করে। হত্যাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে আরও তিনজন আহত হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অফিসটিতে একাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। সিদ্দিক মুন্সী যে কক্ষে বসতেন সেখান থেকেও ক্যামেরায় তিনি অফিসের বাইরে লোকজনদের দেখতে পেতেন। হত্যাকা-ের পর খুনীরা চলে যাওয়ার সময় ক্যামেরার দিকেও নজর দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এ সময় নিহতের ভাই আব্দুল লতিফের কাছে ভাইয়ের হত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। হামলার বর্ণনা দিয়ে জাফর বলেন, মুখোশধারীরা ঢুকেই ক্যাশ কোথায় জানতে চায়। আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলল, টাকা ব্যাংকে জমা থাকে। এ কথা শুনে দুর্বৃত্তরা বকাবকি শুরু করে এবং একটি গুলি করে, কিন্তু অস্ত্র থেকে গুলি বের হয় নাই। পরে আবার তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে চলে যায়। নিহত সিদ্দিক টাঙ্গাইল কালিহাতীর পাড়ক্ষি মধ্যপাড়ার আনছার আলীর ছেলে। স্ত্রী জোসনা বেগম, দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা, সাবিহা সিদ্দিক ও ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় থাকতেন।
×