ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন হবে কমিশনের অধীনে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নয় ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

নির্বাচন হবে কমিশনের অধীনে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নয় ॥ কাদের

সংসদ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নয়। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো একটি নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করাই হবে নির্বাচন সময়ের সরকারের দায়িত্ব। সরকার নির্বাচনের সময় শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বাচনের সময়ে ইসির অধীনে থাকবে। সংস্থাগুলো তখন সরকারের কথা শুনবে না। তারা কথা শুনবে নির্বাচন কমিশনের। বিএনপি সেনাবাহিনীর কথা বলছে। সেনাবাহিনী তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আরপিওতে না থাকলে সেনাবাহিনী কীভাবে রাখবে ইসি? সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংবাদিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী মালিক ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেতুমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কোন রাজনৈতিক দলের নয়, এটি বাঙালীর সম্পদ, আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ ভাষণই স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল মুক্তিকামী জনতাকে। সেদিন এ ভাষণ নেতৃত্ব দিয়েছিল, কর্তৃত্ব করেছিল, শাণিত করেছিল চেতনা। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এদেশে এ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার ছিল নিষিদ্ধ। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার হতো না। মাইকে বাজানোর অপরাধে অনেককেই নিগৃহীত হতে হয়েছিল। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ এখন দলে ঐক্য গড়ে তোলার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিভেদ বহন করা আওয়ামী লীগের পক্ষে আর সম্ভব নয়। এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ বছর আমরা অনৈক্য ধারণ করতে পারব না। আওয়ামী লীগের জন্য সমর্থনের কোন কমতি নেই। কিন্তু দলের ভেতর কিছু সমস্যা আছে। সেগুলোকে সমাধান করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে দলে কিছু সমস্যা হয়। ঘরে শত্রু রাখলে বাইরে আক্রমণ তো হবেই। আমরা দুর্বল হলে বেশি আঘাত আসবে। আমরা আশাবাদী যে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এজন্য আমরা জেলাগুলোতে দিনরাত পরিশ্রম করছি। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোন ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে দলের ক্ষতি করা যাবে না। বিরোধীপক্ষ এর সুযোগ নেবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগের বিজয় হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থান একেক সময় একেক ধরনের। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য দেয়, বিএনপিও একই ধরনের বক্তব্য দেয়। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তারা একেক বার একেক রকম বক্তব্য দেয়। বিএনপির দ্বৈতনীতির কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, একসময় তারা ছিল তত্ত্বাবধায়ক, এখন আবার বলে সহায়ক সরকার! তারা কার কাছে এই দাবি জানায়? তারা ইসিকে বলে সহায়ক সরকারের কথা। ইসি এখানে কি করবে? পরে আবার বলে ইসি নাকি সরকারকে বুঝাবে। এখানে তারা ইচ্ছা করেই ভনিতা করছে। আসলে যেনতেন প্রকারে তাদের ক্ষমতায় বসাতে হবে। তা না হলে তারা শান্তি পাবে না। ‘শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না’ মর্মে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেরকম আইওয়াশ স্টেটমেন্ট দিয়েছে, খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যও সেই রকমই মনে হয়েছে। সংলাপে বসতে বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যখন ওনার (খালেদা জিয়া) ছেলে মারা গেলেন প্রধানমন্ত্রী ছুটে গেছেন ওনাকে সান্ত¡না দিতে। কিন্তু উনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। উনি এখন সংলাপের কথা বলেন। সংলাপের দরজা তো ওইদিনই বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের দরজা বন্ধ করে।’ বিএনপির নেতাদের মধ্যে সৌজন্যবোধ নেই উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এত কিছুর পরও খালেদা জিয়াকে বেগম জিয়া বলি। আর ওনারা বলেন, হাসিনা, হাসিনা। এটা আমাদের কষ্ট লাগে। কারণ বর্তমানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রসঙ্গে রসিকতার সুরে সেতুমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিত্ব চলে গেলে হয়ত আবার আমাকে সাংবাদিকতায় ফিরে যেতে হবে। এজন্য একটু সম্পর্ক রাখি। তিনি জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান বসবে। এরপর একে একে সব স্প্যান বসবে। এভাবেই একসময় পদ্মা সেতু পূর্ণদৃশ্যমান হবে বলে জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সবুজ সংকেত পেয়েছি। এ কথা স্বয়ং জিয়াউর রহমান বলেছিলেন। অথচ তার দল বিএনপি এখন সেই দিবস পালন করে না। ভাষণটিকে সম্মান করে না। তিনি বলেন, সেই ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। মনে হয় যেন এটা আওয়ামী লীগের সম্পদ। না, এটা আমাদের বাঙালীর সম্পদ। ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ার পরও বিএনপি কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তাই তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে হাসি পায়।’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, সিনিয়র সদস্য জাহিদুজ্জামান ফারুক। জাতীয় প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের পরিচালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অপকর্মকারীদের ছাত্রলীগে দরকার নেইÑ কাদের ॥ এদিকে দুপুরে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউশন মিলনায়তনে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর সংগঠন। ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার সংগঠন। এই ছাত্রলীগে ভাগাভাগি চলবে না। যোগ্যরাই হবে এই সংগঠনের নেতা। গুটি কয়েক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বদনামের কারণে গোটা ছাত্রলীগের বদনাম হতে পারে না। গুটি কয়েকের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ সরকার নিতে পারে না। তারা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী। দলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি। অনুপ্রবেশকারীদের দলে থাকার দরকার নেই। চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক শক্তির ছাত্রলীগে কোন প্রয়োজন নেই। অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। শরিয়তপুরের আরিফ হাওলাদার, পাথরঘাটার রনির মতো ছাত্রদের ছাত্রলীগের কোন দরকার নেই। এ সময় বিএনপির উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কী চায় তারা নিজেরাও জানে না। একবার বলে সহায়ক সরকার, একবার বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আবার কখনও বলে নির্দলীয় সরকার। আসলে তারা কী চায়, তারা জানে না। বিভিন্নভাবে বিএনপি সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করেছে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, অন্য কোন উপায়ে নির্বাচন হবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, দুই বছর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হলে আজকের নেতৃত্বে যে ‘ট্রাফিক জ্যাম’, এটা থাকত না। আরও নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসত। এ জন্য সময় মতো সম্মেলন করতে হবে। ছাত্রলীগের নতুন সাংগঠনিক জেলা ঘোষণার কথা জানিয়ে বলেন, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ অনেক বড় জেলা শাখা। কোথায় কেরানীগঞ্জ আর কোথায় ধামরাই? দুজন নেতার পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া যায় না। তাই এটাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ঢাকা জেলা উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে কমিটি দেয়া হবে। সে জন্য ছাত্রলীগের নেয়া সিদ্ধান্ত সঠিক। ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকরামুল নবী ইমুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুল মান্নান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ। সম্মেলন পরিচালনা করেন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন রাজিব।
×