ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সঙ্কটে হুমকির মুখে সৈয়দপুর রেল কারখানা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

জনবল সঙ্কটে হুমকির মুখে সৈয়দপুর রেল কারখানা

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী, ১৫ নবেম্বর ॥ বৃহত সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি জনবল সঙ্কটে থমকে যেতে শুরু করেছে রেলকোচ মেরামতসহ উৎপাদন কার্যক্রম। তাই জনবল নিয়োগের দাবি নিয়ে ১৫ নবেম্বর জাতীয় রেল শ্রমিক লীগ সৈয়দপুর রেল কারখানার সামনে হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধন ও সমাবেশ পালন করে। সমাবেশে বক্তারা দ্রুত নিয়োগ দিয়ে রেল তথা সৈয়দপুর কারখানাসহ এর বিভিন্ন দফতরকে সচল করে সরকারের সেবামূলক এ পরিবহন সেক্টরকে রক্ষায় আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুরের সকল রেলওয়ে ট্রেড ইউনিয়নের আহ্বায়ক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সৈয়দপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একরামুল হকসহ সকল ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিরা। মোখছেদুল মোমিন বলেন, বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নের রূপকার। সৈয়দপুর রেল কারখানাটি আধুনিকায়ন করা হলেও এখন জনবল সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। জনবল সঙ্কটে কারখানাটি বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। এটি যাতে না হয় সেজন্য জরুরীভাবে জনবল নিয়োগের দাবি জানান এ মানববন্ধনে। কমান্ডার একরামুল হক বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাসহ অন্য বিভাগের মোট মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা হচ্ছে ৪ হাজার ১৯। সেখানে কর্মরত আছেন কেবল ১৫৬৮ জন। এতে ২৪৫৩টি পদই শূন্য রয়েছে। আর শুধু সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা দুই হাজার ৮৩৫টি হলেও জনবল রয়েছে মাত্র ১ হাজার ১০৮ জন। নিয়মিত গড়ে কাজ করেন এক হাজার আটজন। বর্তমানে রেলওয়ের এ কারখানায় শূন্য পদের সংখ্যা এক হাজার ৭২৭টি। শতকরা ৬২ ভাগ পদ শূন্য রয়েছে। জনবল সঙ্কট থাকায় মারাত্মকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অবসরে যাওয়ায় দিন দিন দক্ষ জনবলও কমছে। তাই অনতিবিলম্বে শূন্য পদে লোক নিয়োগ দেয়া না হলে ভবিষ্যতে এ কারখানাটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জনবল নিয়োগ দেয়া হলে যাত্রীবাহী কোচ মেরামতের এ কারখানায় বছরে কমপক্ষে ২৫০ থেকে ২৭৫টি কোচ মেরামত করা সম্ভব। এতে করে প্রতিবছর কমপক্ষে পাঁচশত কোটি টাকা সড়কের সাশ্রয় হবে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামত হওয়া যাত্রীবাহী কোচগুলো রেলওয়ের পশ্চিম জোনে সরবরাহ করা হয়। দক্ষ ব্যক্তিরা মেরামতের কাজ করায় আমদানিকৃত কোচের আদলেই তা তৈরি হয়। আসাম বেঙ্গল রেলপথকে ঘিরে ১৮৭০ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন ওই কারখানায় ১৬ হাজারেরও বেশি জনবল কাজ করতো। পাকিস্তান সৃষ্টির পর লোক সংখ্যা কমে সাড়ে ১০ হাজারে নেমে আসে। পাকিস্তানী সরকার ১৯৬৭ সালে নতুন যাত্রীবাহী কোচ নির্মাণের জন্য এই কারখানায় সিসিসপ (উপ-কারখানা) স্থাপন করেন। এতে আন্তর্জাতিকমানের যাত্রীবাহী কোচ নির্মাণ শুরু হয়। স্বাধীনতার পরও তা অব্যাহত ছিল। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে সিসি সপের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। শ্রমিকদের আন্দোলনের চাপে সে সময় সরকার সিসিসপ চালুকরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে ভারতীয় ঋণে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় আরেকটি নতুন যাত্রীবাহী বগি কারখানা নির্মাণের কথা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু আমলার কূটচালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নতুন বগি তৈরি কারখানা দেশের অন্যত্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এতে করে সরকারের বাড়তি কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। নতুন জায়গায় মিলবে না দক্ষ জনবল। কিন্তু সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নতুন বগি কারখানা চালু করা হলে সরকারের বাড়তি কানাকড়িও খরচ হবে না।
×