ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ প্রায় সবই নদীনির্ভর। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। অথচ বাংলাদেশ সে পথেই এগিয়ে চলেছে। বহু নদী এর মধ্যেই মরে গেছে। বহু নদী মৃত্যুর পথে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। নদীগুলো ভারত থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। উজানে ভারতের অংশে নদীগুলোর পানি প্রবাহের গতিরোধ করা হলে কিংবা পানি প্রত্যাহার করে নিলে নদীগুলোর বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ কমে যায়। নদী শুকিয়ে যায়। বেশি করে পলি জমে ও চর জাগে। তাতে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। বন্ধ হয়ে যায় নৌপরিবহন। ক্রমেই নিচে নেমে যায় পানির স্তর। শুরু হয় মরুকরণ প্রক্রিয়া। কারণ বর্ষায় যত পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে, তার ৯৫ শতাংশই আসে উজানে থাকা ভারতীয় অঞ্চল থেকে ঢলের আকারে। নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় তখন বন্যা ও জলাবদ্ধতা অবধারিত হয়ে পড়ে। নষ্ট হয় হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল। তাই অভিন্ন নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দু’দেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে সুফল। এখনও তিস্তা চুক্তি হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি থাকে না। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই পানি সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে এ অঞ্চলের সব দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে পানি ব্যবস্থাপনার ওপর। দেশ যখন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে যাচ্ছে, তখন এই উন্নয়নকে সামনে নিয়ে যেতে পানি সঙ্কট সমাধান জরুরী হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন বদ্বীপ পরিকল্পনা বা ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত শতবর্ষব্যাপী এই পরিকল্পনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তাই এর দ্রুত বাস্তবায়ন সঙ্গত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বাংলাদেশ। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রতিবছরই। বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয় দেশের ব্যাপক অঞ্চল। আবার গ্রীষ্মে দেখা দেয় খরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এই উভয়মুখী সঙ্কটে বাংলাদেশের জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় অপরিমেয়। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ ও পন্থা হচ্ছে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। আর এর যাবতীয় সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পরিকল্পনা এটি। যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সমস্যা বহুলাংশে কাটিয়ে উঠতে পারে। শতবর্ষব্যাপী এই পরিকল্পনা ষাট বছর পরে হলেও শুরু হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮০ ভাগ পানি নষ্ট হয় অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে। সেটা ধরে রাখা হয় না। অথচ এ পানি ধরে রাখা তথা বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বদ্বীপ পরিকল্পনা ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। অবশ্য তা বাস্তবায়নে অনেক বাধা আসবে, তা মোকাবেলা করেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নির্ধারণ কাজ শুরু করা দরকার এখনই। জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়নের সতেরোটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হলে বদ্বীপ পরিকল্পনার উদ্যোগ এখন থেকেই সফলভাবে পরিচালিত করতে হবে এবং এই পরিকল্পনাকে আরও সুপরিকল্পিতভাবে সমন্বিত করা প্রয়োজন। সরকারী এবং বেসরকারী অনেক সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে একত্রিত করে বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে উদ্দেশ্য যেন সবার সমান হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু নদীখনন আর বন্দর উন্নয়ন করলে পরিকল্পনার মূল কাজে অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে। এজন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, এই পরিকল্পনা জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তাই এ নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার।
×