ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ৪ সহস্রাধিক পরিবার আজও ঘর পায়নি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

কলাপাড়ায় ৪ সহস্রাধিক পরিবার আজও ঘর পায়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৪ নবেম্বর ॥ বুধবার সিডর তা-বের দশ বছর। প্রকৃতির বুলডোজার সুপার সাইক্লোন খ্যাত ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল তান্ডবের কথা কলাপাড়ার মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। ১০ বছর পরও কলাপাড়ায় চার সহস্রাধিক পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে ঝুপড়িতে চরম ঝুঁকিতে বসবাস করছে। এছাড়া যাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল তারও ৯০ ভাগ ঘর বাস উপযোগিতা নেই। বাড়ছে গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা। ২০০৭ সালে সিডরের ভয়াল তা-বে কলাপাড়ায় সরকারী হিসাবে ৯৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বেসরকারী হিসাবে ১০৪ জন। আজও নিখোঁজের রয়েছে সাত জেলে ও এক শিশু। আহত হয়েছে ১৬৭৮ জন। এর মধ্যে ৯৬ জন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিধবা হয়েছে ১২ গৃহবধূ। এতিম হয়েছে ২০ শিশু। সম্পূর্ণভাবে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ১২ হাজার নয় শ’ পরিবার। আংশিক বিধ্বস্ত হয় ১৪ হাজার নয় শ’ ২৫ পরিবার। তিন হাজার দুই শ’ ২৫ জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রকৃতির ওই কালো থাবায় শতকরা ৯০ ভাগ পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। এর মধ্যে ৫৪৭৩টি পরিবারকে ঘর নির্র্মাণ করে দেয়া হয়েছে। ৫৪০ পরিবারের মধ্যে দেয়ার জন্য ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এসব ব্যারাকের অন্তত ৩০০ লোকজন থাকছে না। ব্যারাক হাউসের চাল বেড়া পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আরও চার সহস্রাধিক পরিবার আজ পর্যন্ত ঘর পায়নি। আদৌ আর কখনও পাবে কিনা তা খোদ সরকারের মহল থেকে নিশ্চিত করতে পারেনি। তারপরও সম্পূর্ণ এবং আংশিক বিধ্বস্ত চার সহস্রাধিক পরিবার আজও মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এরা বেড়িবাঁধের বাইরে ঝুপড়ি তুলে সন্তান পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বরগুনায় বাঁধ সংস্কার হয়নি নিজস্ব সংবাদদাতা বরগুনা থেকে জানান, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ১০ বছরেও দক্ষিণ উপকূলের বরগুনা জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুনঃনির্মাণ হয়নি। ফলে এই অঞ্চলের দশ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় জেলার অগণিত মানুষের জীবন-জীবিকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় জেয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে এ অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কার ও নির্মাণ না হলে কৃষি নির্ভর এ জেলার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। ১৪ নবেম্বর ২০০৭। সকাল থেকেই উপকূলের আকাশে গুরুগম্ভীর মেঘ আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে প্রচ- বেগে উপকূলে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর। মাত্র আধাঘণ্টার তা-বে ল-ভ- হয় উপকূল। ক্ষতিগ্রস্ত অপেক্ষকৃত নিচু বাঁধ উপচে ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল তোড়ে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তূপে। আমতলীতে অপ্রতুলআশ্রয়কেন্দ্র নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৯৭ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। নিখোঁজ রয়েছে ৪৯ জেলে। অগণিত গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছিল। বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সুন্দরবনের গাছপালা ব্যাপক ক্ষতি হয়। সিডরের আজ ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আজও উপকূলবাসীর মাঝে ফিরে আসেনি সচেতনতা। ওই সময় অসচেতনতা কারণে সবচেয়ে প্রাণহানি ঘটে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নিদ্রা, সখিনা, আশারচর, জয়ালভাঙ্গা ও ফকির হাট এলাকায়। যারা সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের প্রাণহানী ঘটেনি। বেশি প্রাণহানি ঘটেছে সাগরে অবস্থানরত জেলেরা। জেলেদের অসচেতনতার জন্য এত প্রাণহানী। গত ১০ বছরে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ এখনও অসমাপ্ত।
×