ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে প্রতিরোধকারী যোদ্ধাদের সম্মাননা জানাল পুলিশ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধে প্রতিরোধকারী যোদ্ধাদের সম্মাননা জানাল পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী পুলিশ যোদ্ধাদের সম্মাননা জানাল বাংলাদেশ পুলিশ। অনুষ্ঠানে ৩৪ জন প্রতিরোধযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইতোপূর্বে আরও ৪৪ জন প্রথম প্রতিরোধযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ১১শ’ জনের বেশি। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় পুলিশ কনভেনশন হলে তাদের সম্মানিত করা হয়। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাক সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। সেই পৈশাচিকতার প্রথম টার্গেট ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স। স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের বজ্রদীপ্ত আহ্বানে উদ্দীপ্ত ছিল তৎকালীন পুলিশের বাঙালী সদস্যরা। তারা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করে ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনে নিরপেক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব অপরূপ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে প্রথম রাজারবাগ আক্রমণের খবর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের বেতারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় সারাদেশে। এরপর সকল পুলিশ লাইন্সেই প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের মতো প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বড় বড় পুলিশ লাইন্সে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় ওয়্যারলেস বেজ থেকে প্রেরিত বার্তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে আপামর জনসাধারণ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তিনি বলেন, মাস্টাররোল এবং মুজিবনগর সরকারের দলিলপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার কর্মস্থল ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ১১শ’ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য। অনেকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, প্রতিরোধযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×