ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরোজ মান্না

ভিশন ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

ভিশন ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ

(গতকালের পর) বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার স্থাপন-বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক সংলগ্ন স্থানে সাড়ে ৭ একর ভূমির উন্নয়নের কাজ চলছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন ইনফো সরকার-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত কানেক্টিভিটির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের জন্য ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ বছরের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার নামে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই হাজার কম্পিউটার ল্যাব ও ৬৪ জেলায় একটি করে ল্যাংগুয়েজ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে সেবা চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পেপ্যলের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পেমেন্ট কার্যক্রম চলছে। সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন সেন্টার দেশে গড়ে তোলা সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন সেন্টার। সরকারী-বেসরকারী কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সফটওয়্যারের সার্টিফিকেশনের কোন ব্যবস্থা নেই। সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ডিপিপি প্রণয়ন করছে। শিগগিরই ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হবে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক ৭টি আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যে গতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই সব উদ্যোগের বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী একটি অঙ্গীকার ডিজটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এই অস্মিরণীয় ও প্রেরণাদায়ী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অন্যতম অংশীদার হিসাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নানা কর্মসূচি ও উদ্যোগের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে এবং দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে, কানেক্টিভিটি ও আইসিটি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা, আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন, একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদের উন্নয়ন, তথ্য ও সেবার ডিজিটালাইজেশন, আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বেসরকারী খাতের সহযোগিতায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল জাতীয় ডাটা সেন্টারটির সম্প্রসারণসহ ওয়েবহোস্টিং ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে ওয়েবহোস্টিং ক্ষমতা ৭৫০ টেরাবাইটে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সরকারী সংস্থা তাদের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এর ফলে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য ও ডাটা ইন্টারঅপারেবল (আন্তঃপরিবাহী) হচ্ছে না। সরকারী এক প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও ডাটা যাতে অন্য প্রতিষ্ঠান সহজেই পায় বা ইন্টারঅপারেবল হয় সেজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার (এনইএ) প্রতিষ্ঠা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিসিসির এলআইসিটি প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও একটি স্পেশাল সাউন্ড ইফেক্ট ল্যাব স্থাপন ও ১৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন ২০১৫ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেরএকটি বড় ঘটনা কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক উন্নয়ন কাজ শুরু করা। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিষয়ে কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কার্যক্রম শুরু করলে শুধু কালিয়াকৈরে নয়, বিভাগীয় এবং কয়েকটি জেলা শহরে হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কালিয়াকৈর ও রাজধানীর কাওরান বাজারে জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কালিয়াকৈরে ২৩২ একর জমির ওপর হাইটেক পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ২ এবং ৫নং ব্লকের জন্য হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সামিট টেকনোপলিস লিমিটেড উন্নয়ন কাজ চলছে। ৩নং ব্লকের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ফাইবার এ্যাট হোমের কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ টেকনোসিটি লিমিটেড কাজ বাস্তবায়ন করছে। কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সড়ক বাতি নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় কালিয়াকৈর অভ্যন্তরীণ রাস্তা (প্রায় ২ হাজার ২২৫ মিটার) নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের ২৩২ একর জমি সংলগ্ন অতিরিক্ত আরও ৯৭ একর জমি হাইটেক পার্কের অনুকূলে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হলে ৭০ হাজার লোকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। দক্ষ মানব সম্পদ আগামী তিন বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক লাখ দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প বিশ্বমানের প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলছে। এর মধ্যে ১০ হাজার তরুণ-তরুণীকে টপ আপ আইটি এবং ২০ হাজারকে ফাইন্ডেশন প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। উল্লেখ্য, আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং ১০ হাজার টপ আপ আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ৬০ শতাংশের চাকরির ব্যবস্থা করবে। বিসিসির ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্রে স্বল্পমেয়াদী-বিশেষায়িত ও দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে বিকেআইসিটি ৩ হাজার ২৭৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া ৮০ জন প্রতিবন্ধীকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যাদের মধ্যে ৩২ জনের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীন সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় দেশে-বিদেশে ৪ হাজার ৯৮১ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমপ্লয়মেন্ট স্কিমের আওতায় ১ হাজার ২৮৬ জনের চাকরি হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার গতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আত্মনির্ভরশীল মানুষ তৈরিতে লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অধীনে ২০১৪ সাল থেকে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ‘বাড়ি বসে বড় লোক’ কর্মসূচীর অধীনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ২৬ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হয়। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী। আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বের অন্যতম মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। ২০১৪ সালে এটি কারনির প্রতিবেদনে আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম, কেপিএমজির প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে এশিয়ার উদীয়মান আউটসোর্সিং গন্তব্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে এবং আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সংহত করে যাচ্ছে। তথ্য ও সেবার মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন মানুষের হাতের মুঠোয় বিভিন্ন তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন উদ্যোগ গ্রহণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগ ও অধিদফতরের তথ্য ও সেবার মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন তৈরির লক্ষ্যে আইডিয়া জেনারেশন ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়। এসব আইডিয়ার মধ্য থেকে ৬০০ মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। আইসিটি ভিত্তিক উদ্ভাবনীতে সহযোগিতা সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবনীকে উৎসাহিত করছে। ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য ৩৯ জনকে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গবেষণা কাজের জন্য মাস্টার্সের ২৩ জন, এমফিল-এ ২ জন, পিএইচডিতে ৬ জনসহ মোট ৭৬ জনকে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ জনকে সর্বমোট ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালাকে যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ ২০০৯ এর সংশোধন, সংযোজন ও পুনর্বিন্যাস করে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ ২০১৫’ প্রণয়ন করে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৪ এবং তথ্য নিরাপত্তা পলিসি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে পূর্ণ মাত্রায় ডিজিটাল। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেক্টর এগিয়ে যাচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত লক্ষ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে। (সমাপ্ত) লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×