ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ পানির জন্য

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

নিরাপদ পানির জন্য

সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। এই সঙ্কট হয়ে উঠছে মানবজাতির জন্য চ্যালেঞ্জ এবং তা বিশ্বজুড়েই। অনেক দেশেই বিশুদ্ধ পানি আর সহজলভ্য নয়। বিশ্বের তিন ভাগ জল আর মাত্র এক ভাগ স্থলভূমি হলেও সেই বিপুল জলরাশি প্রাণিকুলের পানের উপযোগী নয়। বেশিরভাগ পানিই লবণাক্ত। আর সুমিষ্ট যে পানি স্থলভাগের বিভিন্ন আধারে সঞ্চিত রয়েছে তার প্রাপ্যতাও সুলভ নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও স্থলভাগের সুপেয় পানি ফুরিয়ে আসছে। উৎসগুলো একে একে লোপ পেতে চলেছে জীবনযাত্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে মানুষের নানা চাহিদা মেটাতে গিয়ে। তাছাড়া নানাভাবে দূষণেরও শিকার হয়ে পড়ছে মিঠা পানির আধারগুলো। ফলে জনস্বাস্থ্য পড়ছে হুমকির মুখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ পানির ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। কারণ ষোলো কোটি মানুষের দেশটিতে ৯৭ ভাগের জন্য পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে না পারা এবং মৌসুম ভেদে পানি সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘিœত হচ্ছে। জনগণের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের জন্য নানা উদ্যোগ রয়েছে তেরোটি মন্ত্রণালয়ের পঁয়ত্রিশটি সংস্থার। নানা রাসায়নিক দিয়ে নিষ্কাশিত পানি দীর্ঘক্ষণ আগুনে ফোটানোর পরও দুর্গন্ধমুক্ত আর হয় না। আর এই পানি পান করতে হচ্ছে খোদ রাজধানীবাসীকে। পানির অপর নাম জীবন হলেও পানি পান করেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন বহু মানুষ। কেবল নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে দশ লাখ মানুষ মারা যায়। যাদের অধিকাংশই শিশু। দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ত্বকের নানা রোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগী বৃদ্ধির নেপথ্যে দূষিত পানিকেও দায়ী করা হচ্ছে। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে। নদীমাতৃক ও প্রবল বৃষ্টির দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দুর্ভাগ্যজনকই বটে। ঢাকা ওয়াসা আজও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটির নিজ আওতাভুক্ত এলাকায় দৈনিক চাহিদা ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটারের বেশি যোগান দিলেও বেশিরভাগ পানিই বিশুদ্ধ নয়। ওয়াসা মূলত শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা থেকে পানি সংগ্রহ করে সরবরাহ করে। কিন্তু নদী দুটির পানি এত বেশি দূষিত হয় যে, নানা রাসায়নিক দিয়ে শোধিত হওয়া পানি বাসায় দীর্ঘক্ষণ ফোটানোর পরও দুর্গন্ধ থেকেই যাচ্ছে। ঢাকার পানি সরবরাহ এবং নর্দমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা সেবামূলক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৬৩ সালে ঢাকা শহরে ওয়াসা যাত্রা শুরু করলেও সুপেয় পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিচ্ছে যে, আগামী এক বছরের মধ্যে রাজধানীবাসীকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে রাজধানীতে জলাবদ্ধতাও থাকবে না। ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলো আগামী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হলে স্যুয়ারেজ লাইনগুলো ঠিক হয়ে যাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ভারি বর্ষণ হলে ঢাকার যত্রতত্র পলি জমার কারণ হলো ড্রেনগুলো পলিথিনসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ভরে যায়। তবে এ ধরনের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞ যারা দক্ষ, তাদের মাধ্যমে কাজ করানো হলে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে। তবেই ঢাকাবাসী ওয়াসার পাইপ লাইনের পানি পান করতে পারবে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রটিও সঙ্কুুচিত। এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ নগরবাসীর কাম্য। ওয়াসা সেই পথে যাবে কিনা, তা এখন দেখার বিষয়।
×