ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালিত

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালিত

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের ৬৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে সোমবার রাজধানীসহ দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন। গাজীপুর : গাজীপুরের ‘নুহাশপল্লী’তে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর কবরের পাশে মানুষের ঢল নামে। এ উপলক্ষে রবিবার রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ুন আহমেদের হতে গড়া ‘নুহাশ পল্লী’তে হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে পুরো নূহাশপল্লীকে আলোকিত করা হয়। এছাড়াও রাত বারটা এক মিনিটে কেক কাটা হয়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। পরে তিনি শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত ও মোনাজা করেন। কবর জিয়ারত শেষে নুহাশপল্লীতে হোয়াইট হাউসের পাশে স্থাপিত হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেল তলায় হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনের কেক কাটেন তার দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত। এসময় শতাধিক ভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এসময় মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত প্রচুর জিনিস আছে, সঙ্গে তার হাতে লেখা পান্ডুলিপি, বই, চশমা, কলমগুলো, ওনার গ্লাসগুলো, যে কাপে চা পান করতেন, যে টেবিলে লিখতেন, এগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজন। সেগুলো আমার কাছে, হুমায়ূন আহমেদের ভাই-বোনদের কাছে, তার সন্তানদের কাছে আছে। আমার ইচ্ছা নুহাশ পল্লীতে একটি হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর করব। এই প্রস্তাবটা নিয়ে আমি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি- খুব শীঘ্রই পারিবারিক সম্মতিতে আমরা নুহাশ পল্লীতে জাদুঘরটি স্থাপন শুরু করতে পারব। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা নুহাশপল্লীতে ভীড় জমাতে শুরু করেন। তারা তাদের প্রিয় লেখকের কবরে ফুল দেন এবং নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। ভক্তরা দিনভর তাদের প্রিয় লেখকের হাতে গড়া নুহাশপল্লী ঘুরে ঘুরে দেখেন। জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর ভাষ্কর আসাদ খান তার দ্বিতীয় একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করেন। এতে কাঠ দিয়ে তার তৈরী ৬৯টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। এদিকে হুমায়ুন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহনের উদ্যোগে গাজীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সকালে ক্যান্সার সচেতনতামূলক ৩০ জনের একটি সাইকেল র‌্যালি জেলা শহর থেকে নুহাশ পল্লীতে যায়। পথিমধ্যে তারা সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে। সংগঠনের ১৫ সদস্যের অপর একটি দল ঢাকা থেকে খালি পায়ে হেঁটে নূহাশপল্লীতে যায়। বিকেলে হিমু পরিবহন গাজীপুরের উদ্যোগে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘হুমায়ূন জন্মোৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম। অধ্যাপক মুকুল কুমার মল্লিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াৎ হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক অসীম বিভাকর, প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল, সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নাসরীন সুলতানা বেবী প্রমুখ। নেত্রকোনা : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তাঁর নিজ গ্রামে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল: প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আনন্দর‌্যালি, আলোচনা সভা, পথ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কোরানখানি। বেলা সাড়ে ১০টায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গনে হুমায়ূন আহমেদের নিজ গ্রামবাসী এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ১১টায় বের করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে র‌্যালিটি স্থানীয় সড়ক ঘুরে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন: হুমায়ূন আহমেদের চাচা আলতাবুর রহমান আহমেদ, বিদ্যাপীঠের সহকারি প্রধান শিক্ষক শরীফ আনিস আহমেদ, হুমায়ূন ভক্ত পরিষদের আহবায়ক লুৎফুর রহমান প্রমুখ। পরে কেক কাটা, পথ নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর : ফরিদপুরে নানা আয়োজনে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার সকালে ফরিদপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘হুমায়ূন আহমেদ জন্মোৎসব কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎক পরিষদ (স্বাচিপ) ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. এম এ জলিল। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, মফিজ ইমাম মিলন, মৃধা রেজাউল করিম, সাবেরা আহমেদ, নির্মলেন্দু চক্রবর্তী শঙ্কর প্রমুখ। বক্তারা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী। তার লেখা আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ ও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে হুমায়ূন আহমেদ লেখা প্রেরণা যুগিয়েছে। তারা আরো বলেন, হুমায়ূন আহমেদের রসবোধ ও সৃষ্টিশীলতা বিশ্বসাহিত্যে বাংলা সাহিত্যকে নতুন করে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে হুমায়ূন আহমেদের ওপর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও লেখা নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
×