ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৭

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৭

১৯৯১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিবছর ১৪ নবেম্বর তারিখে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হবে। ১৪ নবেম্বর তারিখে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালনের আরও একটি কারণ হলো এই দিনে ফ্রেডরিক ব্যান্টিং জন্মগ্রহণ করেন, যিনি তার সহযোগী চার্লস বেল্টকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যাপক ম্যাকয়িডের গবেষণাগারে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের মহৌষধ ইনসুলিন আবিষ্কার করেন। এই দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশন’ আইডিএফের তথ্য মতে, দেশে মোট ৭১ লাখ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিক রোগী। এছাড়া আরও প্রায় ৭১ লাখ (মোট প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ) মানুষ ডায়াবেটিক নিয়ে বসবাস করছে। যারা এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি। ডায়াবেটিস বর্তমানে একটি মহামারী রোগ হিসেবে চিহ্নিত এবং এই রোগ সারা জীবনের রোগ। নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জটিলতা অনেক। ডায়াবেটিসের এত সব জটিলতার কথা চিন্তা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর ১৪ নবেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবছরেরর মতো এবারও একটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ বছরের স্লোগান হচ্ছে ‘ডড়সবহ ধহফ উরধনবঃবং, ঙঁৎ জরমযঃ ঃড় যবধষঃযু ভঁঃঁৎব’ বাংলাদেশে ডায়াবেটিস যুক্তিকর সিদ্ধান্ত যা বাংলায় করা হয়েছে ‘সকল গর্ভধারণ হোক পরিকল্পিত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ডায়াবেটিক ফেডারেশনের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি, আর এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটিতে। সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। ১০ জনের মধ্যে ১ জন নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এবারের প্রতিপাদ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, নারীদের ডায়াবেটিসের ওপর এবার বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনধারণের কারণে যেমন ডায়াবেটিস বাড়ছে, তেমনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের অর্ধেকেরও বেশি পরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এমনকি অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় এবং সেই শিশু পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর অতিরিক্ত ওজন হলে তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেশি থাকে। উল্লেখ্য, এ বছর আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন যখন নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ওপর গুরুত্বারোপ করতে যাচ্ছে তার আগেই বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা দিতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে সারাদেশে ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবাকেন্দ্র’ খোলা হয়েছে, যেখানে নির্ধারিত সময়ে বিনামূল্যে গর্ভধারণ-পূর্ব পরামর্শ এবং স্বল্পমূল্যে গর্ভধারণ সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রসবকালীন নারী ও শিশু মৃত্যুর হার যেমন কমানো সম্ভব হবে, তেমনি নারীসহ আগামী প্রজন্মকেও ডায়াবেটিসের ভয়াবহ প্রকোপ থেকে অনেকাংশ রক্ষা করা সম্ভব হবে। উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ডায়াবেটিসকে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। সুতরাং প্রতিদিন যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছেন তেমনি বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীদের নানা ধরনের জটিলতা। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিসকে মহামারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন তা হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে আমাদের শারীরিক সক্রিয়তা কম এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ না করা। তবে কথাটি সত্য যে, ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে প্রতিবছর অসংখ্য মহিলা ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছেন এবং ডায়াবেটিস নিয়ে শিশু জন্ম দিচ্ছে অথবা নবজাত শিশুর বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রতিটি গর্ভবতী মা যদি গর্ভধারণের পূর্বেই বিশেষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং ডায়াবেটিস না হলে তা নিয়ন্ত্রণে রোগা সন্তান জন্ম দিতে পারে। তবে সন্তান সুস্থভাবে জন্ম দিতে পারবে মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগী যদি তিনটি D-Diet, Drug, Discipline অর্থাৎ পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ এবং রক্ত পরীক্ষা ও ব্যায়াম এই তিনটি নীতিকে নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিদিন মেনে চলেন তাহলে তিনি অবশ্যই স্বাভাবিকের কাছাকাছি, সামাজিকভাবে উপযোগী, সৃজনশীল কাজে সক্ষম ও সম্মানজনক জীবন নির্বাহ করতে পারবেন। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। লেখক : অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টাল সার্জারি, বারডেম [email protected]
×