ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লোকসঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

লোকসঙ্গীত উৎসব

ঢাকায় উৎসবের কমতি নেই। একের পর এক নানা ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়েই চলেছে। কিছুকাল আগেই হলো নাট্যাৎসব, তাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশের নাট্যদল তাদের নাটক পরিবেশন করে। আর সদ্য সমাপ্ত হলো আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব। জনকণ্ঠ যথাযথভাবেই তার খবর দিয়েছে পাঠকসমাজকে। উৎসবে লোকজ বাংলার বাউল গান থেকে শোনা গেল সাম্বা ও ফ্ল্যামেঙ্কো নাচের ছন্দোময় ব্রাজিলিয়ান লোকগানের সুর। ভারতের অসমিয়া সুরের সঙ্গে মন রাঙালো তিব্বতের পাহাড় ও ঝরনার শব্দধ্বনিময় লোকসঙ্গীতের সুর। বৈশ্বিক লোকগীতির সম্মিলনে যান্ত্রিক শহরে বয়ে গেল স্বস্তির সুবাতাস। মাটি ও মানুষের কথা বলা লোকগানের সুরে মুখরিত হলো কংক্রিটের শহর ঢাকা। শেকড়সন্ধানী সুরধারায় ঝলমল করে উঠল নগর। এমনই মোহময় রূপে ধরা দিল ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের তিন-তিনটে রাত। সঙ্গীত পরিশুদ্ধ করে হৃদয় আর একটি ভাল বই পথ দেখায়, পথের সন্ধান দেয়। একটির সঙ্গে অন্যটির প্রত্যক্ষ সমন্বয় না থাকলেও রয়েছে পরোক্ষ বন্ধন। এক অর্থে গান ও বই দুটোই আনন্দ দান করে, জ্ঞানতৃষ্ণা বাড়ায় এবং মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীবÑ সেটি সে অনুধাবনে সমর্থ হয়। কথায় বলে, যে গান ভালবাসে সে খুন করতে পারে না। কথাটা মিথ্যে নয়। আর বই যার নিত্যসঙ্গী তার পক্ষেও সম্ভব নয় মানুষের ক্ষতিসাধন। দেশে তাই গানের উৎসব এবং বই পড়ার আয়োজন হতে দেখলে সমাজের অভিভাবকমণ্ডলী খুশি হন, আশ্বস্ত বোধ করেন। রাজধানীতে সদ্যসমাপ্ত ফোক ফেস্ট বা লোকসঙ্গীত উৎসব বেশ সাড়া ফেলেছে। ঢাকার বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে ত্রিশ হাজার পর্যন্ত লোকসমাগমের রেকর্ড রয়েছে, যার সিংহভাগই তরুণ-যুবা। কে ভেবেছিল এদেশের তরুণরা যারা ব্যান্ড গানে উন্মাতাল হয় তাদেরই বড় একটি অংশ লোকসঙ্গীতের সুধাপানে আগ্রহী হবে! তবে আয়োজনে কিছুটা সমস্যাও লক্ষণীয়। অনলাইনে বারবার চেষ্টা করেও হাজার হাজার সঙ্গীতপ্রেমী রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। ফলে তাদের আর মাঠে গিয়ে গান শোনা হয়নি। অবশ্য আয়োজকরা একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করায় দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন অনেকেই। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের লোকসঙ্গীত ও শিল্পী। এই সঙ্গীত ছড়িয়ে দেয়ার বা শোনার কোন একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। এই উৎসব সেই কাজটি করার প্রয়াসী। একই মঞ্চে দেশের বাইরের লোকসঙ্গীত শিল্পীরাও গান শোনান। তাই বিশ্ব জানছে বাংলার লোকসঙ্গীত কত সমৃদ্ধ। এবার দশ দেশের ১৪০ জন লোকগানের শিল্পী অংশ নেন। আমাদের প্রত্যাশা সর্বাঙ্গীণ সুন্দরভাবে প্রতিবছরই উদযাপিত হোক এই উৎসব। সর্বসাম্প্রতিক আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান এবং তারুণ্যের পছন্দের ব্যান্ড গান নিয়েও এ ধরনের আন্তর্জাতিক উৎসব হতে পারে। এই মহানগরীর লাখ লাখ তরুণের সুস্থ বিনোদনের বড়ই অভাব। এ ধরনের উৎসব সেইসব তরুণকে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। তারা নিজ সংস্কৃতির সমান্তরালে ভিন দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত এবং সেসব নিয়ে মাতোয়ারা হওয়ার সুযোগ পায়। উৎসবে এই আনন্দসন্ধানী ও প্রাণময়তার প্রকাশটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই চাই বিচিত্র গানের বর্ণাঢ্য আরও উৎসব।
×