ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে ইরিগেশন প্রজেক্ট কৃষকের গলার কাঁটা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

বরিশালে ইরিগেশন প্রজেক্ট কৃষকের গলার কাঁটা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ একই জমিতে একাধিকবার ধান আর মৎস্য চাষের সম্ভাবনা নিয়ে বরিশালের বিলাঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্যবদলের জন্য স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, নেদারল্যান্ডস ও রাজস্ব খাতের ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গ্রহণ করা সাতলা-বাগধা সেচ প্রকল্প এখন কৃষকের গলার কাঁটা। সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও নামকাওয়াস্তে তা বাস্তবায়নের কারণে কৃষকের ভাগ্যবদল না হলেও অপচয় আর লুটপাট হয়েছে সরকারের কয়েক কোটি টাকা। জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল তথা বৃহত্তর ফরিদপুরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বানারীপাড়া ও গোপালগঞ্জের বিলাঞ্চলের কৃষক ও মৎস্যজীবীদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য তৎকালীন বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সেচ ও কৃষিমন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৩-৭৪ সালে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ‘বরিশাল ইরিগেশন এ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল একই জমির বহুমুখী ব্যবহার। যেমন, একই জমিতে দুবার ধান চাষ ও পরবর্তীতে মাছ চাষ করে এলাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, রাজস্ব খাত ও নেদারল্যান্ডসের আর্থিক সহায়তায় ৪৩ কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় বরাদ্দ ধরে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন অর্ধকোটিরও বেশি কৃষক ও মৎস্যজীবী। ওই সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত আগৈলঝাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আইউব আলী মিয়া জানান, প্রথমদিকে প্রকল্পের নক্সা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত শহীদ হন। এর ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ওই প্রকল্পের নামকরণ হয় ‘বরিশাল ইরিগেশন প্রজেক্ট’ (বিআইপি)। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় থেকে অদৃশ্য কালো থাবায় বিলীন হয়ে যায় পূর্বের মূল নক্সা, যার হদিস আজও মেলেনি।তিনি আরও জানান, দ্বিতীয়বারের গ্রহণ করা প্রকল্প বিআইপিও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিআইপি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে খাদ্যশস্যে বিলাঞ্চলে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। কিন্তু রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ও পূর্ববর্তী সরকারের ওপর নেতিবাচক মনোভাব সর্বোপরি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে দ্বিতীয়বার গ্রহণ করা বিআইপি প্রকল্প জনগণের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এ প্রকল্পে পাউবো প্রকৌশলীদের অসদুদ্দেশ্য ও অদূরদর্শিতার কারণে পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত সøুইসগেট, ইনলেট-আউটলেটগুলো নির্মাণে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কৃষক ও মৎস্যজীবীসহ বন্যার আপদকালীন সময়ে নদীতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ জনগণের কোন উপকারেই আসেনি সূত্রমতে, জনস্বার্থে মূল প্রকল্পটি তিনটি পোল্ডারে ভাগ করা হয়। যে তিনটি পোল্ডারে ভাগ করে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল সেগুলো ছিল গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, কালকিনি উপজেলার ৭৩ বর্গকিলোমিটার নিয়ে ১নং পোল্ডার। এর মধ্যে পয়সারহাট-রামশীল-চৌদ্দমেধা প্রকল্পের অবস্থান। ২নং পোল্ডারে আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার সঙ্গে বানারীপাড়ার একাংশ নিয়ে ২৯ বর্গকিলোমিটার। ৩নং পোল্ডারে যুক্ত করা হয়েছিল উজিরপুর উপজেলার সঙ্গে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৪২ বর্গ কিলোমিটার। সর্বমোট তিনটি পোল্ডারে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের জন্য ৭২ বর্গকিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা হয়।
×