ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার পেলেন জ্যোতিপ্রকাশ ও মোজাফ্ফর

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার পেলেন জ্যোতিপ্রকাশ ও মোজাফ্ফর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ সোমবার জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। জন্মদিনের একদিন আগে রবিবার প্রদান করা হলো তাঁর নামাঙ্কিত সাহিত্য পুরস্কার। দুই প্রজন্মের দুই গল্পকারের হাতে তুলে দেয়া হলো এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারটি পেয়েছেন প্রবীণ লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং নবীন কথাসাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন মোজাফ্্ফর হোসেন। রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। পুরস্কার কমিটির বিচারকম-লীর প্রধান এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। পুরস্কারের স্মারক, সনদপত্র ও উত্তরীয়ের পাশাপাশি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে পাঁচ লাখ এবং মোজাফ্্ফর হোসেনকে প্রদান করা হয় এক লাখ টাকার সম্মানী। অনুষ্ঠানের জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে নিবেদিত শংসাবচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম এবং মোজাফ্্ফর হোসেনের শংসাবচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তিনি গেয়ে শোনান হুমায়ূন আহমেদের লেখা দুটি গান ‘কখনো রোদেলা দুপুরে/তার কথা মনে পড়ে’ ও ‘যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো’। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত বলেন, হুমায়ূন আহমেদের নামে সাহিত্য পুরস্কারে আমাকে মনোনীত করায় একইসঙ্গে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। বাংলা সাহিত্যের ভুবনে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করা এক লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তাই তার নামাঙ্কিত এ পুরস্কারপ্রাপ্তি আমার লেখকসত্তাকে আরও বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে। মোজাফ্্ফর হোসেন বলেন, লেখালেখি জীবনের শুরুতে কখনও ভাবিনি লেখক হবো। আর আজ এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আমার লেখালেখির সেই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিল। লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ চরিত্র ও গল্পকে এমনভাবে নির্মাণ করে গেছেন, যা আমাদের নবীনদের শিক্ষণীয়। আনিসুজ্জামান বলেন, জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে আমি সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলাম। তার লেখা পড়ে মনে হয়েছে, তার কাছ থেকে আমারও অনেক কিছু শেখার আছে। মোজাফ্্ফর তরুণ লেখক। তার লেখনী প্রতিভা রয়েছে, সামনে আরও ভাল করবে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তার ভিন্নধর্মী লেখনীর কারণে পাঠকদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বলা হয়ে থাকে যে জনপ্রিয়তা ও সাহিত্যের গভীরতা নাকি একইসঙ্গে আসে না। এক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ ব্যতিক্রম। তার সাহিত্যের গভীরতা যেমন রয়েছে, তেমনি পাঠকসমাজের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন আমার বন্ধু ও ছোট ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে অনেক আবেগঘন ও অন্তরঙ্গ সময় অতিবাহিত করেছিলাম। হুমায়ূন আহমেদ যদি না থাকতেন, তবে হয়ত আমি আজকের আসাদুজ্জামান নূর হতে পারতাম না। মেহের আফরোজ শাওন বলেন, একজন সাহিত্যিকের জীবন তখনই সার্থক হয় যখন তার নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ বেঁচে থাকলে এই পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি তাঁকে অনেক আনন্দিত করত। প্রত্যাশা থাকবে যারা পুরস্কারটি পেয়েছেন তারা সাহিত্যক্ষেত্রে এমন অবদান রেখে যাবেন, যাতে সব সাহিত্যিকের কাক্সিক্ষত পুরস্কারে পরিণত হয় এটি। ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। ওই বছর প্রবীণ বিভাগে শওকত আলী এবং নবীন বিভাগের সাদিয়া মাহ্্জাবীন ইমাম এবং ২০১৬ সালে প্রবীণ বিভাগে হাসান আজিজুল হক ও নবীন বিভাগে স্বকৃত নোমান। বুধবার চারুকলার বকুলতলায় নবান্নোৎসব ॥ আগামী বুধবার পহেলা অগ্রহায়ণ। লোকজ বাংলার সংস্কৃতিতে পাকা ধান ঘরে তোলার উৎসব নবান্ন। শহর ঢাকায় উদযাপিত হবে গ্রাম বাংলার সেই উৎসব। সেই সুবাদে এদিন রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নবান্নোৎসব ১৪২৪। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ আয়োজিত নবান্নোৎসব উদযাপিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় ও ধানম-ি রবীন্দ্র সরোবর মুক্তমঞ্চে। সকাল ৭টা ১ মিনিট থেকে সকালের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়ে প্রথম পর্ব সকাল ৯টায় নবান্ন শোভাযাত্রার মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টায় পর্যন্ত উৎসবটি একযোগে চলবে ধানম-ি রবীন্দ্র সরোবর মুক্তমঞ্চ ও চারুকলার বকুলতলায়। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্বোধন করবেন একুশে পদকজয়ী বরেণ্য সাংবাদিক ও দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান। দিনব্যাপী নবান্নোৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে ল্যাবএইড ফাউন্ডেশন। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরে উৎসবের বিস্তারিত তথ্য। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পর্ষদের আহ্বায়ক শাহরিয়ার সালাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পর্ষদের চেয়ারপার্সন লায়লা হাসান, ল্যাবএইডের কর্পোরেট কমিউনিকেন্স প্রধান সাইফুর রহমান লেনিন, আয়োজক পর্ষদের কো-চেয়ারপার্সন কাজী মদিনা, বুলবুল মহলানবীশ, বাবুল বিশ^াস, মানজার চৌধুরী সুইট, সদস্য আবুল ফারাহ পলাশ, নাঈম হাসান সুজাসহ আরও অনেকে। ু উৎসবে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, মানিকগঞ্জের চানমিয়ার দলের লাঠিখেলা, নড়াইলের নিখিল চন্দ্রের দলের পটগান, নেত্রকোনার দিলু বয়াতীর দলের মহুয়ার পালা, খুলনা ধামাইল, নবান্ন শোভাযাত্রা, আদিবাসী পরিবেশনাসহ বিভিন্ন পরিবেশনা থাকবে। থাকবে ঢাক-ঢোলের বাদন আর মুড়ি-মুড়কি-বাতাসা ও পিঠার আয়োজন। উৎসবের প্রাক্কালে সাম্প্রতিক দেশের উত্তরাঞ্চলে সংঘটিত ভয়াবহ বণ্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফসলের, জানমালের ক্ষতি করে যায়, তারপরও অভাব অনটন, মঙ্গা, খরা পিছনে ফেলে এই অগ্রহায়ণে কৃষক আবার ঘুরে দাঁড়ায়, আবার স্বপ্ন দেখে, আবার নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠে। এটাই বাঙালীর চিরাচরিত প্রথা। সকলের জন্য উন্মুক্ত নবান্নোৎসব ১৪২৪ আয়োজনে সকলকে সব হিংসা বিদ্বেষ খুলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
×