ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

‘রাজাকাররা আমার চাচাসহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে’

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

‘রাজাকাররা আমার চাচাসহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামপুরের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী মোঃ খুরশীদ আলম জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার আমীর হোসেনসহ অন্যান্য রাজাকার আমার চাচা জুলফিকারসহ নয় জনকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার পলাতক চারজনসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানির জন্য ৩০ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে যশোরের মনিরামপুরের আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ২৭ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। নোয়াখালীর সুধারামপুরের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী মোঃ খুরশীদ আলম জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ খুরশীদ আলম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- রামহরিতালূক, থানা- সুধারামপুর, জেলা- নোয়াখালী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২৭/২৮ বছর। তখন আমি কৃষি কাজ করতাম। এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। বর্তমানে আমি অবসর জীবন যাপন করছি। ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রোজ সোমবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে চাষাবাদ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেই। তখন আমাদের বাড়ির উঠানে মোঃ ইউসুফ (বর্তমানে মৃত) আরও কয়েক রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিদের দেখি। তারা আমাকে বেঁধে ফেলে। কয়েক রাজাকার আমার জেঠাতো ভাই আক্কাস, চাচা জুলফিকার, জেঠা বদু মিয়াকে তাদের ঘর থেকে বের করে উঠানে নিয়ে আসে। তারা আমাদের চারজনকে আটক করে বোর্ড অফিসের দিকে রওনা দেয়। পথে দেখতে পাই যে, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমিনুল্লাহ চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে পাঁচজনকে বেঁধে আটক করে নিয়ে আসছে। তাদের ও আমাদের এক সঙ্গে আটক করে রামহরিতালূক বোর্ড অফিসের (ইউনিয়ন পরিষদ অফিস) উত্তরে অবস্থিত প্রাইমারী স্কুলের দক্ষিণে মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই রামহরিতালূক, উত্তর চাকলা ও দেবীপুর গ্রামের আনুমানিক ৩০০ লোককে আটক করে ঐ মাঠে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রাজাকাররা ও আর্মিরা আমাদের কাছে তখন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের অস্ত্রের সন্ধান জানতে চায়। এবং আমাদের মারপিট শুরু করে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, ঐ দিন সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার সময় রাজাকার আমির আলী, রাজাকার মনসুরসহ কয়েক রাজাকার আমাদের কাছে আসে। আটককৃতদের মধ্যে কারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের বেছে বেছে আলাদা করতে বলে। এভাবে আটককৃতদের ভিতর থেকে নয় জনকে আলাদা করে স্কুলের দক্ষিণ দিকে নিয়ে যায়। এই নয় জনের মধ্যে ছিল নূর উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আনার উল্লাহ, সিরাজুল হক, শফিক মাস্টার, রমজান আলী, জুলফিকার আলী, হেঞ্জু মিয়া। ঐ সময় আমাদের চেয়ারম্যান আমিনুউল্লা পাকিস্তানী আর্মিদের ঐ আটককৃত নয় জনকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। পাকিস্তানী আর্মিরা রাজি হলেও রাজাকার আমীর আলী, মনসুর ও ইউসুফ (বর্তমানে মৃত) ঐ নয় জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারদের নির্দেশে প্রাণের ভয়ে আমরা পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে থাকি। এরপর পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা দক্ষিণ দিকে চলে যায়। এই নয়জনের লাশ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। পরে শুনি যে, ঐ দিন স্কুলের মাঠ থেকে পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা চলে যাওয়ার পথে অনেক বাড়ি ও মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করেছিল।
×