ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর দেখতে আজও আসেন অনেকেই

পর্যটক আকর্ষণে নতুন করে সাজানো হয়েছে মহাস্থানগড়

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

পর্যটক আকর্ষণে নতুন করে সাজানো হয়েছে মহাস্থানগড়

সমুদ্র হক সম্প্রীতির মেলবন্ধন গড়তে নতুন করে সাজানো হয়েছে মহাস্থানগড়। শীতের প্রাক্কালে দেশী-বিদেশী পর্যটক আগমনের মুখর হয়ে উঠেছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগর খ্যাত এই মহাস্থানগড়। গত দু’বছরে পর্যটক আকর্ষণে গড়ের গোবিন্দভিটার কাছে অনেকটা এলাকাজুড়ে নক্সা করা পথঘাট ও নানা ধরনের অবকাঠামো স্থাপনা বানিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা পরিবার পরিজন ও স্বজনসহ মহাস্থানগড় বেড়াতে গেছেন বর্তমানের অবস্থা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। নতুন যারা আসছেন তাদের মন ভরে যাবে। থাকতে চাইবেন অনেকটা সময়। আর প্রণয়ের মানব-মানবী এলে হৃদয়ের কত কথা বলার জন্য যে ব্যাকুল হয়ে উঠবেন। বারবার যেতে ইচ্ছে করবে। হৃদয়ে গান বাজবে ‘কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে, আরও কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে এই মধুক্ষণ মধুময় হয়ে না হয় উঠিত ভরে...।’ বগুড়া নগরী থেকে জাতীয় মহাসড়ক ধরে উত্তর দিকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর প্রথমে দৃষ্টিতে আসবে পাহাড়ের মতো উঁচু ভূমি। তার পাশ দিয়ে সরু সড়ক ধরে আরও কিছুটা উত্তর পশ্চিমে যাওয়ার পথেই দৃষ্টিতে আসবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিশাল রাজপ্রাসাদের প্রাচীর। এরপরই প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের জাদুঘর ও রেস্ট হাউস। তার কাছেই গোবিন্দভিটা। এই স্থাপনাগুলোর চার ধারে পরিকল্পনা করে সাজানো হয়েছে। যা দেখে মুগ্ধ হতে হবে। সবুজ গাছগাছালির মধ্যে পায়ে চলার পথও নক্সা ইটে গাঁথানো। পথের মধ্যে কৃত্রিম লেকে বানিয়ে তার ওপর শক্তিশালী কাঠের ছোট সেতু বানানো হয়েছে। সবুজ ঘাসের ওপর বসানো হয়েছে ডিজাইন করা ছাতা। তার নিচে বসার ব্যবস্থা। এ স্থাপনা এমনভাবে নির্মিত যেখানে বসে চারধারের অসমতল ভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে ইতিহাসের ধ্বংস হওয়া স্থাপনা চোখে পড়ে। গোবিন্দভিটায় প্রাচীন ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে চোখের সামনে ভেসে আসবে ইতিহাসের খ-িত পাতা। মহাস্থান জাদুঘরের দেয়ালে বিশেষভাবে দৃষ্টিনন্দন করে সবুজবৃক্ষে ছেয়ে দেয়া হয়েছে। অবকাশ কেন্দ্রের সঙ্গে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক রেস্তরাঁ। এর পাশেই সিরামিক ইটে নির্মিত হয়েছে কনফারেন্স ঘর। এই এলাকায় পৌঁছার পরই মনে হবে দেশের মধ্যেই বেড়ানোর এত সুন্দর জায়গা আছে! প্রাচীন আমলে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং মহাস্থানগড় আবিষ্কারের পর যুগযুগ ধরে এই স্থানটি বেড়ানোর ও বিনোদনের পীঠস্থানে পরিণত হয়ে আছে। মহাস্থানগড়ের অল্প দূরে উত্তর-পশ্চিমে আরেক দর্শনীয় স্থান ভাসু বিহার। বলা হয় বৌদ্ধরা এই এলাকায় উচ্চতর বিদ্যা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। মহাস্থান গড়ের কিছুটা দক্ষিণ-পূর্বে দাঁড়িয়ে আছে বৌদ্ধদের আরেক স্থাপনা গোকুলের মেড়। এই জায়গাটি পৌরণিক কাহিনী বেহুলা লখিন্দরের বাসর ঘর নামে বহুকাল ধরে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। আজও এই স্থানে গেলে বলতে হয় বেহুলার বাসর ঘর। মহাস্থানগড়ের চারদিকে রয়েছে বেড়ানোর অনেক স্থান। মহাস্থানগড়কে পর্যটক আকর্ষণ করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূলে উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ কাজ করা হয়। কথা আছে অবকাশ কেন্দ্র বাংলোবাড়ি নির্মাণসহ আরও অনেক অবকাঠামো নির্মিত হবে। মহাস্থানগড় দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় বেড়ে গেছে পর্যটক আগমনের সংখ্যা। তারপরও ইতিহাস ও পর্যটন খ্যাত এ এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কোন কার্যক্রম নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশের কোন ফাঁড়ি নেই। উল্লেখ্য, বগুড়ায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশের সকল বিভাগের কার্যক্রম রয়েছে। পর্যটকরা কোন অসুবিধার মধ্যে পড়লে মহাস্থানগড় থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে বগুড়া সদর পুলিশ অথবা ১৫ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতা নিতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পর্যটকরা পুলিশের সহযোগিতা পায় না। যদিও কখনও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় তা ঘটনার অনেক পরে।
×