ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন সূচকেই অগ্রগতি ও অর্জন ভাল ॥ আগামী বছরের মাঝামাঝি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে আনুষ্ঠানিক আবেদন

’২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

’২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ

এম শাহজাহান ॥ ‘রূপকল্প-২১’ সামনে রেখে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে জোরেশোরে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত সভা শেষে চলতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। লক্ষ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বা ৫০ বছর পূর্তির সময় ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ তিনটি সূচক যথাক্রমে মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে থাকে। এই তিনটি সূচকের অগ্রগতি ও অর্জন বেশ ভাল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘের কাছে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করবে বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছে, সরকারের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে রূপকল্প-২০২১ সালেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। সেইলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সে বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে অর্থনীতির ঝুঁকির সূচকে বাংলাদেশ নির্ধারিত মাপকাঠি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় এখন ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার। আয়-বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া মানবসম্পদের অবস্থানও ভাল অবস্থায় রয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে। পুষ্টিহীনতা দূর হয়েছে, বেড়েছে শিক্ষার হার। নানা ধরনের প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বাড়ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। এ কারণে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের মধ্যে তিনটি সূচকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই স্বীকৃতির ফলে দেশের ঋণমান গ্রহণযোগ্যতা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশীদের আস্থা বাড়বে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন। ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা যে, এগিয়ে যাচ্ছি এটা বিশ্ব ব্যাংকের সেই স্বীকৃতি। দেশ ও জাতির জন্য এটা অনেক গর্বের বিষয়। এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ প্রণয়ন করে। সেখানে রয়েছে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষার কথা। বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের লক্ষ্য মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলার করা, সে সময় প্রবৃদ্ধির হার হবে ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৬০২ ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই সঙ্গে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এই ফসল অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৪৬৫ ডলার। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে এই অবস্থান ৩৮তম। সিটি গ্রুপের বিবেচনায়ও ২০১০ হতে ২০৫০ কালপর্বে বিশ্বের যে ১১টি দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে জেপি মরগানের ফ্রন্টিয়ার ফাইভ তালিকাতেও স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মানের রেটিং এজেন্সি কর্তৃক সার্বভৌম ঋণমান মূল্যায়নে বাংলাদেশ সন্তোষজনক ঋণমান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশী মুদ্রা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে যা আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠানকে টাকায় আন্তর্জাতিক বন্ড ইস্যুর বিষয়ে আগ্রহী করে তুলছে। জানা গেছে, মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়া মুডিস রেটিংয়ে অবস্থান ভাল থাকায় বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগ, কম সুদে ঋণ, রফতানি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশীদের আস্থা বাড়বে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ড. খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দরিদ্র দেশের তালিকা থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। এটা জাতি হিসেবে গর্বের। এর ফলে সম্মান বেড়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে পারলে সম্মান আরও বাড়বে। তবে এজন্য আরও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়া। এক্ষেত্রে মাথাপিছু আয় বাড়ানো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের মতো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেবে। এই স্বীকৃতি অর্জনে যে তিনটি সূচক বিবেচনায় নেয়া হয় তা অর্জনে যথেষ্ট এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই বিবেচনায় আগামী ২০১৮ সালে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে রূপকল্প ২০২১ সালেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। রূপকল্প ’২১ সামনে রেখে ২০০৯ সালে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের যাত্রা শুরু হয়। টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে রূপকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর ওই সময়ে বিশ্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাবে। শুধু তাই নয় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বাংলাদেশ।
×