ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিশপ্ত যৌতুক

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

অভিশপ্ত যৌতুক

দেশে যৌতুকবিরোধী আইন থাকা সত্ত্বেও এর অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারছে না সমাজ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার দড়িকান্দি গ্রামের গৃহবধূ শারমিন আক্তার এর সর্বশেষ শিকার। শারমিনের বাবা ভৈরবের সামান্য একজন বাদাম বিক্রেতা। ৪ মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে কায়ক্লেশে চলে তার সংসার। তবু বিয়ের সময় তিন ভরি সোনার গহনা ও ৫০ হাজার টাকা নগদ যৌতুক হিসেবে দিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন শারমিনকে। তাদের আড়াই বছরের একটি ছেলেও আছে। এর পরও দফায় দফায় চলে যৌতুকের দাবি ও অত্যাচার-নির্যাতন। পাঁচ মাস আগে শারমিনের বাবা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আরও ৫০ হাজার টাকা দেন। দুই মাস আগে আবারও ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। দিতে না পাড়ায় এক পর্যায়ে সন্তানসহ বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় শারমিনকে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, শারমিন সন্তানসহ ভরণপোষণের টাকা চাইতে গেলে শ্বশুরবাড়িতে আটকে রেখে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয় তাকে। দুটো পা ও বাঁ হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়। কোদালের গোড়া দিয়ে থেঁতলে দেয়া হয় সারা শরীর। স্থানীয় লোকজন গৃহবধূর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাঠালেও তাকে চিকিৎসা করানো হয়নি। পরে রূপগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে শারমিনকে। এলাকাবাসী নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০১১ অনুযায়ী দেশে শতকরা ৮৭ জন বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর হাতে নিগৃহীত হন। এর বাইরেও রয়েছে বাল্যবিবাহ, অসম বিবাহ, যৌতুকের কারণে হামলা-মামলা-হত্যা-নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারী-পুরুষ বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা, রাষ্ট্রীয়, সামজিক ও পারিবারিক বৈষম্য, অসম আচরণ ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম ও মাত্রার নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশে নারী নিগ্রহের আদিঅন্ত যেন খুঁজে পাওয়া যাবে না! এখানে নারীর প্রতি অবিচার, অনাচার, শোষণ ও বঞ্চনা এখনো ব্যাপকভাবে বিরাজমান। এর মূল কারণ অশিক্ষা, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার ও কূপম-ূকতা। সত্য বটে, এতসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নারী উন্নয়নের পথে অনেকটা এগিয়েছে, অন্তত রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, স্পীকারও নারী, সর্বোচ্চ আদালত এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারী ক্ষমতাসীন। শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ কয়েকটি সামাজিক সূচকেও নারীর অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। এর পরও দেখা যায় নারী নির্যাতনের গলদ রয়ে গেছে। সমাজে এখনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছে পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা, নারীর প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাব। যৌতুক-বাল্যবিবাহসহ যাবতীয় প্রথা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সর্বস্তরে গণসচেতনতা গড়ে তুলে কাজ করতে হবে সবাইকে একযোগে নারীর কল্যাণের নিমিত্তে। এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগও অত্যাবশ্যক। গৃহবধূ শারমিনের সুচিকিৎসাসহ তার প্রতি নির্যাতনের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এটাই প্রত্যাশিত।
×