ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজি অর্জনে দলিত জনগোষ্ঠীকে তুলে ধরার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

এসডিজি অর্জনে দলিত জনগোষ্ঠীকে তুলে ধরার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলিত সম্প্রদায় দেশের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর একাংশ। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন নীতিতে দেশের বহু ক্ষেত্রে সন্তোষজনক সাফল্য অর্জিত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দলিত ও অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এসবের অংশীদার হতে পারেনি। সরকার পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে কিভাবে টেনে তোলা যায় সেজন্য যেসব কর্মসূচী ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজে তুলে ধরতেই সরকার কোটা পদ্ধতি চালু করেছে। তবে এখনও এসব জনগোষ্ঠী বঞ্চিত। পিছিয়েপড়া এসব জনগোষ্ঠীকে তুলে ধরতে না পারলে এসডিজির ১৭ নম্বর অভীষ্টে আমরা পৌঁছতে পারব না। এজন্য দলিত জনগোষ্ঠীকে চিন্থিত করে চরম দরিদ্রমুখী কর্মসূচী গ্রহণের আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের আলোকে বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর অবস্থান’ শীর্ষক নাগরিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের আলোকে দলিত জনগোষ্ঠীর অবস্থন শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে দলিতদের সংখ্যা ৬০-৭০ লাখের মতো। অন্য এক হিসেব মতে, দেশে পঞ্চাশ লাখের মতো দলিত লোকজনের বাস। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ মতে, দেশে দলিত জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৮৯। হরিজন ১২ লাখ ৮৫ হাজার, প্রায় ৯৪ ধরনের দলিত রয়েছে এদেশে। গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে সমাজের সবচেয়ে কষ্টসাধ্য ও কঠোর কাজ এই দলিত জনগোষ্ঠীর লোকজনের ওপর ন্যস্ত। তবুও তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তারা তাদের কাজের যোগ্য সম্মানটুকুও পায় না। দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের যে রূপ, তার মর্মান্তিক চিত্র ধরা পড়েছে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদনে। যেমন নাগরিক উদ্যোগ প্রকাশিত ‘দলিত নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন : উচ্চশিক্ষা, ভূমি অধিকার ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ৫০ দশমিক ৬ শতাংশ দলিত নারী বাস করছে খাস জমিতে এবং ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ দলিত ভূমিহীন। এছাড়া বাংলাদেশে দলিতদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্রসমূহ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার নিরীখে পরখ করলে দেখা যাবে যে, সর্বক্ষেত্রেই দলিতদের অবস্থান নেতিবাচক। বিশেষত, লক্ষ্য নং- ১. দারিদ্র্য বিমোচন, ৩. সুস্বাস্থ্য ৪. মানসম্মত শিক্ষা, ৮. কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি, ১০. বৈষম্য হ্রাস, ১২.সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার, ১৬. শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও ১৭. টেকসই উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্বের সঙ্গে দলিতদের উন্নয়ন সম্পর্কের একেবারেই অবিচ্ছেদ্য। বাংলাদেশে বসবাসরত দলিতরা যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রাধিকারভিত্তিক উপকারভোগী হওয়ার দাবিদার, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ১৭ লক্ষ্যের সবই দলিতদের কথা বিবেচনায় রাখার মতো। বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধানে সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ কঠোরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং সুবিধাবঞ্চিত ও অনগ্রসরদের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ২৬-৪৭ ধারাসমূহে মানুষের নানাবিধ অধিকার প্রাপ্তির ব্যাপারে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। অনুচ্ছেদগুলোয় মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির সার্বিক অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোন প্রকার ধর্মীয়, বর্ণগত, গোষ্ঠীভিত্তিক, লিঙ্গভিত্তিক, জন্মভিত্তিক ইত্যাকার বৈষম্য প্রদর্শন করার কোন সুযোগ নেই। ২০১৩ সালে প্রণীত ‘দলিত, হরিজন ও বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা’র পটভূমিতে স্বীকার করা হয়েছে: দলিত, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তারা বৈষম্যের শিকার অথচ সমাজের কতিপয় অপরিহার্য পেশার সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত। সকল নাগরিক সুবিধা ভোগের অধিকার সমভাবে প্রাপ্য হলেও তারা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার বলে প্রতীয়মান। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতা বলেন, কাগজ-কলমে হিসেব কষে দলিত জনগোষ্ঠীর পরিবর্তন পরিমাপ করলে তা যথাযথ ও ফলপ্রদ হয়ে উঠবে, এমনটি আশা না করাই যুক্তিযুক্ত। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে দেশে দলিত ও অপরাপর অধিকারবঞ্চিত জনগোষ্ঠী নিয়ে যে সকল সুশীল সমাজ বা সেবা সংস্থা আত্মনিয়োজিত, তাদেরও আত্মসমীক্ষা আবশ্যক বলে মনে হয়। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন নীতিতে দেশের বহু ক্ষেত্রে সন্তোষজনক সাফল্য অর্জিত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দলিত ও অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এসবের অংশীদার হতে পারেনি। ‘দলিত জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা ও বৈষম্যের ক্ষেত্র’ আলোচনায় আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পরিচালিত সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনাধীন দলিত, হরিজন ও বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে যদিও এখানে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের বিষয়টি দুর্বল বলে জানা যায়।
×