ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মঘাতী জঙ্গী সাইফুলকে অর্থায়ন করেছিল নিলয় পরিবার ॥ গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ১২ নভেম্বর ২০১৭

আত্মঘাতী জঙ্গী সাইফুলকে অর্থায়ন করেছিল নিলয় পরিবার ॥ গ্রেফতার ৩

গাফফার খান চৌধুরী ॥ অবশেষে চলতি বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত এক জঙ্গী পরিবারের তিন সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন নারী ও একজন পুরুষ। গ্রেফতারকৃতরা মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আকরাম হোসেন খান নিলয়ের পিতা-মাতা ও বোন। গ্রেফতারকৃতরা সাইফুল ইসলাম নামের এক আত্মঘাতী জঙ্গীকে হামলা চালানোর জন্য পান্থপথের ওলিও ইন্টারন্যাশনাল নামের হোটেলে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট ও বোমাসহ পাঠিয়ে থাকা খাওয়াসহ যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু হামলা চালানোর আগেই পুলিশের অভিযানের মুখে বাধ্য হয়ে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয় জঙ্গী সাইফুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃত তিন জঙ্গী ও নিহত জঙ্গী সাইফুল ইসলাম নব্য জেএমবির একই সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্য বলে পুলিশের ধারণা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ নবেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখা ও বগুড়া জেলা পুলিশ যৌথভাবে রাজধানীর গুলশানের ১-এর ১২৭ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির ডি-৪ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেফতার হয় হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আকরাম হোসেন খান নিলয়ের পিতা আবু তুবার খান (৫৬), তার স্ত্রী সাদিয়া হোসনা লাকী (৪৬) ও মেয়ে তাজরীন খানম শুভ (২৯)। তুরাব খানের পিতার নাম মিছির আলী খান। মায়ের নাম আমেনা খাতুন। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানাধীন ঢাকী ইউনিয়নের চারিগ্রামে। সূত্রটি জানায়, গত ১৫ আগস্ট পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয় জঙ্গী সাইফুল ইসলাম। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আকরাম হোসেন খান নিলয় নামে নব্য জেএমবির এক শীর্ষ নেতার নাম বেরিয়ে আসে। নিলয়ের পুরো পরিবার জঙ্গী। আগস্টে হামলা চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিলয়ের পিতা আবু তুরাব খান, মা সাদিয়া হোসনা লাকী ও বোন তাজরীন খানম শুভ আর্থিকভাবে সহায়তা করে। তাদের দেয়া টাকা দিয়েই সাইফুলকে হামলা চালানোর জন্য টাকাপয়সা, বোমা, সুইসাইডাল ভেস্ট ও শক্তিশালী বিস্ফোরকসহ ওলিও হোটেলে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা নিলয়ের মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। যোগদানের পর থেকেই তারা জঙ্গী সংগঠনটিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে আসছিল। পাশাপাশি তারা অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত। সেই অর্থ দলের ফান্ডে জমা করত। সেই অর্থ সংগঠনের সদস্যদের এবং বিভিন্ন অপারেশন চালানোর জন্য ব্যয় করা হতো। গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। নিলয় সম্পর্কে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র বলছে, গত ১৫ আগস্ট রাত চারটার দিকে ধানম-ির ৩২ নম্বরের খুব কাছে পান্থপথের মূল সড়কে অবস্থিত ৫৭/১/সি নম্বর চারতলা ওলিও ইন্টারন্যাশনালে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। পুরো হোটেল ঘিরে ফেলার পর তাকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত সাইফুল আত্মসমর্পণ না করে শরীরের বেঁধে রাখা শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সকাল দশটার দিকে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর হোটেলের দেয়াল, দরজা, জানালা ও গ্রিল উড়ে কয়েকশ’ গজ সামনে রাস্তায় পড়ে যায়। ঘটনার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, সাইফুল ইসলামের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী হামলা করে শত শত মানুষকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। সাইফুল ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে সে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী (ফিদায়ী) স্কোয়াডের সদস্য হয়। সাইফুল বিস্ফোরক ভর্তি একটি ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে হোটেলটির ৩০১ নম্বর কক্ষে ওঠেছিল। ধানম-ি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে ১৫ আগস্টের সমাবেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার। হোটেলের বারান্দা থেকে ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়ার মিছিলে হামলা পরিকল্পনাও ছিল তার। সে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে পরে সে শরীরে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল। পুলিশ জানায়, সাইফুলের পিতার নাম আবুল খায়ের মোল্লা। সাইফুলের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠি গ্রামে। সাইফুলের পিতা নোয়াকাঠির মাঠেরহাট মসজিদের ইমাম। তিনি সাহস ইউনিয়নের জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ। সাইফুল ইসলাম ডুমুরিয়া উপজেলার উলা মজিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছিল। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড় ছিল। বড় বোনের নাম সাবিহা খাতুন ইরানি আর ছোট বোন তামান্না খাতুন। তার মা আসমা খাতুন বাক প্রতিবন্ধী। খুলনার সরকারী বিএল কলেজে পড়াকালীন একটি মেসে থাকত সাইফুল। ওই সময়ই সে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। গত ৪ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে চাকরি খোঁজার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যায়।
×