ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, কুমিল্লায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে বাধা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১২ নভেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, কুমিল্লায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে বাধা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১১ নবেম্বর ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ কুমার ভট্টাচার্যের বক্তব্যের জের ধরে কুমিল্লায় বেতিয়ারা দিবসের কর্মসূচীতে বাধা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে ওই অনুষ্ঠান প- হয়ে যায়। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারায় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে বাকবিত-ার একপর্যায়ে ঐক্য ন্যাপ সভাপতি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় অনুষ্ঠানে আসা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শহীদদের স্বজনরা ফিরে যান। এ ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, ঐতিহাসিক বেতিয়ারা দিবস উপলক্ষে শনিবার জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধের পার্শ্বে বেতিয়ারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ কুমার ভট্টাচার্য। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘দেশটা ভাল চলছে না, সমাজটা ভাল চলছে না, মুক্তিযুদ্ধের অনেক আদর্শ এখন বেহাত হয়ে গেছে। এখন পাকিস্তানের পথে হাটাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৬ দফা থেকে ১১ দফা না হলে গণঅভ্যুত্থান হতো না। জাতীয়তাবাদ ও প্রগতিশীল আনন্দ সমান্তরাল না হলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। পঁচাত্তরের পর দেশটাকে রাজাকারের পথে, পাকিস্তানের পথে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে গেছেন। অসাম্প্রদায়িক প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ওসি, ইউএনও’র বক্তব্যের পর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এখন আছে কি-না আওয়ামী লীগের লোকজনই আমাদের প্রশ্ন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিধবার শাড়ি পড়ে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। এ ব্যর্থতার দায়ভার কার। মুজিবনগর সরকারের ভেতর মোস্তাক সরকার ঘাঁপটি মেরে বসেছিল। যার ফলশ্রতিতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এবং জাতীয় ৪ নেতা হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এখনও ষড়যন্ত্র চলছে।’ এসময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত কুমিল্লা জেলা পরিষদের ১৫ নং ওয়ার্ডের (চৌদ্দগ্রাম) সদস্য ফারুক আহমেদ (ভিপি ফারুক) মঞ্চ থেকে ওঠে এসে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন এবং বক্তব্যে বাধা দেন। এসময় বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের অনুসারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়ে ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ কুমার ভট্টাচার্য দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এসময় মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বললে এখানে আর অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন না। কোথাকার কমিউনিস্ট, কোথাকার কমরেড এসে বক্তৃতা করেন। আপনারা দেশের কোথাও ইলেকশন করলে ইউনিয়নের মেম্বার হতে পারবেন না। মুখে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির কথা বলেন, আবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও বলবেন। এটা আমরা মেনে নিতে পারব না।’ জানতে চাইলে ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি ছিল ন্যাপ-কমিউনিস্ট-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর। ফারুক অনুষ্ঠানের কোন বক্তাও না, অতিথিও না। সে এখানে এসে গায়ের জোরে যেটা করল, হুমকি দিল, আমার দিকে তেড়ে আসল- এটা অর্বাচীন মনে হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সামান্যতম ঐতিহ্য বহন করলে এটা সে করতে পারে না। জাতীয়তাবাদী এবং বাম প্রগতিশীলদের ঐক্যের ভিত্তিতে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে- সে বিষয়টি নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। নব্য আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য সম্ভবত এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ত্যাগী আওয়ামী লীগের কর্মী বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তার আচরণে প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বলে মনে হয়নি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, এরা আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও কটূক্তি করায় আমরা প্রতিবাদ করেছি।
×