ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ের মুখ দেখল রাজশাহী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ নভেম্বর ২০১৭

জয়ের মুখ দেখল রাজশাহী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রংপুর রাইডার্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসরে পয়েন্ট পেল রাজশাহী। জয়ের মুখ দেখল। টানা দুই ম্যাচ হারের পর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে খেলতে নেমে ২ পয়েন্ট পেল রাজশাহী। ড্যারেন সামির নেতৃত্বে সিলেটে দুই ম্যাচ হেরেছিল রাজশাহী। ঢাকা পর্বে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক ও রাজশাহী কিংসের আইকন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম রাজশাহীকে নেতৃত্ব দেন। মুশফিকের নেতৃত্বে প্রথম জয়ও পেয়ে যায় রাজশাহী। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ও রংপুর রাইডার্সের আইকন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর টানা দুই ম্যাচে হারের স্বাদ পেল। সেই সঙ্গে দেশের টেস্ট অধিনায়কের কাছে ওয়ানডে অধিনায়কেরও হার হয়েছে। সিলেট পর্বে রাজশাহীর অবস্থা খুবই কাহিল ছিল। রংপুরের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর সিলেট সিক্সার্সের কাছেও হেরেছিল। ঢাকা পর্ব শনিবার শুরু হয়েছে। শুরুর দিনে, প্রথম ম্যাচেই এবার বাজিমাত করেছে রাজশাহী। যে দলের বিপক্ষে সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল রাজশাহী। এবার উল্টো চিত্র দেখা গেল। সেই সঙ্গে রংপুরকে হারিয়ে যেন প্রতিশোধও নিয়ে নিল রাজশাহী। শুধু রাজশাহীরই পয়েন্ট ভা-ারে পয়েন্ট জমা হওয়ার বাকি ছিল। সিলেট থেকে শূন্য হাতেই ফিরেছিল রাজশাহী। ঢাকায় এসে দলটি জেগে উঠল। রাজশাহীর পয়েন্ট পাওয়ার মধ্য দিয়ে এবারের আসরে যে সাত দল খেলছে, সবার ভা-ারেই পয়েন্ট জমা হলো। সেই পয়েন্ট জমা করতে বেগ পেতেও হয়নি রাজশাহীর। টস জিতে আগে ব্যাট করে যখন ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৪ রান করে রংপুর তখনই রাজশাহী যেন জয়ের আশায় বুক বাধতে শুরু করে দেয়। রবি বোপারা (৫৪*) যদি হাল না ধরতেন তাহলে এই রানও স্কোরবোর্ডে জমা হতো না। এরপর লেন্ডল সিমন্স ও মুমিনুল হক যেভাবে ব্যাট করছিলেন, পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। তাতে মনে হচ্ছিল, ১০ উইকেটে না জিতে যায় রাজশাহী। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে সিমন্স ও মুমিনুল মিলে যে ১৬তম ওভারের সময়ই ১২২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন, তখনই জয় পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যায় রাজশাহীর। জিততে তখন যে মাত্র ১৩ রান লাগে। এমন সময়ে সিমন্স (৫৩) রান আউট হয়ে যান। এরপর আর ৫ রান যোগ হতে ওয়েলারও (৪) আউট হন। কিন্তু মুমিনুল ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। নির্ধারিত ওভারের জন্য মুমিনুল চলে না। এমন অপবাদ যে সেটে আছে মুমিনুলের গায়ে, তা দূর করে দেন। ৪৪ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৬৩ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল। ম্যাচ সেরাও হন। রনি তালুকদার ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। ২ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১৩৮ রান করে জিতে রাজশাহী। যে দলটি সিলেট পর্বে টানা দুই ম্যাচে ধরাশায়ী হয়েছে। তারাই কিনা ঢাকা পর্বের শুরুতেই ২০ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নিয়েছে। রংপুর ৩৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায়। এরপর ৯৪ রানে গিয়ে হারায় ৫ উইকেট। তখনই বোঝা হয়ে যায়, বড় স্কোর গড়তে পারবে না রংপুর। ভাগ্যিস, বোপারা ছিলেন। তিনি একাই দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে জিয়াউর রহমানও (১১*) ভাল সঙ্গ দেন। বোপারা ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। যেখানে ১৬ ওভারের সময় ৯৪ রান ছিল; সেখান থেকে দলকে ১৩৪ রানে নিয়ে যান বোপারা। ৫১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৫৩ রান করেন। কিন্তু এমন রান করেও নিরাপদ থাকতে পারে না রংপুর। শুরু থেকেই যে সিমন্স ও মুমিনুল মিলে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন। দলকে দ্রুত জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে থাকেন। সিমন্স ও মুমিনুল মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। দুজন মিলে দলকে বড় জুটি এনে দেন। সেই জুটিতেই জয়ের আশা নিশ্চিতভাবে তৈরি হয়ে যায়। জুটিটি অবশ্য বহু আগেই ভাঙ্গতে পারত। কিন্তু সিমন্স নতুন জীবন পেয়ে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। তাতে করে ম্যাচটি হারের কবলে পড়ে যায় রংপুর। সিমন্স ও মুমিনুল মিলে ওপেনিংয়েই ১২২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ৫০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সিমন্স ৫৩ রান করে আউট হওয়ার পর ওয়েলারও সাজঘরে ফেরেন। এরপর আর কোন উইকেট হারাতে হয়নি রাজশাহীকে। মুমিনুল ও রনি মিলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। রাজশাহী প্রথম জয় পাওয়াতে দলের ক্রিকেটাররা ভীষণ খুশি। তা হওয়ারই কথা। একটি জয়ই যে সব বদলে দিতে পারে। ক্রিকেটারদের ভেতর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যেতে পারে। মুমিনুলও তাই বললেন, একটি জয় খুব দরকার ছিল। জয় পেলে মনোবল বাড়ে। আর পরে ব্যাটিং করায় সুবিধা হয়েছে। রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও স্বীকার করে নিয়েছেন, টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেয়াটা ভুল হয়েছে। সঙ্গে টানা দুই হার নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছেন। হতাশ হওয়ারই কথা। হার যে কোন দলের, দলের ক্রিকেটারদের মনোবল নষ্ট করে দিতে পারে। রাজশাহীকে অবশ্য আর রংপুরকে নিয়ে ভাবতে হবে না। দলটির বিপক্ষে এবার লীগে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। একটিতে হেরেছে। শনিবার জিতেছে। তাতে পয়েন্টও পেয়েছে। পয়েন্ট তালিকায় যে কোন পয়েন্ট যুক্ত হচ্ছিল না। সেই খড়া দূর করেছে। স্কোর ॥ রংপুর রাইডার্স ইনিংস ১৩৪/৫; ২০ ওভার (চার্লস ২, লিথ ৪, মিঠুন ১৮, বোপারা ৫৪*, শাহরিয়ার ২৩, পেরেরা ৪, জিয়াউর ১১*; ফরহাদ ২/২৮)। রাজশাহী কিংস ১৩৮/২; ১৬.৪ ওভার (সিমন্স ৫৩, মুমিনুল ৬৩*, ওয়েলার ৪, রনি ১০*; পেরেরা ১/১২)। ফল ॥ রাজশাহী কিংস ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ মুমিনুল হক (রাজশাহী কিংস)।
×