ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিএনপির জনসভা ॥ ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি

সোহরাওয়ার্দীতে কী বার্তা দেবেন খালেদা?

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ নভেম্বর ২০১৭

সোহরাওয়ার্দীতে কী বার্তা দেবেন খালেদা?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ রবিবার বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা। ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এ জনসভায় প্রধান অতিথি থাকছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এদিকে দীর্ঘদিন পর জনসভা করার সুযোগ পেয়ে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। আর এ জনসভার মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি। ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীরাও এতে উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন পর ঢাকায় কোন জনসভায় বক্তব্য নিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া। এর আগে গত বছর ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ জনসভা হয়েছিল ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি। তার ১৫ দিন আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দীর্ঘদিন পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। বিএনপি নেতারা মনে করছেন এতে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি ঘটিয়ে জনসম্মুখে দলের জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা করা হবে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেই খালেদা জিয়ার ডাকে যে মানুষ সাড়া দেয় জনসভা সফল করে সেটাই প্রমাণ করতে চাইবে বিএনপি। এদিকে জনসভা সফল করতে গত ক’দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রাতদিন বৈঠক করেছে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বসে নেই ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে মহল্লায় মহল্লায় বৈঠক করা হয়েছে। কোন এলাকা থেকে কোন নেতা বেশি লোক নিয়ে জনসভায় আসবে সে প্রতিযোগিতার জন্যও কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এভাবে এ জনসভাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি হাইকমান্ড। জানা যায়, জনসভা সফল করতে রাজধানী ও আশপাশের জেলার প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিপুল লোক সমাগম করার। আর এর মাধ্যমেই মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলীয় নেতাদের যোগ্যতার পরীক্ষা নেয়া হবে। আর এ কারণেই জনসভাকে কেন্দ্র করে নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে কে কার চেয়ে বেশি লোক নিয়ে উপস্থিত হতে পারে। এদিকে ২৩ শর্তে শনিবার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার লিখিত অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নবেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে রবিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখবেন। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে এ জনসভায় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ৭ নবেম্বরই এই জনসভা করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ঢাকায় সিপিএ সম্মেলনের কারণে তাদের তখন জনসভা করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। ফখরুল বলেন, জনসভা করার ব্যাপারে শনিবার ডিএমপির একটি সম্মতিপত্র আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। ২৩টি শর্ত দিয়ে তারা আমাদেরকে এই জনসভা করার বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছে। একদিন আগে অনুমতি পেলেও জনসভার কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে আমরা ১২ ঘণ্টার নোটিসেও জনসভা সফল করেছি। তবে অতীতের চেয়ে এবার পুলিশ একটু আগে অনুমতি দেয়ায় ডিএমপিকে ধন্যবাদ। জনসভা সফল করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সরকার, সরকারী দল ও ডিএমপিকে অনুরোধ জানাতে চাই, এই জনসভা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আশাকরি আপনারা সহযোগিতা করবেন। সমাবেশে বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক যে পরিবেশ আছে, তার বিঘœ ঘটাবেন না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা কোন ধরনের উস্কানি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কোন ধরনের ফাঁদে পা না দিতে বিএনপি নেতাকর্মীদেরর সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন জনসভাকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। বিভিন্নস্থানে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারসহ পুলিশি তা-ব চালাচ্ছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় জনসভার প্রস্তুতি বৈঠকের পর নেতাকর্মীরা বাসায় ফেরার পথে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুন অর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শরীফুল আলম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। বিএনপির জনসভা সফল করতে লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তারেক রহমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এমন নেতাদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জানা যায়, বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর থাকবে। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। যে সব শর্তে বিএনপিকে জনসভার অনুমতি দেয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিএনপিকে দেয়া চিঠিতে জনসভা করতে ২৩টি শর্তের উল্লেখ রয়েছে। এ সব শর্তের মধ্যে রয়েছে- বিকাল ৫টার মধ্যে জনসভা শেষ করতে হবে, জনসভা শুরুর সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা আগে নেতাকর্মীদের ঢুকতে দেবে পুলিশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বা বক্তব্য দেয়া বা প্রচার করা যাবে না, লাঠি-সোঁটা, ব্যানার, ফেস্টুনের আড়ালে লাঠি বা রড বহন করা যাবে না, মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা যাবে না। এ ছাড়াও রয়েছে উস্কানিমূলক কোন বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না, রাষ্ট্রবিরোধী, আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী বা জননিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ চালানো যাবে না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, জনসভার নির্ধারিত সময়ের আগে উদ্যান বা তার আশপাশের রাস্তা-ফুটপাতে সমবেত হওয়া যাবে না, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন কিছু করা যাবে না, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে, অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না ইত্যাদি।
×