ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুরে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে কমিটি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার

৬ নারী ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুকে দেয়ার পর থানায় মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ নভেম্বর ২০১৭

৬ নারী ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুকে দেয়ার পর থানায় মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১১ নবেম্বর ॥ ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদার (২৩) ফাঁদে ফেলে ৬ নারীকে ধর্ষণের পর তা ভিডিও প্রকাশ করায় ভেদরগঞ্জসহ শরীয়তপুরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা শাখা। শনিবার বিকেলে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ফেরাঙ্গীকান্দি গ্রামের ভুক্তভোগী এক নারী (আছিয়া বেগম) বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ভেদরগঞ্জ থানায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। জেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক মোঃ মহসীন মাদবর বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে শনিবার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারকে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তা বড় ধরনের সাইবার অপরাধ। পুলিশ ওই ছেলেকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যে কোন উপায়ে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা আরিফের ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া ৬ নারীর মধ্যে কেউ লোকলজ্জার ভয়ে এখনও থানায় কোন মামলা করেনি। এ ঘটনার পর থেকে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক গৃহবধূ নিজ এলাকা থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। অন্য একজন প্রবাসীর স্ত্রীকে শ^শুরবাড়ি থেকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনার শিকার কলেজ ছাত্রীরা লোকলজ্জার ভয়ে কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরিফ হোসেন হাওলাদার উপজেলার ফেরাঙ্গীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় কলেজের ¯œাতক শ্রেণীর ছাত্র। ২০১৫ সালের জুন মাসে তাকে নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার গ্রামের প্রথমে এক গৃহবধূর গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। সেটাও গোপনে ভিডিও করে। সেই ভিডিও এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে ফাঁদে ফেলে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কলেজ ছাত্রীসহ ৬ নারীকে ধর্ষণ করেছে আরিফ হোসেন হাওলাদার। এসব ধর্ষণের ভিডিও ও তাদের আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ওই নারীদের ধর্ষণের দৃশ্যের ভিডিও এবং আপত্তিকর ছবি ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রামের যুবক ও তরুণ শ্রেণী মানুষের মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানায়, সে প্রতারণা করে যাদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে তাদের মধ্যে দু’জন স্থানীয় কলেজের ছাত্রী, দু’জন গৃহবধূ এবং অপর দু’জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী এক গৃহবধূর বোন বলেন, আরিফ আমার বোনকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে, ভিডিও প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে। আমরা আতঙ্কে ও লোকলজ্জার ভয়ে এখনও মামলা করিনি। ভুক্তভোগী এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আরিফ আমাকে শেষ করে দিয়েছে। এখন সমাজে কিভাবে মুখ দেখাব? ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ রাঢ়ী বলেন, আরিফ এত ভয়ঙ্কর চরিত্রহীন লোক তা আমরা জানতাম না। ঘটনার পর থেকে আমরা তাকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছি। নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এ কাজ করতে পারে না। এ ঘটনাটি এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ঘৃণা ও নিন্দার সৃষ্টি করেছে। আরিফের পিতাকে বলা হয়েছে তাকে হাজির করার জন্য। তাকে সামাজিকভাবেও বিচার করা হবে। ভেদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীকে আইনের আওতায় আনব।
×