ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুন্নি আক্তার

গণবিশ্ববিদ্যালয়॥ ফের দেখা হবে...

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ নভেম্বর ২০১৭

গণবিশ্ববিদ্যালয়॥ ফের দেখা হবে...

এই সেদিন ২০১৪! ওরিয়েন্টেশনের দিন কি অদ্ভুত একটা অনুভূতি ছিল। কেউ কাউকে চিনি না, শুধু জানি আমরা ব্যাচমেট। শুরু হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। এক এক করে চার চারটা বছর পার করলাম একসঙ্গে। কত সুখ-দুঃখের, কত হাসি-ঠাট্টা, কত রোমান্টিক গল্পে ভরপুর আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। বলছিলাম সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন ৭ম ব্যাচের র‌্যাগ ডে উদযাপনের কথা। ওইদিন ১৬ অক্টোবর সকালে ক্যাম্পাস চত্বরে একদল ধবধবে সাদা টি-শার্ট পরা তরুণ-তরুণী এসে জমায়েত হতে লাগে। গায়ে লিখা র‌্যাগ ডে ৭ম ব্যাচ। এলাকাজুড়ে শুধু তারা। মার্কার পেন দিয়ে বন্ধুরা একে অন্যের টি-শার্টে লিখছে নানা কথা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১৯নং কক্ষে বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে কেক কাটা হয়। পরে শুরু হয় নাচ-গান রং খেলা, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই রঙে রঙিন হয়ে যায়। যে বন্ধু এবং বান্ধবীটির সঙ্গে গত চার বছরেও একদিন কথা হয়নি সেও রং দিয়ে যাচ্ছে। বলছে, বন্ধু মনে রাখবি তো? সকাল থেকে পুরোটা দিন ক্যাম্পাসটা ছিল ৭ম ব্যাচময়, ক্যাম্পাস জীবনের এই শেষ দিনটা মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্যই। ক্যাম্পাসে রং মাখামাখি চলল অনেকক্ষণ। সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তারাও র‌্যাগ ডের আগাম মজা নিচ্ছে। প্রিয় ক্যাম্পাসে কাটানো চার বছর সময় নাকি স্বপ্নের মতোই কেটে গেছে। সবার মুখে শুধু একটাই কথা ‘মনে হচ্ছে এই তো সেদিন আসলাম, আর ক’টা দিন বেশি থাকতে পারলে আরও ভাল লাগত।’ বিবিএর ইমতিয়াজ মাহমুদ সাদ্দাম বলে, এ চার বছরে বন্ধুদের অনেক জ্বালাতন করেছি। তাই আর কিছু না হোক, এ জ্বালাতনের জন্য হলেও তারা আমাকে অনেক দিন স্মরণে রাখবে। ‘মিস করব তোদের কবে পাব আবার তোদের’ বলতে গিয়ে চোখে জল চলে এসেছে তার। ‘জীবনে হয়ত এটাই সবচেয়ে ভাল এবং সুন্দর সময় কাটাচ্ছি’ এভাবেই বলছিল ৭ম ব্যাচের একজন প্রিয়মুখ পারভেজ খান। বিদায় কখনই সুখকর হয় না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের আগমন ঘটে চার বছর আগে। সময়টা খুব বেশি না হলেও স্মৃতির ঝুলিটা মনে হচ্ছে খুব ভারি। অনেক আনন্দ-বেদনার গল্প তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পাসের এ চিরসবুজ চত্বরে। কত স্মৃতি যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তা ভাবতেই বুকের বাঁ পাশটা চিন চিন করে ওঠে। চার বছরের এ অকৃত্রিম ভালবাসা, বন্ধন কি ভুলে থাকা যায়! প্রতিদিন যেখানে ক্লাস পরীক্ষা এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মত্ত থাকতাম আজ সেই জায়গাগুলো খুব টানে, মনে হয় যদি আবার যেতে পারতাম তাহলে কতই না মজা হতো; কিন্তু সময় বড়ই নিষ্ঠুর! শুধু ভাল সময়গুলোকে স্মৃতি করে দেয়। দিনজুড়ে সূর্যের কঠিন উত্তাপ ছিল, কিন্তু বিকেলবেলা ছিল তার উল্টো। মিষ্টি বাতাস বইছিল। বিদায়বেলা সবার চোখে জল ছল ছল করছে। কাল থেকে আমরা কে কোথায় থাকব তার ঠিক নেই, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাব, ক্যাম্পাসের এই জায়গাগুলো খুব মিস করব সেই আড্ডা, সেই উচ্ছ্বাস, ‘এই প্রিয় ক্যাম্পাস এই প্রিয় মুখগুলোকে খুঁজে বেড়াব। তোদের সবাইকে খুব মিস করব।’
×