ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসএমই খাতের উন্নয়ন ও বাস্তব প্রেক্ষিত

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১২ নভেম্বর ২০১৭

এসএমই খাতের উন্নয়ন ও বাস্তব প্রেক্ষিত

দেশে অপ্রতুল সম্পদ সত্ত্বেও তা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে সীমাবদ্ধ। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের লোকেরা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এসএমই খাত (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) । এ খাতে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলোর অর্থছাড় বাড়ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসএমই খাতে অর্থছাড়ের প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালে ছিল ২১ শতাংশ। এ সময়ে মোট অর্থছাড় হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেছেন, এসএমই খাতে অর্থায়নে ব্যাংকের মুনাফায় তেমন প্রভাব পড়ছে না। কিন্তু আজকের এসএমই আগামী দিনে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে এসএমই খাতে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। তিনি এ খাতে জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার জন্য ফ্যাক্টরিংয়ের মতো নতুন সেবা চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শামসুল ইসলাম বলেছেন, ব্যাংকাররা গ্রামে পল্লী ঋণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দারিদ্র্য দূরীকরণে এসএমই ঋণের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি এসএমই সেক্টর ও এসএমই অর্থায়নে সঠিক কর্মপন্থার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, এসএমইতে ঋণ দিতে পারলে বাংলাদেশ উন্নতি করবে। তবে একই সঙ্গে এ খাতের খেলাপি ঋণও বৃদ্ধি পাচ্ছে । ‘ইমপ্যাক্ট অব এসএমই ফাইন্যান্সিং অন ব্যাংকস ফিটেবিলিটি : এ্যান ইনকোয়ারি এ্যাক্রোস ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ প্রেতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র দুই হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬১ কোটি টাকায়। এর পরের বছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে আরও চার হাজার খেলাপি ঋণ যুক্ত হয়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায় । এজন্য এসএমই-লোন কোন সেক্টরে ব্যবহার করা হচ্ছে- তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমরা যদি পিছনে ফিরে তাকাই এমন অনেক অবহেলিত নারী ছিল যারা প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হতো সমাজের কাছে । আজ তারা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পরিচয় নিজেই তৈরি করেছে। কুটির শিল্প, পাট শিল্প, হস্ত শিল্প এসব ক্ষেত্রে নারীরা আজ অনেক অগ্রগামী এসএমই লোনের মাধ্যমে। বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্প অর্থনৈতিক জোন বিনির্মাণে গতি সঞ্চারের পাশাপাশি এসএমই খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আমাদের দেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা অপরিসীম। বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রম আর প্রবল আত্মবিশ্বাস এ খাতকে প্রভাবিত করে দেশের আর্থ-সামাজিক আবস্থাকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারে। কেননা দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশক্রমে বর্তমানে তফসিলভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে উদ্যোক্তার কার্যক্রম মনিটরিংয়ে স্বচ্ছতা আনয়ন জরুরী। তবে আশার খবর হলো- অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন ও এফবিসিসিআই একযোগে কাজ করবে। সম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করার এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হলো এসএমই । অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, নারী পুরুষের সমতা বিধান ও নারীক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে এসএমই খাত এক অসীম ভূমিকা রেখে চলেছে। এশিয়ার শিল্পোন্নত ও উদীয়মান দেশগুলো যেমন- তাদের সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশও তার উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে এসএমই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে। কর্পোরেট বাণিজ্য যদি হয় অর্থনীতির প্রাণ তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হলো তার অক্সিজেন। এই অক্সিজেনের গতিপ্রবাহকে সমুন্নত রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উদ্যোক্তাদের সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে।
×