ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিমিয়ামে হলেও ভাল কোম্পানি অনুমোদনের দাবি

স্বল্প মূলধনী কোম্পানির কারসাজিতে শত কোটি টাকা বাজারের বাইরে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১২ নভেম্বর ২০১৭

স্বল্প মূলধনী কোম্পানির কারসাজিতে শত কোটি টাকা বাজারের বাইরে

অপূর্ব কুমার ॥ ফেসভ্যালুতে বা অভিহিত মূল্যে শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে শত কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো। তারল্য সঙ্কটে ভুগতে থাকা এই বাজারের এতো বড় অঙ্কের টাকা বের হয়ে যাওয়াকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। প্রিমিয়াম দিয়ে হলেও ভাল কোম্পানি বাজারে আনার তাগিদ দিয়েছেন তারা। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সম্প্রতি তিনটি কোম্পানিটির প্রথম দিনেই কয়েকশ শতাংশ দর বেড়েছে। বিশেষ করে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোডের প্রথম দিনে দর বেড়েছে ১ হাজার শতাংশের বেশি। ফলে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে বিজয়ীরা প্রথম দিনেই বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন ৬৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। একইভাবে বিবিএস কেবলের নামের আরও একটি কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে বাজার থেকে প্রথমদিনে ৯শ শতাংশ দর বেড়েছিল। ওই কোম্পানিটিরই প্রথম দিনে ৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। এই টাকার বেশিরভাগই বাজার থেকে আইপিও বিজয়ীরা তুলে নিয়েছেন। এভাবেই ফেসভ্যালুতে আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে একটি পক্ষ বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সেকেন্ডারি মার্কেটে কোন কোম্পানির এভাবে দরবৃদ্ধি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। কারণ কোম্পানিটি এত ভাল হলেও আইপিও অনুমোদনের সময়ই ইস্যুয়ার প্রিমিয়াম চাইতে পারত। এখন প্রিমিয়াম চাইলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেখানে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিলামের মাধ্যমে দর নির্ধারণ করে থাকেন। পরে কাট অফ প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কম দরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিও আবেদন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা কোম্পানিরি রিজার্ভ ও এনএভিতে যোগ হতো কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতো। কিন্তু অভিহিত মূল্যে আসার পরে কোম্পানির দর বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির কোন কাজে আসে না। উল্টো আইপিও বিজয়ী বিনিয়োগকারীরা প্রথম দিনে শেয়ার করে বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। ক নামের ব্রোকারেজ হাউসে আইপিও আবেদন করে আব্দুর রহিম এক বিনিয়োগকারীরা ইস্যু মূল্য ১০ টাকায় ৫শ লটে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোডের শেয়ার লটারিতে জিতেছেন। লেনদেনের প্রথম দিনেই রহিম শেয়ারটি ১১২ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে রহিম প্রতি ৫১ হাজার টাকা মুনাফা করেছেন। আর যদি কোম্পানিটির ইস্যু মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম থাকত, সেক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের টাকা কোম্পানির রিজার্ভ বা এনএভিতে যোগ হতো। পরবর্তীতে কোম্পানি সেই টাকা ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু অভিহিত মূল্যে আসার কারণে পুরো টাকাই বাজারের বাইরে চলে যাচ্ছে। যার কারণে প্রিমিয়ামের যৌক্তিকতা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সম্প্রতি কিছু কোম্পানির শেয়ার দর ইস্যু মূল্যের চেয়ে কয়েকশগুণ বেশি দরে লেনদেন হয়েছে। স্বল্প মূলধনী কোম্পানি হওয়ার কারণেই কারসাজির চক্রের সদস্যরা উচ্চদরে এই শেয়ার কিনেছেন। ফলে প্রথম কয়েক দিনেই আইপিও বিজয়ীরা শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন। তবে ক্ষতির শিকারও হয়েছেন অনেকে। প্রিমিয়াম নেয়ার মতো কোম্পানি বা ভাল মৌলভিত্তির কোম্পানি হলে বুক বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে টাকা তুলতো কোম্পানিগুলো। কিন্তু মৌলভিত্তি কম হওয়ার কারণে বুক বিল্ডিংয়ে কোম্পানিগুলো বাজারে আসেনি। প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে আসলে প্রিমিয়ামের টাকা অন্তত কোম্পানিতে থাকত। এখন সেটি হয়নি। ফলে টাকার বড় একটি অংশ বাজারের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও এই বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। এই বিষয়ে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, একটা ভাল কোম্পানি যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছে, সেটি প্রিমিয়ামে বাজারে আসবে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ দীর্ঘদিনের সুনাম এবং যশ নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করবে না। আর যেসব কোম্পানির ভিত্তি দুর্বল সেগুলো অভিহিত মূল্যে বাজারে আসে। অভিহিত মূল্যের স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর উচ্চ মূল্যে লেনদেন সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আইপিও আবেদনকারীরা সাধারণ আইপিওতে শেয়ার পাওয়ার পর তা বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে নেয়। এক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা বাজার থেকে বাইরে চলে যায়। তাই সেকেন্ডারি বাজারে যারা শেয়ার কিনবেন তাদের সতর্ক থাকতে হবে। অতি মুনাফার আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তিনি। এতে ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন বাজারে আসবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য কোম্পানিগুলো অবশ্যই প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে আসবে। কারণ কোম্পানির যোগ্যতা অনুসারেই আইপিও অনুমোদন পেয়ে থাকে।
×