ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চালকবিহীন বিমান

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১১ নভেম্বর ২০১৭

চালকবিহীন বিমান

প্রযুক্তির দুনিয়ায় পরিবর্তনটা সময়ের সঙ্গেই হয় কিন্তু কখনওবা সময়ের থেকে আগেও হয়। বর্তমান সময়ে এসে প্রযুক্তির জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মানুষবিহীন যন্ত্রাংশ। এ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে বিস্তর। কখনও সেই গবেষণা থেকে বেরিয়ে পড়ে ভবিষ্যতের কল্পকাহিনীর গল্পের বিভিন্ন বস্তু। এবারের সংখ্যায় পাইলটবিহীন বিমান ও চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন Ñ রেজা নওফল হায়দার চালকবিহীন বিমান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উপগ্রহ তা পাঠিয়ে দেয়া ভূমিতে অবস্থিত রিসিভারে। রিসিভার থেকে তা যায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমে। এই গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে থাকেন পাইলট। কম্পিউটারের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্দেশ দেন যা মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় বিমানে এবং বিমান পাইলটের নির্দেশ পালন করে। পুরো ঘটনাতে সময় লাগে মাত্র ২ সেকেন্ড। আর,কিউ-৭ শ্যাডো চালকবিহীন বিমান সিস্টেমে থাকে, চারটে চালকবিহীন বিমান, দুটো গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি ভ্রাম্যমাণ গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি লঞ্চার, একটি গ্রাউন্ড ডাটা টার্মিনাল, যা উপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, একটি দূর নিয়ন্ত্রিত ভিডিও টার্মিনাল যেখানে বসে পাইলট সব কিছু দেখতে পান এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বিমানবাহিনীতে আধুনিকতম সংযোজন হলো পাইলটবিহীন যুদ্ধবিমান। এই বিমানে নেই কোন পাইলট বা ক্রু। ১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিমানবাহিনী প্রথম এই মনুষ্যবিহীন বিমান তৈরির কাজে হাত দেয়। ১৯৬৪ সালের ভিয়েতনাম যুদ্ধে টনকিন উপসাগরে প্রথম ব্যবহার হয় এই পাইলটবিহীন যুদ্ধবিমান। এরপর ১৯৭৩ সালে আমেরিকান সেনাবাহিনী প্রথম স্বীকার করে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মানুষবিহীন বিমান ব্যবহারের কথা। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সিরিয়ার মিসাইল ব্যাটারি যখন একের পর এক ইসরাইলী বিমানকে ধারে কাছে ভিড়তে দিচ্ছে না তখন এই ইসরাইলী টহসধহহবফ ধরৎ াবযরপষব সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষাকে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে ইসরাইলকে রক্ষা করেছিল। ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধে ইসরাইল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে এই পাইলটবিহীন বিমান। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকান সেনাবাহিনী আরও অধিক মাত্রায় ব্যবহার করে এই পাইলটবিহীন বিমান। আফগানিস্তান যুদ্ধে ‘ড্রোন’ বিমান হামলা পর্বতসঙ্কুল দুর্গম গিরিপথে তালেবান যোদ্ধাদের ওপর নিখুঁত নিশানায় হামলা চালিয়ে নাস্তানাবুদ করেছে তালেবানদের। যতই দিন যাচ্ছে বিমানবাহিনীতে পাইলটবিহীন বিমান বেশি করে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে এই বিমানের- টহসধহহবফ ধরৎ াবযরপষব, টহসধহহবফ ধরৎপৎধভঃ ংুংঃবস, জবসড়ঃবষু ঢ়রষড়ঃবফ ধরৎপৎধভঃ ইত্যাদি। এই বিমান টহসধহহবফ ধরৎ াবযরপষব, বেশি পরিচিত হলেও যেহেতু এই বিমানের সঙ্গে, উপগ্রহ, গ্রাউন্ড স্টেশন, কম্পিউটার, ডাটা লিঙ্ক ইত্যাদি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ছে। টহসধহহবফ ধরৎপৎধভঃ ংুংঃবস অধিক সমীচীন মনে হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে যে চালকবিহীন বিমান তা হলো ঁহসধহহবফ পড়সনধঃ ধরৎ াবযরপষব বা পড়সনধঃ ফৎড়হব। প্রচলিত বিমান যুদ্ধে পাইলটের জীবনহানি বা শত্রুর হাতে বন্দী হওয়ার যে আশঙ্কা থাকে তা এড়াতেই এই পাইলটবিহীন যুদ্ধবিমান। ড্রোন শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো গুঞ্জন। এর চলার শব্দের সঙ্গে মৌমাছির গুনগুনের মিল থাকার কারণেই এই নাম। পাইলটবিহীন বিমানকে তাদের কাজ অনুসারে ভাগ করা হয়ে থাকে টার্গেট বিমান, গোয়েন্দা বিমান, আক্রমণ বা কমব্যাট বিমান, পরিবহন বিমান, গবেষণা এবং উন্নয়ন বিমান, বেসামরিক এবং বাণিজ্যিক বিমান। একটি আনম্যানড এয়ারক্রাফট সিস্টেমে যা থাকে চালকবিহীন বিমান, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, ডাটা লিঙ্ক। চালকবিহীন বিমান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উপগ্রহ তা পাঠিয়ে দেয়া ভূমিতে অবস্থিত রিসিভারে। রিসিভার থেকে তা যায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমে। এই গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে থাকেন পাইলট। কম্পিউটারের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্দেশ দেন যা মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় বিমানে এবং বিমান পাইলটের নির্দেশ পালন করে। পুরো ঘটনাতে সময় লাগে মাত্র ২ সেকেন্ড। আর,কিউ-৭ শ্যাডো চালকবিহীন বিমান সিস্টেমে থাকে, চারটে চালকবিহীন বিমান, দুটো গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি ভ্রাম্যমাণ গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি লঞ্চার, একটি গ্রাউন্ড ডাটা টার্মিনাল, যা উপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, একটি দূর নিয়ন্ত্রিত ভিডিও টার্মিনাল যেখানে বসে পাইলট সমস্ত কিছু দেখতে পান এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সুবিধা ॥ চালকের আসনে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলটের দরকার পড়ে না। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশে চালকবিহীন বিমান কাজ করতে পারে। ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থেকে, দিনরাত, এমনকি অন্ধকারের মধ্যেও তা কাজ করতে পারে। কুয়াশা বা মেঘের মধ্যেও সঠিকভাবে দ্রুততর সময়ে বারবার স্ক্যান করতে পারে। কোন এলাকার, মোবাইল ফোন, রেডিও বা টেলিভিশন সঙ্কেতকেও পর্যবেক্ষণ করতে পারে। চালকবিহীন বিমান বেশি ব্যবহৃত হয় সামরিক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা- নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ, আকাশ পথে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে, বিমান চলাচল এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে। যুদ্ধক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থাপনায়, রাসায়নিক, জীবাণু অস্ত্র, বিকিরণ বা পারমাণবিক ঝুঁকির মধ্যে ব্যবহার, টেলিকমিউনিকেশন, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের সঙ্গে যোগাযোগ হারালেও চালকবিহীন বিমান স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিশন শেষ করতে সক্ষম। অনুসন্ধান এবং উদ্ধার তৎপরতায় পাহাড় পর্বত, মরুভূমি বা যে কোন পরিবেশে উদ্ধার ও অনুসন্ধান। উদ্ধার সামগ্রী সরবরাহে। উদ্ধার এলাকা চিহ্নিত করতে। পর্যবেক্ষণে ॥ জাহাজ এবং নৌ চলাচল পর্যবেক্ষণে, বায়ু দূষণ মাত্রা নির্ধারণে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। যে সমস্ত অস্ত্র বহন করে থাকে আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল, এন্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল, আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল, নিয়ন্ত্রণযোগ্য গোলা। ক্রুজ মিসাইল এবং চালকবিহীন বিমান এই দুই অস্ত্রই নিক্ষেপের পর তা তাদের ইচ্ছেমতো গতিপথ পরিবর্তন করতে এবং সুবিধামতো আঘাত হানতে পারে পার্থক্য হলো মিসাইল নিজেই একটা অস্ত্র এবং আঘাত হানার পর তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় কিন্তু চালকবিহীন বিমান আঘাত হেনে ফিরে আসে এবং তা বারংবার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেহেতু চালক থাকে না সেহেতু চালকের জন্য যে সমস্ত সুবিধা থাকা দরকার যেমন ককপিট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্যারাসুট ইত্যাদিরও দরকার পড়ে না। ফলে চালকবিহীন বিমান বেশি পরিমাণ গোলাবারুদ, মিসাইল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারে। আকার এবং আকৃতিতে মনুষ্যবিহীন এই বিমান বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সবচেয়ে ছোটগুলো মাত্র কয়েক পাউন্ড ওজনের খেলনা বিমানের সমান আবার বড়গুলো বোয়িং বিমানের সমান আকারের এবং ৪০,০০০ পাউন্ড ওজনের হয়ে থাকে। মানুষবিহীন এই বিমানকে আবার উচ্চতা, গতিবেগ এবং রেঞ্জ অনুযায়ী বিভিন্নভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। হাতে ধরা (রেঞ্জ-২ কিমি উচ্চতা ৬০০ মিটার), কাছের- (১৫,০০ মিটার উচ্চতা রেঞ্জ-১০ কিমি), ন্যাটো টাইপ- ৩,০০০ মিটার উচ্চতা এবং ৫০ কিমি রেঞ্জ), কৌশলগত উচ্চতা (৫,৫০০০ মিটার উচ্চতা এবং ১৬০ কিলোমিটার রেঞ্জ) গঅখঊ (সবফরঁস ধষঃরঃঁফব, ষড়হম বহফঁৎধহপব) ৯,০০০ মিটার উচ্চতা এবং ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জ। মেল ঐঅখঊ (যরময ধষঃরঃঁফব, ষড়হম বহফঁৎধহপব) উচ্চতা ৯,১০০ মিটার এবং রেঞ্জ Ñ যে কোন দূরত্ব থেকে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য, হাইপারসনিক- ঐণচঊজঝঙঘওঈ উচ্চগতির সুপারসনিক গতিবেগ ১-৫ ম্যাক বা হাইপারসনিক ( ৫ ম্যাক এর অতিরিক্ত গতিবেগ, ১৫,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম- রেঞ্জ- ২০০ কিমি-এর বেশি) পৃথিবীর কক্ষপথে উড়তে সক্ষম এবং গতিবেগ ২৫ ম্যাক-এর চেয়ে বেশি। সনিক হলো যা শব্দের সমান গতির, সুপারসনিক শব্দের চেয়ে ১.২ থেকে ৫ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন, হাইপার সনিক শব্দের থেকে ৫-১০ গুণ বেগ এবং হাই হাইপারসনিক হলো শব্দের চেয়ে ১০ গুণের অধিক গতিবেগ সম্পন্ন। চালকবিহীন বিমানের ব্যবহার শুরু হয়েছিল সামরিক বাহিনীতে। এখন তা বেসামরিক কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আমেরিকাতে প্রায় ৫০টা কোম্পানি এখন চালকবিহীন বিমান তৈরি করছে। প্রায় ১৫১টি মডেল রয়েছে চালকবিহীন বিমানের। অবিশ্বাস্য গতিতে বাড়ছে চালকবিহীন বিমানের উৎপাদন ব্যবহার এবং সুযোগ সুবিধা।
×