ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস খেলতে নেপালী টেনিসকন্যা প্রেরণা কৈরালা এখন ঢাকায়

‘মনীষা কৈরালা আমার কাজিন’

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ নভেম্বর ২০১৭

‘মনীষা কৈরালা আমার কাজিন’

রুমেল খান ॥ হিমালয় কন্যা। চেহারাটা মায়াকাড়া। একটু লাজুক, তবে কথাবার্তায় সাবলীলই বলা চলে। একেবারে বাঙালীদের মতোই। নামের প্রথম অংশটাও বাংলা শব্দ, ‘প্রেরণা’। পুরো নাম প্রেরণা কৈরালা। চতুর্দশী এই সুদর্শনা নেপালী মেয়ের পরিচয়Ñ সে টেনিস খেলে। এবারই প্রথম খেলতে এসেছে বাংলাদেশে। খেলছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস প্রতিযোগিতায়। তার নামের শেষে ‘কৈরালা’ পদবি জেনে একটু কৌতূহল হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, বলিউডের নেপালী চিত্রনায়িকা মনীষা কৈরালার সঙ্গে তো নামে মিল আছে। আত্মীয় নাকি? এবার এই প্রতিবেদকের অবাক হবার পালা। কেননা প্রেরণা জবাব দিল, ‘তুমি ঠিকই ধরেছ, আত্মীয়ই। আমি মনীষার কাজিন।’ ঠিক বিশ্বাস হলো না। এমন সময় প্রেরণা ডাকলো তার বাবা পুরুষত্তম কৈরালাকে। তিনি এগিয়ে এসে মেয়ের কথাকে সমর্থন করলেন। এদিকে প্রেরণা বলে চলেছে, ‘আমার গ্র্যান্ডফাদার গিরিজা প্রসাদ কৈরালা ছিলেন নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। আমি সেই বংশেরই মেয়ে।’ তাই যদি হয় তাহলে প্রেরণার রাজনীতিবিদ হওয়ার কথা, নয়তো চিত্রনায়িকা। এক গাল হেসে প্রেরণার উত্তর, ‘আমি রাজনীতি মোটেও পছন্দ করি না। চলচ্চিত্র ভাল লাগলেও এখনই এই অঙ্গনে আসার ইচ্ছে নেই। তবে যখন টেনিস ক্যারিয়ার শেষ করব, তখন হয়তো অভিনয় জগতে নাম লেখালেও লেখাতে পারি।’ ২০০৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুতে জন্ম নেয়া প্রেরণার টেনিসে আসা ২০১৪ সালে। মায়ের নাম পুজা কৈরালা। তার টেনিসে আসার গল্পটা এরকমÑ স্কুলে প্রথমে খেলতো ক্রিকেট। করতো পেস বোলিং। ভালই খেলত। একদিন তার কোচ রাজকুমার লামা প্রেরণাকে বললেন টেনিস খেলতে। আগ্রহ নিয়েই প্রেরণার খেলা। রাজকুমার প্রেরণার খেলা দেখে জানালেন, প্রেরণার মধ্যে ভাল টেনিস খেলোয়াড় হওয়ার মতো গুণাবলী আছে। কিন্তু প্রেরণা বেঁকে বসলো। প্রিয় খেলা ক্রিকেটকে বিসর্জন দিতে চায় না সে। এবার বাবা বোঝালেন প্রেরণাকে। প্রেরণা বুঝলো এবং সেই থেকে গাঁটছড়া বাঁধলো টেনিসের সঙ্গে। এ পর্যন্ত এককে বেশ কটি শিরোপা জিতেছে সে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ২০১৭ সালে অ-১৪ এবং অ-১৬ বয়সী একটি স্থানীয় প্রতিযোগিতা, ২০১৭ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত অ-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপে, ২০১৭ সালে এটিএফ এশিয়ান টেনিস ফেডারেশন প্রতিযোগিতা (গত সপ্তাহে এই আসর জিতেই বাংলাদেশে এসেছে প্রেরণা)। এছাড়া জাপানের সোফি মোহো হামাদাকে সঙ্গে নিয়ে জিতেছে অ-১৪ আসরের দ্বৈত শিরোপাও। প্রেরণার প্রথম ক্লাব হচ্ছে লন টেনিস ক্লাব। পরে সে হেমস একাডেমিতে চলে যায়। বর্তমানে উন্নত প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ভর্তি হয়েছে সাথবাতো অল নেপাল লন টেনিস এ্যাসোসিয়েশনে। এ নিয়ে মোট ছয়টি দেশে গিয়ে টেনিস খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। তালিকায় রয়েছে থাইল্যান্ড (৯ বার), ভারত (৫ বার), মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তো প্রথমবার আসা? সবকিছু মিলিয়ে কেমন লাগছে? ‘এখানকার মানুষগুলো খুব ভাল। তারা অনেক মিশুক, বন্ধুবৎসল। এখানকার খাবার খেয়ে ভাল লেগেছে। আবহাওয়া একটু উষ্ণ হলেও মানিয়ে নিয়েছি। তবে ট্রাফিক জ্যাম এবং জনসংখ্যার আধিক্য ভাল লাগেনি। তবে সবমিলিয়ে ভাল লেগেছে।’ থাই, কোরিয়ান, ইংরেজী ও হিন্দি ভাষায় কথা বলায় পারদর্শী প্রেরণার মূল্যায়ন (বাংলা ভাল বোঝে, তবে বলতে পারে না)। প্রেরণার প্লেয়িং স্টাইল হচ্ছেÑ দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড খেলে। বেসলাইনে সবচেয়ে ভাল খেলে সে। আর পছন্দ করে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলতে। ঠিক সেরেনা উইলিয়ামসের মতো। সেরেনা কেন? ‘কারণ সেরেনাই আমার আদর্শ। অনেক এগ্রেসিভ খেলে সে। এটা আমার অনেক পছন্দ। টেনিস তার প্যাশন।’ ক্যারিয়ারে স্মরণীয় ম্যাচ? ‘২০১৬-এর নবেম্বর। দিল্লীতে বিশ্ব জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। জর্দানের প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রথম গেমে ১-৬ ব্যবধানে হারলেও পরের গেমে ৭-৫ ব্যবধানে জিতে সমতা আনি। শেষ গেমে ৬-৬ এ ড্র। ওই সময় একপর্যায়ে আমার মাথায় জোরে বল লাগে। ব্যথা না পেলেও আত্মবিশ্বাস এবং মনোসংযোগে ঘাটতি হয়। ফলে ম্যাচটা হেরে যাই।’ খেলা শুরুর বছরই বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়ে এক মাসের জন্য খেলার বাইরে চলে গিয়েছিল প্রেরণা। ‘নতুন তো, তাই র‌্যাকেট ঠিকমতো গ্রিপ না করে ভুলভাবে গ্রিপ করলে হাত বাজেভাবে ফুলে গিয়েছিল।’ প্রেরণার স্মৃতিচারণ। প্রেরণার ভবিষ্যত লক্ষ্য অনেক বড়, ‘এসএ গেমস টেনিসে এবং অলিম্পিকে দেশের হয়ে স্বর্ণ জিততে চাই। সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতারও।’ কাঠমান্ডুর আইডিয়াল ইংলিশ হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ক্লাস টেনে পড়ুয়া প্রেরণার শখ গান গাওয়া, ভ্রমণ করা এবং থাই ও কোরিয়ান মুভি দেখা। আগামীতে কি সেরেনায় প্রেরণা পেয়ে সাফল্যের জোয়ারে ভাসতে পারবে প্রেরণা?
×