ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেএফএ অ-১৪ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ, হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হলে প্রয়াত সাবিনাকে শিরোপা উৎসর্গ করবে ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ-ঠাকুরগাঁও শিরোপা লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ নভেম্বর ২০১৭

ময়মনসিংহ-ঠাকুরগাঁও শিরোপা লড়াই আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মৃত্যু সবসময় বেদনাবিধুর। কিন্তু অল্প বয়সে অকালপ্রয়াণ কখনই মেনে নেয়া যায় না। ঘাতক জ¦রের কাছে আত্মসমপর্ণ করে না ফেরার দেশে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পাড়ি জমিয়েছিল সাবিনা ইয়াসমিন (১৪)। আগামী ডিসেম্বরে সাফ অ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার কথা ছিল ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এই কিশোরী ফুটবলারের। সেই কলসিন্দুরের সাবিনার স্মৃতিই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের কনফারেন্স রুমে অশ্রুসজল চোখে ফিরিয়ে আনলো কলসিন্দুরেরই আরেক ইয়াসমিন। ময়মনসিংহ জেলা ফুটবল দলের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার ইয়াসমিন আক্তার। ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকরের রাঙাটুঙ্গী গ্রাম। এই দুই গ্রামের মেয়েরা বাছাইপর্ব, মূলপর্ব, সেমিফাইনাল পেরিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে জেএফএ অ-১৪ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ আসরে। আজ শুক্রবার বিকেল তিনটায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে দল দুটির মেয়েরা। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে ময়মনসিংহ। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে এসেছে ঠাকুরগাঁও। তারপরও শিরোপায় চোখ তাদের। ব্যতিক্রম নয় ময়মনসিংহ। আগের দুইবার ফাইনাল খেলে অভিজ্ঞ ময়মনসিংহ শিরোপা ভিন্ন অন্য কিছু চিন্তা করছে না। ফাইনালের আগে বৃহস্পতিবার নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয় দুই দল। ফাইনাল পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা দলের কোচ সালাহউদ্দিন আহমেদ, অধিনায়ক ইয়াসমিন আক্তার, ঠাকুরগাঁও জেলা দলের কোচ সুগা মুরমু ও সহ-অধিনায়ক বিথীকা কিসকু। উপস্থিত ছিলেন ফিফা ও এএফসির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ও পাওয়ার স্পন্সর ওয়ালটন গ্রুপের অপারেটিভ ডিরেক্টর (হেড অব স্পোর্টস এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার) এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন)। ঠাকুরগাঁওয়ের সোহাগী এবং আদুরী নামের দুই খেলোয়াড় জায়গা পেয়েছে মেয়েদের সাফের ক্যাম্পে। ময়মনসিংহ জেলা দলে ১৮ জনের মধ্যে ফুটবলে সফল গ্রাম কলসিন্দুরের ১৫ জন আছে। দলীয় অধিনায়ক ইয়াসমিন জানায়, কলসিন্দুরের সিনিয়র ফুটবলাররা সবসময়ই তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন। প্রেসমিট শেষের দিকে ইয়াসমিন বলে, ‘আমার একটা শেষ কথা ছিল। আমরা হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে পারলে এই জয় উৎসর্গ করব আমাদের সহপাঠী প্রয়াত সাবিনাকে। ট্রফিটা নিয়ে সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানাব। ফাইনাল খেলা শুরুর আগে আমরা সবাই সাবিনা স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করতে চাই।’ ময়মনসিংহ দলের কোচ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও অবশ্যই শক্তিশালী দল। আমরা এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছি। গেল আসরের চ্যাম্পিয়ন আমরা। এবারও আমরা ভাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। অধিনায়ক ইয়াসমিন আক্তারের ভাষ্য, ‘কে জিতবে, কে হারবে এখনই বলা যাচ্ছে না। মাঠে দেখা যাবে। মাঠের খেলায় যারা গোল করবে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। ফাইনালে আসা দুটি দলই শক্তিশালী। জেএসসি পরীক্ষার কারণে আমাদের দলের ছয়জন মূলপর্বে খেলতে পারেনি। তাদের ছাড়া ম্যাচ খেলতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক কষ্টে ফাইনালে এসেছি। ইনশাল্লাহ ভাল খেলা উপহার দিয়ে শিরোপা জিতব।’ ঠাকুরগাঁও দলের কোচ সুগা মুরমু বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম রাঙাটুঙ্গী। সেখানকার মেয়েদের নিয়ে তিন বছর আগে এই দলটি গড়েছি। অনেক প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে ও পেরিয়ে আমরা মেয়েদের ফুটবল দল গড়েছি। অনেক সমালোচনা সহ্য করেছি। গেল বছর সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে রংপুরের কাছে হেরেছিলাম। এবারই প্রথম ফাইনালে এসেছি। আমাদের মেয়েরা ভাল খেলা উপহার দেবে। গ্রামের মেয়েদের নিয়ে ফুটবল দল গঠন করা সহজ ছিল না। তাদের প্যান্ট পরানো সহজ ছিল না। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এসেছি আমরা। ভাল খেলে শিরোপা জিতে ফিরে যেতে চাই।’ সহ-অধিনায়ক বিথীকা কিসকুর প্রতিক্রিয়া, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে অনেকদূর থেকে এসেছি। বিজয় অর্জন করতে এসেছি। শিরোপা জিতে ফিরে যাব। আমাদের জেলার যাতে সুনাম হয় সেভাবে ভাল খেলব। জেলার সুনাম নিয়ে ফিরে যেতে চাই। আগামীকাল আমাদের ফাইনাল খেলা। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘বাছাইপর্ব, মূলপর্ব পেরিয়ে ফাইনালে এসেছি দুটি দল। এই দুই দলের অনেক খেলোয়াড় ইতিমধ্যে আমাদের নজর কেড়েছে। তাদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’ সেমিফাইনালে ময়মনসিংহ ৪-০ গোলে রাজশাহী জেলাকে এবং ঠাকুরগাঁও টাইব্রেকারে টাঙ্গাইল জেলাকে ৩-১ (১-১) গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল ৫০ হাজার ও রানার্সআপ দল ২৫ হাজার টাকা প্রাইজমানি পাবে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতা ৫ হাজার টাকা করে পাবে। এছাড়া পাওয়ার স্পন্সর ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়, ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা গোলরক্ষক, সেরা রক্ষণভাগ, সেরা মিডফিল্ড ও সেরা আক্রমণভাগের খেলোয়াড়কে হোম এ্যাপ্লায়েন্স দিয়ে উৎসাহিত করা হবে।
×