ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা চালিয়ে যাবে বিসিবি

হাতুরাসিংহের পদত্যাগপত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ নভেম্বর ২০১৭

হাতুরাসিংহের পদত্যাগপত্র

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে তাহলে শেষ হয়ে যাচ্ছে হাতুরাসিংহে যুগও? যে অবস্থা বোঝা যাচ্ছে তাতে তাই হতে চলেছে। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে আবারও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বিসিবির সিইও বরাবর এ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন হাতুরাসিংহে। এর আগে ২০১৬ সালেও একবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন হাতুরাসিংহে। বিসিবির কোন কর্মকর্তা এ নিয়ে মুখ না খুলতে চাইলেও হাতুরাসিংহে যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তা জানা হয়ে গেছে সবারই। যদিও এ পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ হয়নি। আলোচনার সুযোগ আছে। সেই আলোচনা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চালিয়েও যাবে। ঠিক যেমনটি ২০১৬ সালের আগস্টে দেয়া পদত্যাগপত্রও গ্রহণ করা হয়নি। পরে হাতুরাসিংহেকে বুঝিয়ে রেখেও দেয়া হয়েছে। যদি তখন পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হতো তাহলে ২০১৬ সালের নবেম্বর থেকে হাতুরাসিংহে আর বাংলাদেশের কোচ থাকতেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পরই হাতুরাসিংহের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পর্ক শেষ হয়ে যেত। কিন্তু যদি হাতুরাসিংহে এবার পদত্যাগ থেকে কোনভাবে সরে না আসেন তাহলে হাতুরাসিংহে যুগ শেষই হয়ে যাবে। যতদূর বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আবারও জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নিতে পারেন হাতুরাসিংহে। আর যদি শেষ পর্যন্ত তাই হয় তাহলে তো ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজ হচ্ছে, সেই সিরিজেই শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে হাতুরাসিংহেকে দেখা যাবে। হঠাৎ হাতুরাসিংহের পদত্যাগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন-ক্রিকইনফো হাতুরাসিংহের পদত্যাগ নিয়ে একটি রিপোর্ট করে। এরপরই হাতুরাসিংহের পদত্যাগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। সম্প্রতি হাতুরাসিংহে এ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। হাতুরাসিংহেকে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রধান কোচ করা হয়েছিল। হাতে এখনও প্রায় দুইবছর বাকি আছে। কিন্তু এই সময়ের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাচ্ছেন হাতুরাসিংহে। কিন্তু কেন? হাতুরাসিংহের পদত্যাগের পরই অনেক বিষয়ই সামনে চলে আসছে। প্রথমত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড অনেকদিন ধরেই হাতুরাসিংহেকে প্রধান কোচ হিসেবে পেতে চাইছে। এই পদটি এখনও খালি। ভাল একজন কোচও দরকার শ্রীলঙ্কার। যদিও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে হাতুরাসিংহের সম্পর্ক ভাল নয়। হাতুরাসিংহেকে যে একরকম অপমান করেই ক্রিকেট দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। সহকারী কোচ থাকতেই যে হাতুরাসিংহে এ অপমান বোধ করেছেন। তাই তো শ্রীলঙ্কা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন হাতুরাসিংহে। কিন্তু জন্মভূমির প্রতি কার না টান থাকে। হাতুরাসিংহেরও আছে। বিসিবি যে বেতন দেয় তা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড নাও দিতে পারে। কিন্তু যে বেতন মিলবে তাতে জন্মভূমিতে থাকা হবে। বেতনও সেই অনুযায়ী সুবিধাজনকই হবে। হাতুরাসিংহে তাই এ সুযোগ হারাতে নাও চাইতে পারেন। দ্বিতীয়ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। হাতুরাসিংহের কোচিং, ছুটির বিষয়গুলো, বেতনাদি নিয়েও এরপর অনেক আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হাতুরাসিংহে বাংলাদেশে না এসে অস্ট্রেলিয়ায় ছুটিতে চলে গেছেন। তিনি ঘরোয়া লীগ দেখেন না। শুধু জাতীয় দল নিয়েই পড়ে থাকেন। এমন অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাজেভাবে হারগুলোর জন্য কোচের রিপোর্টও প্রয়োজন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, প্রয়োজনে হাতুরাসিংহেকে ডেকে আনা হবে। জবাব চাওয়া হবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাতেই হয়তো বা ক্ষেপে গেছেন হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করেন হাতুরাসিংহে। যখন বিসিবি সভাপতি এমন কথা বলেছেন তখন হাতুরাসিংহের অপমানবোধ হতে পারে। সেই থেকেও রাগে এই পদত্যাগপত্র হতে পারে। তবে কোন স্থান ঠিক না করেই পদত্যাগপত্র দেবেন হাতুরাসিংহে, এমন অপেশাদার কোচ নিশ্চয়ই হাতুরাসিংহে নন। তৃতীয়ত আরেকটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হচ্ছে সব স্থানে। সবার মুখে মুখে আছে সেই আলোচনা। বিসিবির কাছ থেকে আরেকটু ক্ষমতা ভোগ করতে, বিসিবিকে একটু চাপে ফেলতেই তো আবার হাতুরাসিংহের এমন সিদ্ধান্ত নয়। একটু চালাকি করছেন নাতো হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন যে অবস্থায় আছে, যে সাফল্যগুলো পেয়েছে; তা হাতুরাসিংহে কোচ থাকতেই। হাতুরাসিংহে যেহেতু ভালই ক্ষমতা ভোগ করেন। তাই এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাজে সফরের পর ক্ষমতা কমতে পারে। এমন ভেবে পদত্যাগপত্র দেয়া হতে পারে। পদত্যাগপত্র দেয়া মানে বিসিবি তার সঙ্গে আলোচনায় যেতে চাইবে। যা বিসিবি চাচ্ছেও। আলোচনায় গেলে হাতুরাসিংহে নিজের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করবেন। এমনও হতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যর্থতার পর হাতুরাসিংহের সঙ্গে নাকি যোগাযোগই করা যাচ্ছে না। তবে যেটিই হোক, হাতুরাসিংহে যদি কোচ না থাকেন তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেটরই যে ক্ষতি হতে পারে তা সবারই এখন জানা। দলের সাফল্য বিবেচনায় নিলে যে সাফল্যগুলো এসেছে, তাতো হাতুরাসিংহের সময়ই এসেছে। হাতুরাসিংহে যেভাবেই সিদ্ধান্ত নেন তার সিদ্ধান্তগুলো কাজেও লেগেছে। আর কোচিং ক্যারিয়ারে তিনি অনেক এগিয়েও। তা না হলে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড যখন হাতুরাসিংহেকে সহকারী কোচ রাখতে চায়নি তখন কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা কী আর হাতুরাসিংহেকে দলের সঙ্গে রেখে দেয়ার কথা বলতেন? এখন এ পদত্যাগপত্র কোনদিকে মোড় নেয় তা সময়ই বলবে। তবে পদত্যাগপত্র দিয়ে ফেলেছেন হাতুরাসিংহে। এখন এ আলোচনাই ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে মুখে।
×