ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য

প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১০ নভেম্বর ২০১৭

প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে চতুর্থ দিনের বক্তব্য দিতে গিয়ে আদালতকে খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবেন না তিনি। প্রতিহিংসার রাজনীতিও করবেন না। শেখ হাসিনাকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। পরে খালেদা জিয়া আদালতের কাছে চতুর্থ দিনের মতো বক্তব্য শেষ করার অনুমতি চাইলে আদালত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৬ নবেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করে। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি গ্রহণ করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান। এদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার স্থায়ী জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আদালতে তিনি বক্তব্য দেন। তিনি বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হয়ে ১২টা ৬ মিনিট থেকে ১টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে আদালত এলাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর, ২৬ অক্টোবর ও ২ নবেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি আবেদনে বলেন, পৃথিবীর কোন ইতিহাসে সাপ্তাহিক জামিন দেয়ার নজির নেই। মামলায় খালেদা জিয়াকে সাপ্তাহিক জামিন দেয়া হয়েছে। তিনি বয়স্ক মহিলা। তাই তার স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করা হোক। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, মামলা দুইটি জামিন অযোগ্য ধারার। তাকে স্থায়ী জামিন দিলে আমার আপত্তি আছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। আগামী ১৬ নবেম্বর পর্যন্ত খালেদার জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সঙ্গে কোন সমঝোতা করিনি। তারা আমার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। নানা রকম প্রস্তাব আমার কাছে এসেছিল। আমি তাতে রাজি হইনি। জানিয়েছিল জরুরী অবস্থা তুলে দিয়ে তারা নির্বাচনে যেতে চায়। আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে গোপন আঁতাত করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ফল মেনে নিয়েছিলাম। সরকারকে সহযোগিতার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের সহযোগিতার আচরণের বিনিময়ে তারা কী আচরণ করেছে তা সবারই জানা।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা আমরা বারবার করে এসেছি। কিছুদিন আগেও আমি সংবাদ সম্মেলনে অতীতের তিক্ততার কথা তুলে ধরেছি। আমার ও শহীদ জিয়ার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ক্রমাগত অশোভন উক্তি, প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণ সত্ত্বেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তার প্রতি কোন প্রতিহিংসামূলক আচরণ করব না।’ আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, রাজনীতিতে সহিষ্ণু, সুন্দর সংস্কৃতি গড়ে তুলি। যা গণতন্ত্রের জন্য খুবই প্রয়োজন। যাতে আমাদের কাছ থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভাল কিছু শিখতে পারে। প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণের পরও আমি তাকে (শেখ হাসিনা) ক্ষমা করে দিয়েছি।’ খালেদা জিয়া আদালতে বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করেছি। সমঝোতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়াসহ ভাল প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ভিশন টোয়েন্টি-থার্টি ঘোষণা করেছি। এসব উদারতার জবাব আমাদের কোন ভাষায় দেয়া হচ্ছে তা সবাই জানে, আপনিও (আদালত) জানেন। এদেশে গণতন্ত্র নেই, কার্যকর সংসদ নেই, প্রহসনের প্রশাসন চলছে। গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন ও বিচারহীনতার রাজত্ব চলছে। ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে।’ আদালতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ। আইনজীবী হিসেবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জিয়াউদ্দিন জিয়া, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, এম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মৎস্য ভবন, কার্জন হল, বকশীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। ১১ সাক্ষীকে জেরার আবেদন আপীলেও খারিজ ॥ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১১ সাক্ষীর জেরা চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপীল খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারকের আপীল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন জাকির হোসেন ভূঁইয়া। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। এর আগে গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্ট ১১ সাক্ষীর জেরা চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছিল। বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেন ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদারের ওই বেঞ্চের আদেশে বলা হয়েছিল, ১১ সাক্ষীর মধ্যে যে দুজনকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ইতোপূর্বে জেরা করেছিলেন; তাদের আর নতুন করে জেরা করার প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বাকি নয়জনকে জেরা না করলেও মামলার আরেক আসামি, বিএনপি চেয়ারপার্সনের ছেলে তারেক রহমানের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেছেন। ওই জেরা খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহারের আদেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন নিয়ে আপীল বিভাগে এলেও বিফল হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
×