ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরবরাহ বাড়ায় শীতের সবজির দামও হ্রাস পাচ্ছে

দ্রুত কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, নিম্নমুখী চালের দাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১০ নভেম্বর ২০১৭

দ্রুত কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, নিম্নমুখী চালের দাম

এম শাহজাহান ॥ কেজিতে পাঁচ টাকা কমে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের আমদানি ও সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। ভারতের পাশাপাশি বিকল্প সোর্স কান্ট্রি থেকেও পেঁয়াজ আসায় বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়া জাত ও মানভেদে কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৯০ টাকায়। নতুন পেঁয়াজ আসার আগে মজুদ পেঁয়াজ ছেড়ে দিতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। এ কারণে দ্রুত দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানি, মজুদ ও বর্তমান বাজারদর নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দাম যাতে আর না বাড়ে সেজন্য মিসর, চীন ও থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, পেঁয়াজসহ কয়েকটি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম সম্প্রতি বেপরোয়া গতিতে বেড়েছে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে, বাংলাদেশে বর্তমান যে মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা আমদানি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। এতে সাধারণ ভোক্তার অস্বস্তি ও কষ্ট বেড়েছে। পেঁয়াজের এই সঙ্কট সৃষ্টির জন্য শক্তিশালী সিন্ডিকেট দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পরও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এটা সত্যি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি। এ কারণে আমাদের এখানেও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। তবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক এবং আমদানি উৎসাহিত করায় পেঁয়াজের দাম কমে আসছে। তিনি বলেন, সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে চালের দাম এখন নিম্নমুখী। আমন ধান পুরোদমে কাটা শুরু হলে মোটা চালের দাম আগের জায়গায় ফিরে আসবে। ঠিক তেমনি পেঁয়াজের দামও শীঘ্রই কমবে। তিনি বলেন, ভারত থেকে প্রতিদিন বিপুল পেঁয়াজ আসছে, ভাল দামের আশায় দেশী পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাবে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম আর বাড়ার কোন কারণ নেই। এক মাসের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে চালের দাম কিছুটা কমেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ এবং সবজির দাম। ইতোমধ্যে ৩০০ টাকা থেকে কাঁচামরিচের কেজি ৮০-১০০ টাকায় নেমে এসেছে। পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকায় উঠেছিল। এখন দাম কমতির দিকে। সবজির সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন সবজির দামও কিছুটা নি¤œমুখী। তবে এবার পেঁয়াজ ও চাল সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। কাপ্তানবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এবার ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে সেভাবে দাম কমছে না। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোন ঘাটতি নেই, সরবরাহ প্রচুর, তারপরও দাম কমছে ধীরে ধীরে। তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হবে। তাই পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য আর থাকবে না। জানা গেছে, দেশে গড়ে প্রতিমাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এ ছাড়া রমজান ও কোরবানির সময় পেঁয়াজের দেড় থেকে ২ লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠে সিন্ডিকেট। তথ্যমতে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে ১৯-২০ লাখ টন। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পেঁয়াজের বর্তমান দাম, মজুদ, চাহিদা ও আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকের পর শুধু পেঁয়াজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও বাণিজ্য সচিবকে দেয়া হয়। এই প্রতিবেদন এখন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসের এই সময়ে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০-৩৬ টাকায়। সেই একই পেঁয়াজ কিনতে এই শহরের একজন ভোক্তাকে এখন গুনতে হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা পর্যন্ত।
×