ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধন করলেন দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু এবং খুলনা- কলকাতা সরাসরি ট্রেন সার্ভিসসহ ৪ প্রকল্প

ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ॥ আরও দৃঢ় হোক বন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১০ নভেম্বর ২০১৭

ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ॥ আরও দৃঢ় হোক বন্ধন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে মৈত্রী ও বন্ধন জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। উভয় দেশের জনগণের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনা-কলকাতা রেলপথে বন্ধন এক্সপ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তারা এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দিল্লী থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। এ সময় দুই প্রধানমন্ত্রী চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। খুলনা-কলকাতা রেলপথে বন্ধন এক্সপ্রেসের পাশাপাশি ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসের উভয়প্রান্তে বহির্গমন ও কাস্টমস কার্যক্রম এবং ভারতীয় অর্থায়নে নির্মিত দুটি রেলসেতু উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ভারত এবং অন্যান্য নিকট প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করতে চাই। যেখানে আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বাস করতে পারি এবং জনগণের কল্যাণের জন্য গঠনমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। তিনি বলেন, এই বন্ধন শুধু রেলের নয়, আমাদের এই বন্ধন যেন দুই দেশের জনগণের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি করে, সার্বিক, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারি। লাইন অব ক্রেডিট তহবিলের মাধ্যমে দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ভারতের সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলওয়ে খাতে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত যে সমস্ত লাইন চালু ছিল, যা ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা পুনরায় চালু করার। উদ্বোধনীতে বাংলাদেশ ও ভারত এখন শুধু রেল, সড়ক, নদী বা আকাশ পথে সংযুক্ত নয় মন্তব্য করে গত মে মাসে সাউথ-এশিয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সহযোগিতার ক্ষেত্র মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ, উপকূলীয় নৌপথ, বিদ্যুত গ্রিড ইত্যাদির মাধ্যমেও সংযুক্ত। আমাদের সংযুক্ত হওয়ার এসব নতুন নতুন পথ সার্বিক সংযোগের কাঠামোতে বিচিত্র মাত্রা যোগ করেছে। এখানে আমি আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, সম্প্রতি আমাদের এই যোগাযোগ মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই ভারতের জনগণকে দিওয়ালি এবং বিজয়ার বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানান। ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চার প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারায় নিজের আনন্দের কথা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-কলকাতা এবং খুলনা-কলকাতার মধ্যে আরামদায়ক ভ্রমণে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে যাত্রীরা সুবিধা পাবে। আজকে যে একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো তাতে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘চমৎকার’ সম্পর্ক একান্তভাবে অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাত ও আলাপ-আলোচনার ওপর জোর দেন। মোদি বলেন, আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের এই বন্ধন প্রটোকলের মধ্যে রাখতে চাই না। বক্তব্যের শুরুতে দুই দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বাংলায় বলেন, দুই দেশবাসীকে আমার অভিনন্দন জানাই। আজ আমাদের মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় হলো। মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা ও কলকাতা রেল স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের সুবিধার কথা তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে অনেক সুবিধা হলো। এতে যাত্রার সময় প্রায় তিন ঘণ্টা কমে গেল। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত যে সমস্ত লাইন চালু ছিল তা পুনরায় চালু করা নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, ১৯৬৫ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে আমরা একপা একপা করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বস্ত সহযোগী হতে পারা ভারতের জন্য আনন্দের বলেও মন্তব্য করেন মোদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ যত বৃদ্ধি পাবে, দুদেশের তত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হবে। আমাদের দু’দেশের মৈত্রী ও বন্ধন আরও গতি পাবে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতের শুভ কামনার কথা প্রকাশ করে মোদি বলেন, আমরা চাই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ যেন আরও মজবুত হয়। এই যোগাযোগের মূল লক্ষ্যই হলো, দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগোযোগ। শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি এই চার প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও হাওড়ায় তার কার্যালয় নবান্ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দিল্লীতে মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। রেলসেতু উদ্বোধনের সময় ভৈরব থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। কলকাতা-খুলনা রুটের নতুন ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস উদ্বোধনীর দিনে কলকাতার চিতপুর স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ভিডিও কনফারেন্সে দুই দেশের দুই সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সবুজ পতাকা উড়িয়ে এই যাত্রার উদ্বোধন করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও যোগ দেন ॥ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতেই মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘পূজনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। মমতা বলেন, দুই দেশের ঐক্য, দুই দেশের মৈত্রী, দুই দেশের সম্প্রীতি, দুই দেশের সংহতি, দুই দেশের ভাষার বন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক। আমাদের ওয়ান অব দি বেস্ট ফ্রেন্ড ইন দি ওয়ার্ল্ড বলেও আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। মমতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, দিদি, ইলিশ মাছ আছে। আসেন, খাওয়াব। যে চার প্রকল্পের উদ্বোধন ॥ খুলনা-কলকাতার মধ্যে বন্ধন এক্সপ্রেস ও ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের বহির্গমন ও কাস্টমস কার্যক্রমের পাশাপাশি ভারতের ঋণ সহায়তায় নির্মিত দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর উদ্বোধন হয়েছে। মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়া বা আসার পথে এতদিন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হতো; এখন ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেই বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবেএবং গন্তব্য শেষে কলকাতায় হবে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশন। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভৈরব ও তিতাসের পুরনো সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। ভারতীয় ঋণে সেখানে নতুন দুটি সেতু হওয়ায় ডবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল করতে পারবে, যাতে যাতায়াতের সময়ও কমে আসবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে কলকাতার চিৎপুরে আন্তর্জাতিক রেল যাত্রী টার্মিনাসের উদ্বোধন করেন। তারা পতাকা দেখিয়ে কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী যাত্রারও সূচনা করেন। কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। দুই প্রধানমন্ত্রী ১০ নবেম্বর থেকে কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসের দুই প্রান্তে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সেবা শুরুরও ঘোষণা দেন। এর ফলে ঢাকা থেকে কলকাতায় ট্রেন ভ্রমণে তিন ঘণ্টার কাছাকাছি সময় বেঁচে যাবে। দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভারতীয় ঋণরেখায় নির্মিত ২টি রেলওয়ে সেতুরও উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের মেঘনা নদীর ওপর এক কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব রেলসেতু এবং তিতাস নদীর ওপর দ্বিতীয় রেলসেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এই দুটি সেতু ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে রেলপথে যাত্রা অধিকতর সহজ করবে। এছাড়া বন্ধন এক্সপ্রেসের সূচনায় কলকাতার সঙ্গে সরাসরি ট্রেন সেবার জন্য বাংলাদেশের খুলনার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বন্ধন এক্সপ্রেস আগামী ১৬ নবেম্বর থেকে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার চলাচল করবে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের প্রতীক মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। এতে ট্রেন যাত্রীদের যাত্রা আরও সহজ এবং সময়সাপেক্ষ হবে। বাংলাদেশ ভারতের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদার। তিনটি ঋণরেখার আওতায় ভারত বাংলাদেশকে ৮০০ কোটি ডলারের সহজশর্ত ঋণ দিয়েছে। আজ উদ্বোধন হওয়া দুটি রেলসেতু প্রথম ঋণরেখার প্রকল্প ছিল। সাড়ে ৪ যুগ পর কলকাতা-খুলনা রেল চালু ॥ স্টাফ রিপোর্টার বেনাপোল থেকে জানান, অবশেষে সব আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ সাড়ে চার যুগ পর সরাসরি কলকাতা-খুলনা রুটে রেল চলাচল শুরু হলো। বেলা সাড়ে ১১টায় কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে সে দেশের ২০ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে বেনাপোল রেলস্টেশনে দুপুর দেড়টার সময় এসে পৌঁছায়। বেনাপোল রেলস্টেশনে ইমিগ্রেশন কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ২টায় খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। বৃহস্পতিবার বেনাপোল রেলস্টেশনে বন্ধন এক্সপ্রেস প্রবেশ করলে ভারতীয় অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন, ডেপুটি কমিশনার মারফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার নূরুল বাসিদ, যশোরের এসপি আনিসুর রহমান, সার্কেল এএসপি মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, কাস্টমস সুপার তাহমিদ হোসেন, গোলাম মোর্তুজা, বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান, ইমিগ্রেশনের ওসি ওমর শরীফ, বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান প্রমুখ। ভারতীয় ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার দেবশংকর বসু ও স্বপন কুমার দে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশের জন্য ট্রাফিক পরিদর্শক অশোক কুমার বিশ্বাস, গার্ড কলকাতা সুবির সরকার, গার্ড রানাঘাট জগন্নাথ দত্ত, চালক প্রদীপ কুমার, চালক উত্তম কুমার, চালক সত্যজিত চক্রবর্তী, চালক রাজেশ চন্দ্র বিশ্বাস লকো, ইন্সপেক্টর প্রণব কুমার দাস, এসিএফ গৌতম হাজরা, এসিএফ অনিন্দ রায় প্রমুখ। এর আগে গত ৬ নবেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের সিসিএম মিহির কান্তি গুহর নেতৃত্বে আট সদস্যের দল ভারতে সে দেশের প্রতিনিধি দলসহ ট্রেনটিকে আনতে যায়। বেনাপোল রেলস্টেশনে বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রীর এপিএস জসীম উদ্দিন বলেন, ৫২ বছর পর কলকাতা-খুলনা সরাসরি রেল যোগাযোগে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সৌহার্দ, ভ্রাতৃত্ব এবং সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়া প্রয়োজন। খুলনা থেকে কলকাতা পৌঁছতে মাত্র চার ঘণ্টা সময় লাগবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উভয় রাষ্ট্রের সফলতা আসবে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার দেবশংকর বসু বলেন, বাংলাদেশে রেল নিয়ে এসে আমাদের খুব ভাল লাগছে। বাংলাদেশ ভারতের পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ। রেল চলাচলের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কসহ সব দিক এগিয়ে যাবে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র কলকাতা শহরে মাত্র চার ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে। একই ভাবে ভারতের যাত্রীও খুলনায় পৌঁছে যাবে। তিনি আরও বলেন, উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষামূলক রেলের শুভ উদ্বোধন করার জন্য বিলম্বে কলকাতা থেকে রেলটি ছেড়ে আসে। এরপর আগামী ১৬ নবেম্বর রেলটি সকাল ৭টায় কলকাতা থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টায় খুলনায় পৌঁছবে আর খুলনা থেকে দুপুর ২টায় কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি ওমর শরীফ বলেন, দুই দেশের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কিন্তু সপ্তাহে মাত্র একদিনের পরিবর্তে তিন দিন রেল চলাচল করলে মানুষের আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেত। ‘দেশ অনেকটাই লাভবান হবে’ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, ভারতের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় যে সম্পর্ক এর মধ্যে শুধু যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধাই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। যেমন নৌপথে জাহাজ চলাচলে দেশ লাভবান হচ্ছে, তেমনি রেলপথে ট্রেন চলাচলেও দেশ লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদারীপুর শহরের লেকেরপাড় স্বাধীনতা অঙ্গনে শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। নৌমন্ত্রী আরও বলেন, ইতোমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে সোয়া ৩শ’ জাহাজ চলাচল করে, এর মধ্যে ৩শ’ জাহাজই বাংলাদেশের। এতে শ্রমিকরা যেমন কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে, তেমনি মালিকরাও লাভবান হচ্ছেন। লাভের পুরো টাকা ডলারের মাধ্যমে পাচ্ছে। তাই খুলনা-কলকাতা ট্রেন চলাচলে দেশও ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। আগামী ১২ নবেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজনৈতিক ভাষণ দেবেন। এ প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার আগে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। এ অনুমতি পুলিশ দেবে কি-না সেটা পুলিশের ব্যাপার। যে কোন রাজনৈতিক দলের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে সভা-সমাবেশ করার। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে কোন সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, জঙ্গীদের লালন-পালন করে তাদের দিয়ে কোন কর্মকা- পরিচালনা করা- এগুলো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন নৌমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইসমত কাদের গামা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মিয়াজউদ্দিন খান, শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. সেলিনা আখতার, মাদারীপুর শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক খন্দকার খায়রুল হাসান নিটুলসহ অনেকে।
×