ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কার না ক্ষমতা সংহত করতে চান সৌদি যুবরাজ?

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১০ নভেম্বর ২০১৭

সংস্কার না ক্ষমতা সংহত করতে চান সৌদি যুবরাজ?

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত সপ্তাহে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজবংশে এবং রাষ্ট্রীয় পরিম-লে তার ক্ষমতা সুসংহত করছেন বলে রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা। এই লক্ষ্যে তিনি রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য ও মন্ত্রীকে গ্রেফতার, সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব বিস্তারের সব উদ্যোগই গ্রহণ করেছেন। রাজ পরিবারের সদস্য ও মন্ত্রীদের গ্রেফতারের কারণ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু রাজনীতি বিশ্লেষক ও সচেতন জনগণের মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, আসলে এটি প্রিন্স মোহাম্মদের দুর্নীতি বিরোধী তৎপরতা, না তার ভবিষ্যত নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে শত্রু নাশের পদক্ষেপ। একটি বিষয় সকলের কাছে পরিষ্কার যে, যুবরাজ মোহাম্মদ, যিনি সকলের কাছে এমবিএস নামে পরিচিত তিনি তার পিতার পর সৌদি বাদশাহ হতে যাচ্ছেন। প্রচলিত উত্তরাধিকার আইন লঙ্ঘন করে রাজ পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য এমবিএসকে যুবরাজ করায় সংশ্লিষ্ট পদ বঞ্চিত সকলের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হওয়াটাই স্বাভাবিক। যুবরাজ মুহাম্মদের পিতা অশীতিপর বাদশা সালমান (৮২) বার্ধক্যজনিত কারণে বা অসুস্ততার জন্য যদি আকস্মিক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন তবে রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রক্তাক্ত সংঘাতের রূপ নিবে বলে সর্বসম্মত ধারণা। সে কারণেই যুবরাজ মুহাম্মদ তার ভবিষ্যত পথ কণ্টকমুক্ত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিরোধী মনোভাবাপন্নদের সরিয়ে দেয়ার আয়োজন করেছেন। সৌদি রাজধানী থেকে প্রকাশিত ‘আল রিয়াদ’ নামে প্রকাশিত এক দৈনিকের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘সৌদি আরব এক নতুন অধ্যায়ের সন্ধিক্ষণে’। এতে বিস্তারিত ভাবে সরকারের সাফল্য ও উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই নিবন্ধে বলা হয়েছে সর্বস্তরের জনগণের জন্য সমতা, বিচার ও কল্যাণমূলক কাজের নিশ্চয়তা দিবে বর্তমান রাজ প্রশাসন। এখন থেকে বিচার পাওয়ার ন্যায্যতা নিয়ে রাজ পরিবারের সঙ্গে দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। বর্তমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এটি প্রমাণিত হয়েছে। এতে আরও পরামর্শ দেয়া হয় যে, দেশের উন্নয়নে সরকারকে শুধু তেল খনি নির্ভর অর্থনীতির ওপর ভরসা করলে চলবে না বরং নতুন অর্থনীতিক দিগন্ত ও সৃষ্টিশীল কাজের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে হবে। এই পত্রিকায় যুবরাজের প্রশংসা করে বলা হয় যে, তিনি সৌদি আরবকে মধ্যপন্থী ইসলামিক দেশে পরিণত করতে চান। সেই লক্ষ্যে নারী সমাজের গাড়ি চালনা, স্টেডিয়ামে দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকাসহ অন্যান্য বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ৩২ বছর বয়স্ক যুবরাজ মোহাম্মদ দেশের যুব সমাজকে তার প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন বা তাদের নৈতিক সমর্থন পেতে চাচ্ছেন। কারণ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সে দেশের শতকরা ৭০ জন যুব সম্প্রদায়ভুক্ত। এদেশের সমন্বিত শক্তি বা বিশাল সমর্থন পিতার অবর্তমানে তাকে রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে অনেকের বিশ্বাস। তবে এর বিপরীতে এক ভিন্ন মতও চালু আছে। কায়রো আল আহরাম সেন্টারের গবেষক সামেহ রাশেদ বলেছেন, যেভাবে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে সৌদি রাজনীতির ভবিষ্যত গতিপথ এতটা মসৃণ নাও হতে পারে। কেননা, রাজ পরিবারের যেসব প্রিন্সের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ভবিষ্যত বিপদের আশঙ্কায় যদি তারা একতাবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত ভাবে যুবরাজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তবে সব হিসাব নিকাশ উল্টে যেতে পারে। -ডয়েস ভেল ও নিউইয়র্ক টাইমস।
×