ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাগদাদের সঙ্গে ॥ সমঝোতা চায় কুর্দিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১০ নভেম্বর ২০১৭

বাগদাদের সঙ্গে ॥ সমঝোতা চায় কুর্দিস্তান

কুর্দী আঞ্চলিক সরকারের (কেআরজি) সাবেক প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি বলেছেন, তিনি বাগদাদের সঙ্গে সমঝোতা চান। গত মাসে তেলসমৃদ্ধ কিরকুক হাতছাড়া হওয়ার পর তিনি স্বাধীনতার দাবিতে অনেক নমনীয় হয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, কিরকুকসহ ইরাকের কুর্দী অধ্যুষিত অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বাগদাদের সেনা অভিযান সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আগে থেকেই জানত। আলজাজিরা ও নিউজউইক। ইরাক সরকারের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে দেশটির আধাস্বায়ত্তশাসিত কুর্দী অঞ্চলে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিতর্কিত গণভোট। স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনুষ্ঠিত ওই গণভোটকে অবৈধ ঘোষণা করে বাগদাদ। পরবর্তীতে ইরাকসহ প্রতিবেশী দেশগুলো কুর্দী অঞ্চলের ওপর আরোপ করে অবরোধ। কুর্দিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ইরাক সরকার। একই সঙ্গে বাগদাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইরান ও তুরস্ক স্বশাসিত কুর্দী অঞ্চলগামী ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। এর পরই শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থনে ২১ অক্টোবর সেনা অভিযানে তেলসমৃদ্ধ কিরকুক প্রদেশ নিয়ন্ত্রণে নেয় ইরাকী সেনাবাহিনী। নিউজউইককে দেয়া সাক্ষাতকারে বারজানি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে অন্ধকারে রেখে ইরানী শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থন নিয়ে ইরাকী সেনাবাহিনী কিরকুক অভিযান চালায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কোন সমর্থন ছাড়াই ২৫ সেপ্টেম্বর ইরাকের কুর্দী অধ্যুষিত অঞ্চলে অনুষ্ঠিত গণভোটে ৯৩ শতাংশ ভোটার স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে রায় দেয়। ১ নবেম্বর কেআরজির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করা বারজানি গণভোট দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছিলেন। নিউজউইককে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োচিত হয়েছে। কারণ কিরকুকসহ কুর্দিস্তানের বিভিন্ন এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাগদাদ যেভাবে এর জনসংখ্যা ও কাঠামো পরিবর্তন করছে, তাতে বোঝা যায় এটা তাদের পূর্বপরিকল্পনার অংশ। কুর্দী জনগণের বিরুদ্ধে আগে থেকে করা গোপন পরিকল্পনা বাস্তায়নের উদ্দেশ্যে গণভোটকে কেবলই একটা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে বাগদাদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পরপরই কেআরজির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কি বাঁক নিয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বারজানি বলেন, যথাপূর্বক সম্মানের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কেআরজির সম্পর্কের বিষয়ে বলতে চাই যে, আমাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কি-না এ নিয়ে আসলে আমি কিছুই বলতে চাই না। বারজানি আরও বলেন, কুর্দী পেশমার্গা বাহিনীর সহায়তা ছাড়া ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মসুলসহ অন্যান্য এলাকা থেকে ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গীদের বিতাড়ন করা সম্ভব হতো না। আইএসের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র ইরাকী বাহিনীকে দিয়েছে, সে অস্ত্র বাগদাদ নিজের জনগণের দিকে তাক করে আছে- এমন দৃশ্য দেখতে হবে তা কথনও ভাবিনি। এটা ছিল আমাদের জন্য এক ধরনের বিস্ময়। কুর্দিস্তান পার্টির প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়নের সদস্য সাদি পাইরে নামে কেআরজির এক সিনিয়র কর্মকর্তা আলজাজিরাকে বলেন, ইরাকী বাহিনীর কিরকুক অভিযানের পরিকল্পনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই নিশ্চিতভাবেই জানত। সাদি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে গণভোটের কারণে কুর্দী পেশমার্গা ও ইরাকী বাহিনীর সম্পর্কে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তার পরিণতিতে সংঘর্ষ শুরু হলে তা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইকে দুর্বল করবে। স্বাধীন কুর্দিস্তান সম্পর্কিত বিষয়াবলীর জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের লক্ষ্য অন্যদিকে সরে যেতে পারে এমন চিন্তা থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কুর্দী গণভোটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আইএসকে হটিয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইরাকের তেলসমৃদ্ধ শহর কিরকুক দখল করেছিল কুর্দী পেশমার্গা বাহিনী। এরপর থেকেই কিরকুকের তেল খনিগুলোর নিয়ন্ত্রণসহ এসব খনি থেকে উত্তোলিত তেল বিক্রির পুরো অর্থই চলে যেত কেআরজির ফান্ডে। গত আড়াই-তিন বছর আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল অবস্থায় ছিল কেআরজি। গত মাসে তেল খনিগুলোসহ কিরকুক আবার বাগদাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছে কেআরজি। কুর্দী বিচার বিভাগ ও সংসদের দায়িত্বে থাকা মাসুদ বারজানি বলেন, সাধারণ কুর্দীরা বাগদাদ এবং কুর্দী ফেডারেল সরকারের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ুক এমনটা চাইছে না। তিনি নিউজউইককে বলেন, আমাদের নীতি হচ্ছে সংলাপের আহ্বান জানানো, সংঘাতের সমাধান এবং ইরাকের সঙ্গে সংঘাত প্রতিরোধের শান্তিপূর্ণ উপায় খোঁজা। তিনি আরও বলেন, যতদিন কুর্দিস্তানের স্বায়ত্তশাসন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমরা ইরাকী সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর জন্য প্রস্তুত।
×