ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করে সফল সফর যুবাদের

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৯ নভেম্বর ২০১৭

শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করে সফল সফর যুবাদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এএফসি অনুর্ধ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে বড় জয় কুড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ যুব ফুটবল দল। তাজিকিস্তানের হিশর সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে তারা হারিয়েছে ৪-০ গোলে। ম্যাচের প্রথমার্ধেই সবগুলো গোল করে বিজয়ী দল। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়। ৭ পয়েন্ট তাদের। পক্ষান্তরে অনেক আগেই মূলপর্বে যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হওয়া শ্রীলঙ্কার এটা সমান ম্যাচে তৃতীয় হার। ১ পয়েন্ট নিয়ে তারা আসর শেষ করলো পাঁচ দলের মধ্যে তলানিতে থেকে। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি বলেন, ‘জিতেছি ঠিক আছে। তবে আমরা আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারতাম। প্রথমার্ধেই চার গোলে এগিয়ে যাই। বিরতির পর গোলসংখ্যা আরও বাড়াতে ছেলেদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটা হিতে বিপরীত হয়। গত ম্যাচের মতোই এবারও ছেলেরা দলীয়ভাবে না খেলে ব্যক্তিগতভাবে গোল করার চেষ্টার পুনরাবৃত্তি করে। ফলে দ্বিতীয়ার্ধে গোলের অনেক সুযোগ পেয়েও একটিও তা কাজে লাগাতে পারেনি। এই অর্ধে জাফর আর ফাহিমকে নামিয়েও কাজ হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা কমপক্ষে সাতটি গোলের চান্স মিস করেছি। এই গোলগুলো হলে উজবেক-তাজিক ম্যাচের ফল নিয়ে অনেকটা নির্ভার থাকতে পারতাম।’ রক্সি আরও বলেন, ‘আমরা পুরো ম্যাচে এতটাই আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছি যে শ্রীলঙ্কা দল মাত্র একটি গোল করার সুযোগ পায়। তাও ম্যাচের শেষদিকে (৮২ মিনিটে)। তারা ফ্রি কিক পায়। কিন্তু তাতে গোলরক্ষক প্রীতমের কোন সমস্যা হয়নি। হারলেও ওরা খেলেছে ফিজিক্যাল গেম, আর আমরা খেলেছি পাসিং গেম।’ রক্সি ধরেই নিয়েছেন, বাংলাদেশ মূলপর্বে উঠতে পারছে না। তাই আক্ষেপ করে বলেন, ‘গোল গড় না ধরলে আমরাও রানার্সআপ হতে পারতাম।’ শিষ্যদের নিয়ে রক্সির বিশ্লেষণ, ‘এদের প্রতি ভালমতো নজর দিলে নিঃসন্দেহে এদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল, আগামীতে এরাই অ-২৩ এবং সিনিয়র দলে খেলবে। এদের আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে হবে।’ ১২ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কোচ রক্সির বর্ণনা অনুযায়ী কর্নার পায় বাংলাদেশ। মাহবুবুর রহমান সুফিল কর্নার করেন। সেই বল লঙ্কার পোস্টে লেগে ফিরে এলে ফিরতি বলে শট নিয়ে গোল করেন বিশ্বনাথ ঘোষ (১-০)। ৩৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যায় তারা। রহমত মিয়া যে ক্রস করেন তা থেকে হেডে বল জালে জড়ান রিয়াদুল হাসান (২-০)। ৩৮ মিনিটে শুরু হয় ‘সুুফিল শো’। মাঝমাঠে বেশ কটি পাস খেলে প্রতিপক্ষের গোল সীমানায় হানা দেয় বাংলাদেশ। সৈকত মাহমুদ পাস দেন সুফিলকে। বাঁ পায়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একক প্রচেষ্টায় প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন সুফিল (৩-০)। ৪৫+১ মিনিটে (সংযুক্তি সময়) শেষ গোলটি করে বাংলাদেশ। আবারও মাঝ মাঠে বেশ কটি পাস খেলে তারা। বিপলু আহমেদের সেন্টার ধরেন সুফিল। আড়াআড়ি ও দ্রুতগতিতে দৌড়ে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে কৌণিক শটে গোল করেন সুফিল (৪-০)। শুধু ভাল খেললেই হয় না। এর জন্য দরকার সৌভাগ্যের পরশও। এএফসি অনুর্ধ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে এই পরশটাই পায়নি বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ জাতীয় ফুটবল দল। গোটা টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছে তারা। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম খেলায় শক্তিশালী-স্বাগতিক তাজিকিস্তানকে রুখে দিয়ে (০-০), পরের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেও ঘাম ঝরিয়ে হারায় মালদ্বীপকে (১-০)। তৃতীয় খেলায় হট ফেভারিট উজবেকিস্তানকে ৯৪ মিনিট (সংযুক্তি সময়) পর্যন্ত আটকে রেখে খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগে আত্মঘাতী গোল খেয়ে আক্ষেপের হার হয় লাল-সুবজ বাহিনীর (০-১)! মূলত এই দুভার্গ্যরে হারেই একপ্রকার বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় মাহবুব হোসেন রক্সির শিষ্যদের। তখন বাংলাদেশ দলের মূলপর্বে উত্তরণের জন্য কঠিন ও অসম্ভব এক সমীকরণ এসে দাঁড়ায়। এই দলকে বাংলাদেশের যুবারা সর্বশেষ হারিয়েছে এই আসরের বাছাইপর্বে, ২০১৫ সালে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘এ’ গ্রুপে ২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-০ গোলে। গোল করেছিলেন মান্নাফ রাব্বি এবং মাসুক মিয়া জনি। সিনিয়র দলের র‌্যাঙ্কিংয়েও লঙ্কানদের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ (বাংলাদেশ ১৯৬, শ্রীলঙ্কা ১৯৮)। বুধবারের ম্যাচে শক্তির নিরিখে বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল। জয়ের সম্ভাবনা তাদেরই ছিল বেশি। কিন্তু শুধু জিতলেই হতো না। তাকিয়ে থাকতে হতো তাদের ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই আরেক খেলার দিকে। মানে উজবেকিস্তান-তাজিকিস্তান ম্যাচের ফলের দিকেও। কামনা করতে হবে যেন উজবেকিস্তানের কাছে তাজিকিস্তান বেশি গোলের ব্যবধানে হারে। যদি তা না হয় তাহলে তাজিকিস্তানের শুধু ১-০ গোলে হারলেই চলবে। কিন্তু তার আগেই সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কমপক্ষে ১২-০ গোলের ব্যবধানে জিতে বসে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু তাদের চার গোলের বেশি দিতে পারেনি তারা। এ আসরে বাছাইপর্বের ১০ গ্রুপের সেরা ১০ দলের সঙ্গে সেরা ৫ রানার্সআপ ও একটি স্বাগতিক দেশ মিলিয়ে মোট ১৬টি দেশ এই আসরের চূড়ান্তপর্বে খেলার সুযোগ পাবে।
×