ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রনকির ব্যাটিং তা-বের পর তাসকিনের বারুদ বোলিং

রংপুরকে হারিয়ে প্রথম জয় চিটাগংয়ের

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৯ নভেম্বর ২০১৭

রংপুরকে হারিয়ে প্রথম জয় চিটাগংয়ের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অসাধারণ ব্যাটিং করলেন নিউজিল্যান্ডের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান লুক রনকি। ব্যাটিং তা-ব দেখিয়েছেন। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর তাসকিন আহমেদের বোলিং বারুদ রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং লাইনআপকে তছনছ করে দেয়। আর তাতে করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসরে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে প্রথম জয়ও পেয়ে যায় চিটাগং ভাইকিংস। রনকির (৭৮) দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে তাসকিনের (৩/৩১) গতির ঝড়ে ১১ রানে রংপুরকে হারায় চিটাগং। পরে ব্যাটিং করে জেতা যায়। সেই ধারণা যেন বদলে যেতে শুরু করেছে। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তবুও টস জিতে নিলেন ফিল্ডিং। কম রানে বেঁধে রাখা গেলে যে জয় সম্ভব। রনকির ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের পরও চিটাগংকে কম রানেই বেঁধে ফেলা গেছে। ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৬ রানের বেশি করতে পারেনি চিটাগং। এই রান অতিক্রম করে শক্তিশালী রংপুরের জেতা সম্ভব। তাই মনে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। পারতে দেননি তাসকিন। সদ্য বিবাহিত এ বোলার গতির ঝড় তুলেন। তাতে করে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে রংপুর। ২০ ওভারে ১৫৫ রানের বেশি করতেও পারেনি। রবি বোপারা সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ১৫৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৫৫ রান করেই জিতেছিল রংপুর। এবার ১৫৫ রানই করল। কিন্তু জয় আর আসল না। চিটাগং নিজেদের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হারলেও সিলেটে নিজেদের শেষ ম্যাচটিতে (নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ) জয় তুলে নেয়। তাতে সিলেট থেকে আজ একেবারে শূন্য হাতে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে না মিসবাহ উল হকের নেতৃত্বাধীন চিটাগং ভাইকিংস দলটিকে। চিটাগং যে রান করে তা অতিক্রম করতে গিয়ে অবশ্য শুরু থেকেই বিপত্তিতে থাকে রংপুর। ২০ রানে ২ উইকেট হারায়। এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। মোহাম্মদ মিঠুন ও রবি বোপারা মিলে (তৃতীয় উইকেটে ৩৬ রানের জুটি) এবং বোপারা ও শাহরিয়ার নাফীস মিলে (চতুর্থ উইকেটে ৪৯ রানের জুটি) দলকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যান। যখন ১৩তম ওভারে ১০৫ রান হয় রংপুরের, জিততে ৪৫ বলে ৬২ রান দরকার, এমন সময়ই তাসকিন দেখান ঝলক। ওভারটিতে টানা দুই বলে দুই উইকেট নেয়ার পর শেষ বলে একটি রান আউটও করেন। তিন বলে তিনটি উইকেট তাসকিনের জন্যই হয়। ওভারের চতুর্থ বলে শাহরিয়ারকে আউট করে দেন। একই ওভারের পঞ্চম বলে সামিউল্লাহ সেনওয়ারিকেও সাজঘরে পাঠান। ষষ্ঠ বলে বোপারাকে রান আউট করে দেন। তাতেই রংপুরের বারোটা বেজে যায়। এরপর যখন ১১৯ রানে গিয়ে শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরাকেও আউট করে দেন তাসকিন, রংপুরের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। ১০৫ রানে ছিল ৩ উইকেট। সেখান থেকে ১৪ রানে আরও ৪ উইকেট হারায় রংপুর। এরপর আর একটি উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি। শেষদিকে ১২ বলে জিততে দরকার ছিল ২৭ রান। সেখান থেকে লাসিথ মালিঙ্কা ছক্কা-চার হাঁকিয়ে ৬ বলে জিততে ১৬ রানে নিয়ে আসেন। কিন্তু শেষ ওভারে চার রানের বেশি নেয়াই যায়নি। রংপুরের ব্যাটিং শুরুর আগে রনকিকে নিয়েই শুধু চর্চা হয়। সবদিকে রনকিকে নিয়েই আলোচনা চলে। কি দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন লুক রনকি। প্রথম ওভারেই মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দুই ছক্কা হাঁকান। সেই যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু করেন, থামেন ৭৮ রানে গিয়ে। রবি বোপারার বলে জিয়াউর রহমানের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৭ চার ও ৭ ছক্কায় এই রান করেন রনকি। তার অসাধারণ মারমুখি ব্যাটিং যেন বিপিএলে অন্য মাত্রা এনে দিল। প্রথম ওভারে মাশরাফির বলগুলো বাউন্ডারি সীমানার ওপর দিয়ে হাঁকানোর পর সোহাগ গাজীর করা দ্বিতীয় ওভারেও তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান রনকি। তৃতীয় ওভারে তো এমন ব্যাটিং লীলা দেখান, সবাই যেন অবাক হয়ে থাকেন। নাজমুল ইসলামের করা তৃতীয় ওভারে তিন ছক্কা ও একটি চার হাঁকান। এমনই ব্যাটিং করতে থাকেন যে মাত্র ১৯ বলেই হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। বুধবার দিনের ম্যাচ পর্যন্ত এ আসরে রনকিই এক ম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করেন। এ আসরে আবার দ্রুততম হাফসেঞ্চুরিও করেন। ৪টি চার ও ৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করেন রনকি। সব আসর মিলিয়ে তৃতীয় দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি হলো রনকির। এর আগে ২০১২ সালে বরিশাল বার্নার্সের হয়ে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে পাকিস্তানে আহমেদ শেহজাদ ১৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। যা এখন পর্যন্ত বিপিএলের ইতিহাসের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি হয়ে আছে। গত আসরে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ঢাকা ডায়নামাইটসের সেকুগে প্রসন্ন ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। যা কিনা দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। রনকি দুইজনকেও টপকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু পারেননি। তার এ দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই চিটাগং জয়ের ভীত গড়ে। ৯৯ রানে রনকি আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল রান ২০০ রানের কাছাকাছি হয়ে যাবে। ৮.৫ ওভারেই যে ৯৯ রান হয়ে যায়। কিন্তু রনকি আউট হতেই রানের চাকা দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরও ১৬৬ রান যে হয় তাতেই জয় আসে। তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়েই সেই জয় আসে। তাইতো এমন ব্যাটিং করা রনকিকে ছাপিয়ে তাসকিনকেই ম্যাচের নায়ক করা হয়। স্কোর ॥ চিটাগং-রংপুর ম্যাচ চিটাগং ভাইকিংস ইনিংস ১৬৬/৪; ২০ ওভার (রনকি ৭৮, সৌম্য ৭, মুনাভিরা ২০, মিসবাহ ৩১*, রিচ ১০, বিজয় ১৭*; বোপারা ২/১৪)। রংপুর রাইডার্স ইনিংস ১৫৫/৮; ২০ ওভার (চার্লস ১, জিয়াউর ১১, মিঠুন ২৩, বোপারা ৩৮, শাহরিয়ার ২৬, সেনওয়ারি ০, পেরেরা ১১, মাশরাফি ১৩, সোহাগ ১১*, মালিঙ্গা ১৪*; তাসকিন ৩/৩১, রিচ ২/২৬)। ফল ॥ চিটাগং ভাইকিংস ১১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তাসকিন আহমেদ (চিটাগং ভাইকিংস)।
×