ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির ঘটনা নিয়ে উত্তাপ কমছে না

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৯ নভেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির ঘটনা নিয়ে উত্তাপ কমছে না

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীতে হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন আর বক্তৃতাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সৃষ্টি হয়েছে সংঘাতময় পরিস্থিতির। ইতোমধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে গেছে। নতুন নিয়মে কর ধার্য করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তবে তার অভিমত, কর্পোরেশন নিজের ইচ্ছামত কর আরোপ করার ক্ষমতা রাখে না। বরং মন্ত্রণালয়ের জারি করা করবিধি অনুযায়ী কাজ করে মাত্র। অপরদিকে, বর্ধিত হারে কর আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রয়েছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। তবে নতুন নিয়মে কর আরোপের ক্ষেত্রে আপীলের নিয়ম রেখেছে কর্পোরেশন। সে অনুযায়ী কোন কোন ক্ষেত্রে হোল্ডিংয়ের এসেসমেন্ট ভ্যালু কমছে প্রায় ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। আবার স্বল্প আয়ের হোল্ডারদের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় সর্বনিম্ন টোকেন ট্যাক্স ধার্য হয়েছে ৫১ টাকায়। সব মিলিয়ে গৃহকর আদায়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে সুনির্দিষ্ট কোন আইন কিংবা নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, একটি সার্কেলে ১৬৪ হোল্ডারের আপীলে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার এসেসমেন্ট ভ্যালু নেমে এসেছে ৭০ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। কমেছে ৭৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। কর্পোরেশন বলছে, বিধিবদ্ধতার মধ্যে থেকেও কর ব্যবস্থাকে যতটা সম্ভব সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এর জন্য গৃহ মালিকদের অবশ্যই আপীলে যেতে হবে। বড় ধরনের ‘কর ছাড়’ মনে হলেও আন্দোলনকারী সংগঠন বলছে, এটা অনেকটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ‘বিরাট মূল্যহ্রাস’ স্টাইলে প্রতারণার মতো। কেননা, মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে হ্রাস করে যে পর্যায়ে আনা হচ্ছে সেটাও পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি। চট্টগ্রাম নগরীতে গৃহকর আদায়ের ক্ষেত্রে এবার যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। প্রকৃত অর্থে সুনির্দিষ্ট কোন আইন প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। আগে থেকেই নগরীতে গৃহকর ধার্য হতো ঘরের আয়তন অনুযায়ী। এবার সে আয়তনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাড়ার বিষয়টিও। অর্থাৎ গৃহকর নির্ভর করছে কোন বাড়ি থেকে কি পরিমাণ ভাড়া আদায় হয় তার ওপর। এ বিষয়টিও যৌক্তিক নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। কেননা, কত টাকা ভাড়া আদায় হয় সে প্রকৃত তথ্য ক’জন বাড়ির মালিকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। আর আয়তন বা বর্গফুটের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হলেও সমস্যা। কেননা, সুযোগ সুবিধা এবং পরিবেশভেদে একেক এলাকায় বাড়ি ভাড়া একেক রকমের। তাছাড়া এমন অনেক বাড়ি এবং ফ্ল্যাট নির্মিত হয়ে আছে যেগুলোতে ভাড়াটিয়া কিংবা বসবাস নেই। সেক্ষেত্রে এ ধরনের বাড়িগুলোর ওপর কর ধার্য বা আদায় কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নটিও এসে যায়। সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর আদায়ের পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠন। এ আন্দোলনের পক্ষে রয়েছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আরেক সাবেক মেয়র এম মঞ্জুর আলমও আন্দোলনকারীদের পক্ষে, যদিও তাঁর ভূমিকা অতটা জোরালো নয়। আন্দোলনকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চিঠির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনা কামনা করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৪ ডিসেম্বর নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচীও রয়েছে। অপরদিকে, অবস্থানে অনড় রয়েছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, মেয়র কিংবা সিটি কর্পোরেশন কর আরোপের ক্ষমতা রাখে না। এর জন্য মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট করবিধি রয়েছে। তবে যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ পরিষদ জনগণের নির্বাচিত সেহেতু জনদাবি বিবেচনায় রেখে সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা রয়েছে। তবে এর জন্য অবশ্যই আপীল করতে হবে। বাড়ির মালিকদের আপীলে কমছে এসেসমেন্ট ভ্যালু এবং কর। এর মাধ্যমে কর্পোরেশন বাহবা কুড়ালেও কোন নিয়মে ভ্যালু এবং গৃহকর কমছে সেই প্রশ্নের উত্তর অজানা। যদি সুনির্দিষ্ট নিয়ম থেকেই থাকে তাহলে কর্পোরেশন তা কমায় কীভাবে? আইন কিংবা বিধিতে এ ধরনের আপীলের মাধ্যমে কর হ্রাসের কোন সুযোগ রয়েছে কিনা? বাড়ির মালিকরা জানাচ্ছেন, তারা আইন কানুন বিষয়ে খুব বেশি অবগত নন। তবে আরোপিত নিয়মে এসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়িয়ে আবার আপীলের মাধ্যমে তা কমানোর যৌক্তিকতাও দেখেন না। সিটি কর্পোরেশনের করা বিভিন্ন ভবনের এসেসমেন্ট ভ্যালু নিয়ে আপত্তি রয়েছে বাড়ির মালিকদের। এরমধ্যে জমা পড়েছে প্রায় ৫৫ হাজার আপীল। মোট আটটি সার্কেলে ভাগ করে এ আপীলগুলোর নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তিনমাসের মধ্যে সকল আপীলের নিষ্পত্তি সম্ভব হবে বলে আশা করছে কর্পোরেশন।
×