ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল খালেক মন্টু

ভূমির সদ্ব্যবহার

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৯ নভেম্বর ২০১৭

ভূমির সদ্ব্যবহার

পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালের তুলনায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে কৃষিবহির্ভূত জমির পরিমাণ বেড়েছে ৫ শতাংশ। বর্তমানে মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমি মাত্র ০.১৫ একর। অথচ কৃষি উৎপাদনে সবার আগে প্রয়োজন মাটি বা জমি যা সসীম। ইচ্ছা করলেও বাড়ানো সম্ভব নয়। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য অনেক বেশি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজনীয় জমির অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। কৃষিজমির অভাব উৎপাদনের ওপর এক মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া তার সমাধান সম্ভব নয়। ক্রমবর্ধমান কৃষি উৎপাদনের প্রধান বাধা কৃষিজমির সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সবার আগে ভাবতে হবে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নতুন বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিল্পের প্রসার এবং নগরায়ণের জন্য ক্রমেই কৃষিজমি চলে যাচ্ছে চাষাবাদের বাইরে। কৃষিজমি অকৃষিকাজে ব্যবহার এবং জমির খণ্ডবিখণ্ডতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এ সমস্যা সমাধানের কোন পথ খোলা নেই। গ্রামীণ এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বাসস্থান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া জরুরী। অতীতে নদীকেন্দ্রিক ছিল মানুষের বসবাস। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। কারণ নদীই ছিল ভারি ও বড় ধরনের বাহন বা যোগাযোগের একমাত্র পথ। তাই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল শহর-বন্দর–গ্রাম। কিন্তু বর্তমানে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা এত উন্নত হয়েছে যে নদী তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই এখন সড়ককেন্দ্রিক বসবাস- বাজার- শহর গড়ে উঠছে জ্যামিতিক হারে। যেখানে পাকারাস্তা সেখানেই গড়ে উঠছে বসতবাড়ি ও শহর। এ কারণে আবাদী জমির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার কমিটির সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, (১) চাষযোগ্য জমিতে কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর তৈরি করা যাবে না। কৃষিজমি যতটুকু সম্ভব কৃষিকাজে ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জমির প্রকৃতিগত কোন পরিবর্তন আনা যাবে না। ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেশের ভূসম্পদসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। দেশের ভূসম্পদ কৃষি, মৎস্যসম্পদ, বন, ঘরবাড়ি, সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো, পর্যটন ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে ভূমি ব্যবহারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভূমির গুণগতমানের পরিবর্তন হচ্ছে, ভূমির এক ধরনের ব্যবহার থেকে অন্যধরনের ব্যবহারে রূপান্তর ঘটছে। এতে আর্থ-সামাজিক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যত শীঘ্রই সম্ভব সরকারী হস্তক্ষেপে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করে সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সিরাজগঞ্জ থেকে
×