ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপিএল জুয়ায় খুন

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৯ নভেম্বর ২০১৭

বিপিএল জুয়ায় খুন

রাজধানীর বাড্ডায় বিপিএল খেলা নিয়ে বাজিতে বাধা দেয়ায় তরুণ নাসিম আহমেদের খুন হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, সিলেটে বিপিএল শুরু হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় কয়েক যুবক নাসিমদের বাসার সামনে একটি দোকানে বসে নিয়মিত জুয়ার আসর বসাত। বিষয় ছিল টিভি দেখতে দেখতে চার-ছক্কার মার, উইকেটের পতন, হারজিতসহ বিভিন্ন উত্তেজনাকর মুহূর্তে বাজি ধরা। স্থানীয় বখাটেদের মধ্যে এ নিয়ে হৈচৈ, বাগবিতণ্ডা, তর্ক-বিতর্কের পর্যায়ে বাধা দিতে গেলে তাদের সঙ্গে ঝগড়া বেঁধে যায় নাসিমের। এক পর্যায়ে তা গড়ায় হাততোলা থেকে হুমকি-ধমকিতে। বাজির পক্ষের কয়েকজন রীতিমতো হুমকি দেয় নাসিমকে প্রাণে মেরে ফেলার। পরে মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা ও মীমাংসার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়। তবে বখাটেদের প্রতিশোধস্পৃতা এতটাই তীব্র ছিল যে, তারা ধৈর্য ধরতে রাজি হয়নি। সোমবার সকালে নাসিম বাসার বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর এলোপাতাড়ি ছুরি চালায় কয়েকজন। নিহত নাসিম ছিলেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মাত্র কয়েক মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। বখাটেরা ঘটনার আগের দিন নাসিমের বাবাকেও হেনস্থা করতে ছাড়েনি। ক্রিকেট, ফুটবলসহ যে কোন খেলায় জয়-পরাজয়সহ উত্তেজনা, হৈ-হুল্লোড় বাদানুবাদ, তর্ক-বিতর্ক থাকবেই। তাই বলে কথায় কথায় বাজি ধরা, জুয়া খেলা ইত্যাদি প্রত্যাশিত নয় কোন অবস্থাতেই। প্রকাশ্যে এসব নিষিদ্ধসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। তাই বলে বাজি, জুয়া ইত্যাদি যে বন্ধ থাকেনি বড্ডার খুনোখুনী এরই জ্বলন্ত প্রমাণ। বিপিএল নিয়ে বাজির খবর আছে দেশজুড়েই। তবে উত্তেজনা কোন্ পর্যায়ে উঠলে মানুষ জিঘাংসাপ্রবণ হয়ে হত্যায় মেতে ওঠে, তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। এ থেকে দেশের বর্তমান সামাজিক অব্যবস্থা, অরাজকতা, অস্থিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মস্তানি ও পেশীশক্তির উত্থান, বেপরোয়া মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা মেলে। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও এর প্রচ্ছন্ন কারণ হতে পারে। বিলম্বিত বিচার এবং আদৌ বিচার না হওয়ার অপসংস্কৃতিও কম দায়ী নয় কোন অংশে। গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে রাজধানীতে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু বখাটে, মস্তান বা বন্ধু-বান্ধবরাই নয়, ঘনিষ্ঠ স্বজন- স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাও আছে। ধন-সম্পত্তির ভাগাভাগি থেকে পরকীয়া, প্রেম ও বন্ধুত্বে অবিশ্বাস ও ভাঙ্গন এবং সর্বশেষ বিপিএল জুয়ায় হত্যাকাণ্ড কোন কিছুই হিসাবের বাইরে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা আর কত নিচে নামব? সামান্য ও তুচ্ছ কারণে একজন আরেকজনকে খুন করব? এই অধঃপতিত দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? সামাজিক অস্থিরতা নিরসন হবে কোন্ পথে, কিভাবে, কোন্ উপায়ে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বর্তমানে জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সমাজতত্ত্ব¡বিদ ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি, মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট, টিভি-পর্নো আসক্তি এর জন্য কতটা দায়ী তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। সার্বিকভাবে শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিবাচক দিকের তুলনায় নেতিবাচক দিক কেন প্রাধান্য পাচ্ছে, তাও বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক। এর পাশাপাশি জুয়া, বাজিসহ যে কোন ধরনের নিষিদ্ধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রবল জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও এক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে। যে কোন অপরাধমূলক ঘটনার দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নাসিম আহমেদের অকাল মৃত্যুতে আমরা তার স্বজনদের জানাই গভীর সমবেদনা।
×