ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা প্রতারকচক্র

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৮ নভেম্বর ২০১৭

যশোরে কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা প্রতারকচক্র

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাত করে পাঁচ বছর আত্মগোপনে রয়েছে যশোরের যমুনা মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ লিমিটেডের সভাপতি, সম্পাদকসহ ডজনখানেক প্রতারক। টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় চার শতাধিক গ্রাহক দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এদিকে ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে আদালতে। জানা গেছে, ২০১১ সালে যমুনা মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে মনিরামপুরের চাকলা গ্রামের মৃত সেফায়েত উল্লার ছেলে মামুন উর রশিদ ও মাগুরা সদর উপজেলার বামনহাটির আশরাফ আলী। বহু বিতর্কিত এ দুই ব্যক্তির মধ্যে আশরাফ আলী সম্পাদক আর সভাপতি সেজে বসেন মামুন উর রশিদ। মামুন উর রশিদের ছেলে আশিক পারভেজ পলাশ, স্ত্রী আঞ্জুমানারা খাতুন, সম্পাদক আশরাফ আলীর স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌসী, শাশুড়ি শামসুন্নাহার রুবি ও শ্যালক রাশেদুল ইসলামসহ আরও কয়েক আত্মীয় নিয়ে দুই পরিবারের পারিবারিক পকেট কমিটি গঠন করা হয়। তারা প্রচার করে প্রতিষ্ঠানটি সরকার অনুমোদিত একটি সমবায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এরপর মাসে এক লাখ টাকায় এক হাজার সাত শ’ টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করে আমানত গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী আমানত নেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী যদি কোন আমানত প্রদানকারী তার টাকা আর রাখতে না চান তাহলে আবেদন করলে ৯০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেবে যমুনা মাল্টিপারপাস। কয়েক বছর নানা রঙ্গিন প্রলোভন প্রচার করে ২০১৩ সালের শেষের দিকে কোটি টাকা হাতিয়ে গা-ঢাকা দেয় মামুন ও আশরাফ গং। তারা নিজেদের প্রতারণা ঢাকতে চারবার যমুনা মাল্টিপারপাসের অফিস বদল করে। প্রথমে যশোর শহরের আরএন রোডে, পরে পাশের একটি ভবনে, এরপর বারান্দিপাড়া রাঙ্গামাটি গ্যারেজ মোড় ও শেষে কেশবলাল রোডে আস্তানা গাড়ে। এরপর ৪শ’ ৩৯ সদস্যকে পথে বসিয়ে গা-ঢাকা দেয় ওই চক্রটি। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়। মামলাগুলো পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করেছে। আর উপজেলা সমবায় অফিস এ ব্যাপারে পৃথক তদন্ত করেছে। লগ্নিকারীদের অনেকের দাবি, কমিটির এক কর্মকর্তাকে হাতের নাগালে পেলেও তিনি ছল-চাতুরি করে পুলিশ ও সমবায় অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করছে। তদন্তে প্রমাণ হয়েছে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ছিল মাত্র ৪শ’ ৪১ টাকা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন শহরের খড়কীপাড়ার মাওলানা শাহ আব্দুল করিম রোডের তাহাজ্জত হোসেন জানান, পালিয়ে থাকা মামুন উর রশিদ, ছেলে আশিক পারভেজ পলাশ, স্ত্রী আঞ্জুমানারা খাতুন, সম্পাদক আশরাফ আলী, তার স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌসী, শাশুড়ি শামসুন্নাহার রুবি ও শ্যালক রাশেদুল ইসলাম তার মামলার আসামি। ওই চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ, সমবায় অফিস ও আরেকটি সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে। সব প্রতিবেদনেই ওই চক্রের পারিবারিক কমিটির মুখোশ খুলে গেছে। মাঝে একবার পুলিশী চোখ ফাঁকি দিয়ে আদালতে গোপনে হাজির হলে মামুন উর রশিদ ভর্ৎসনার শিকার হয়। বিচারক তাকে ধমকও দেন। এ সময় আইনজীবীর আইনী মারপ্যাঁচে জামিন নিয়ে আবার গা-ঢাকা দেয়। অন্য লগ্নিকারীদের দাবি, সভাপতি আশরাফের স্ত্রী যশোরেই অবস্থান করছে।
×