ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যের ফাঁদে শিক্ষা!

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ নভেম্বর ২০১৭

বাণিজ্যের ফাঁদে শিক্ষা!

অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ। শিক্ষিত হয়ে ওঠার আগ্রহ এখন নিম্নবিত্তের মধ্যেও ব্যাপক রূপ লাভ করেছে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার স্বপ্ন দেখে এখন সর্বস্তরের মানুষ। নিজে লেখাপড়া না জানলেও সন্তানকে শিক্ষিত মানবে উন্নীত করার আকাক্সক্ষা তীব্র হয়ে উঠছে নিরক্ষর মানুষের মধ্যেও। তার সন্তান কি শিখছে, কোথায় শিখছে, আর এই শিখার পেছনে ব্যয় কত। এখন ঢাকার ভাল কোন স্কুলে ভর্তির জন্য লাগে কয়েক হাজার টাকা। রয়েছে শিক্ষা ব্যয়ের নামে শিক্ষা উপকরণ ও কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টিও। বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের মতো বাড়ছে শিক্ষা উপকরণের দামও। এই ব্যয়ের খাতগুলো হলো ভর্তি ফি, ইউনিফর্ম খরচ, সেশন চার্জ, টিউশন ফি/পরীক্ষার ফি, প্রাইভেট কোচিং গাইড, স্কুলে যাতায়াত খরচসহ টিফিন খরচ। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক। প্রায় সরকারী ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ কোটির বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। গ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা শহরের চেয়ে অনেক বেশি। তবে শহরের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা বেসরকারীভাবে পরিচালিত। চটকদার নামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন নিয়মের ধার ধারে বলে মনে হয় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছেমতো তা নির্ধারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের তা মেনে নিতে বাধ্য করে। জানা গেছে, সারা দেশে কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ৬৫ হাজার। এগুলোতে লেখাপড়ার খরচ সরকারী প্রাথমিক স্কুলের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। এসব স্কুলের পরিবেশ ও শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। ইংরেজী মাধ্যমে পাশাপাশি উচ্চহারে ফি নেয়ার প্রবণতা রয়েছে বাংলা মাধ্যমেও। রাজধানীর বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়ন ফি ও অগ্রিম বেতন ও শিক্ষা উপকরণের নামে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার টাকা। অথচ শিক্ষায় সরকারের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। রয়েছে নানা অর্জনও। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বছরের শুরুতে বিনামূল্যের বই দেয়া হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি-মেধাবৃত্তি, শিক্ষার ভাল পরিবেশের জন্য আধুনিক ভবন, কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষা উপকরণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের প্রশ্ন, সরকারের এত উদ্যোগ ও এত টাকা ব্যয়ের পরও কেন অভিভাবকদের আয়ের একটা সিংহভাগ ব্যয় করতে হবে সন্তানের শিক্ষায়? বাংলাদেশে শিক্ষা যেন বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে। বলা যায় বাণিজ্যের ফাঁদে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। দেশে শিক্ষার মান উন্নত হলেও শিক্ষা ব্যয় ক্রমশ বাড়ছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষদের বিশেষ করে শিক্ষা উপকরণের কথা বলতেই হবে। এই উপকরণের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীকে তথা তার অভিভাবককেই করতে হয়। সচ্ছল অভিভাবকদের পক্ষে যে কোন অঙ্কের ফি বা উপকরণের ব্যবস্থা করা সহজতর হলেও বেশির ভাগ অভিভাবকের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়। আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও সবার জন্য সমান হতে পারেনি। টাকার অঙ্কে নির্ধারিত হয় মানসম্মত শিক্ষা। শিক্ষার নামে এই ধরনের অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরী। সবার জন্য নিশ্চিত হোক শিক্ষার অধিকার।
×