ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরব কোন পথে?

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ নভেম্বর ২০১৭

সৌদি আরব কোন পথে?

প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক যে, সৌদি আরব কোন্ পথে যাচ্ছে। রক্ষণশীল আবরণ সরিয়ে উদারপন্থী ও উন্মুক্ত সৌদি গড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে, সে পথ পরিক্রমায় বেড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। সৌদি নেতৃত্ব সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা সংহত করার লক্ষ্যে এ যাবতকালের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে একসঙ্গে ১৭ জন জ্যেষ্ঠ যুবরাজসহ অনেককে। দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন এবং আরও বেশ ক’জন সাবেক মন্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। সৌদি আরব সারাবিশ্বের কাছে রক্ষণশীল দেশ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরেই পরিচিত। দেশের রক্ষণশীল কিছু প্রথা ভেঙ্গে ইসলামী উদারীকরণের, সমাজ সংস্কারের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ভবিষ্যত বাদশাহ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দেশ থেকে মৌলবাদী ইসলামী আদর্শ তথা ওয়াহাবী মতবাদ থেকে উদারপন্থী ও উন্মুক্ত সৌদি গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। মুসলিম বিশ্ব এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে নিশ্চয়। কিন্তু এ পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজতন্ত্রে ব্যাপক সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা ক্রমশ তীব্র হয়েছে। গত রবিবার ১৭ প্রিন্স, ৪ মন্ত্রী ও অনেক সাবেক মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর দেশটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এরা ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন। এই গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা আগেই দেশটিতে নতুন একটি দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করা হয় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ঘটানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তেলের দাম হ্রাস পাওয়ায় দেশটির আর্থিক অবস্থা সুবিধাজনক পর্যায়ে নেই। দুর্নীতিবিরোধী এ পদক্ষেপ সৌদির মতো কট্টর ও উগ্র ওয়াহাবী মতাদর্শের রক্ষণশীল সমাজে মধ্যপন্থার ইসলামকে আদৌ প্রতিষ্ঠা পেতে দেবে কিনা এবং একইসঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কারের কারণ সৌদি রাজপরিবারসহ সমাজে অভ্যন্তরের বিভেদ মিটিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে চলা অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠন করতে পারবেন কিনা এটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া দেশটির অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক বেশ গুরুত্বপূর্ণদের গ্রেফতারের কারণে দেশটির রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটছে। গ্রেফতারের ঘটনা রাজতন্ত্রের অভিজাতদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে স্বাভাবিকভাবেই। এতদিন ধরে যে বয়োজ্যেষ্ঠ অনুগতরা দায়মুক্তি ভোগ করে আসছেন, তারাও শঙ্কিত। গ্রেফতার হওয়া অনেকেই এক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। তারা এই পরিবর্তন সহজে মেনে নেবেন না বলে ধারণা করা যায়। রাজকীয় ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলক বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তবে শাসকরা বলছেন, এই গ্রেফতারি অভিযানের লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্রের সরাসরি কর্মকা-ের ধারা বদলে দেয়া। অনেকে আবার ভিন্নমত দমনের খোলামেলা পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। মনে করা হচ্ছে, উচ্চাভিলাষী যুবরাজ দেশটির রাষ্ট্রীয় জীবনের সবক্ষেত্রেই নিজের কর্তৃত্বের ছাপ রাখতে চাইছেন বলেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা শুরু হয়েছে। এতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর যুবরাজ মোহাম্মদের নিয়ন্ত্রণ আরও সংহত হতে যাচ্ছে। অনেকটা আকস্মিকভাবেই যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হলো, তাতে স্পষ্ট হচ্ছে যুবরাজ মোহাম্মদকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। পথটি বেছে নিয়েছেন তার পিতা বাদশাহ সালমান বিন আজিজ। যুবরাজ মোহাম্মদের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমনে যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে যে কাউকে গ্রেফতার করা ও দমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এই কমিটির লক্ষ্য জনগণের জানমালের সুরক্ষা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান। এমনটাও বলা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন অভিযানে সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক চুক্তিগুলো আরও স্বচ্ছতা আনার দায়িত্ব এখন শাসকগোষ্ঠীর। দেশকে দুর্নীতিবাজ মুক্ত করতে তাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। মার্কিন বলয়মুক্ত হওয়ার পর সৌদি আরব রাশিয়ার সঙ্গে গাটছড়া বাঁধা হয়েছে। রাজতন্ত্রে যে ধাক্কা লেগেছে, তার রেশ সহজে মিলিয়ে যাবে না। বরং উত্তরোত্তর এর বিস্তার ঘটতে পারে। খুনোখুনির পথে যেন না যায় রাজপরিবার, অন্যথায় তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। ঐতিহ্যকে ভাঙ্গার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন বর্তমান বাদশাহ তাতে সফল হতে হলে আরও সুচিন্তিত ব্যবস্থা নিতে হবে। সৌদি আরব অস্থিরতামুক্ত থাকুক। রক্ষণশীলতা ও দুর্র্নীত থেকে সরে আসার পদক্ষেপ বিশ্ব মুসলিম দেশগুলোতে আশার সঞ্চার করবেই।
×