ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ১২ নবেম্বর সোহ্্রাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে চায় ॥ ফখরুল

টিভি ক্যামেরায় চেহারা দেখাতে গিয়ে দু’পক্ষের হাতাহাতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ নভেম্বর ২০১৭

টিভি ক্যামেরায় চেহারা দেখাতে গিয়ে দু’পক্ষের হাতাহাতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে ১২ নবেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান। উল্লেখ্য, সিপিএ সম্মেলনের কারণে এবার ৭ নবেম্বর উপলক্ষে শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজার জিয়ারত করতে যায়নি বিএনপি। আর এ নিয়ে বিএনপি তিনবার সমাবেশ করার তারিখ পরিবর্তন করে। প্রথমে তারা ৮ নবেম্বর সমাবেশ করার কথা বলে। এর পর ১১ নবেম্বর সমাবেশ করার কথা জানায়। এদিকে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে টেলিভিশনে চেহারা দেখাতে নেতার পাশে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন সমাপ্তি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের মধ্যে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি ও পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় দ্রুত বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা পাশের কক্ষে চলে যান। পরে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাাদক আবদুস সালাম আজাদ, দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি এ মুহূর্তে কোন সংঘাতপূর্ণ কর্মসূচীতে যাবে না। তবে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই সিপিএ সম্মেলনের দোহাই দিয়ে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচী পালনে বাধা দিয়েছে। চেয়ারপার্সনের উপস্থিতিতে ৭ নবেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে প্রতি বছর জিয়ার মাজারে আমরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করি। কারণ, এটি দেশের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এবার আমাদের সে সুযোগ থেকে সরকার বঞ্চিত করেছে। এটা সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছে। সরকার জিয়াউর রহমানের কবরের জায়গাটা বাদ দিলেও পারত। কারণ সিপিএ সম্মেলন ওই দিকটাতে খুব বেশি ইফেক্ট কিন্তু করে না। এ সরকার এ ধরনের কাজ করেই আসছে। তারা আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। ফখরুল বলেন, ৭ নবেম্বর উপলক্ষে আমরা সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চাই। বিভিন্ন কারণে সরকার আমাদের অনুমতি দেয়নি। এখন আমরা ১২ নবেম্বর সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি সরকার সমাবেশ করতে আমাদের সহযোগিতা করবে। অন্যথায় প্রমাণিত হবে তারা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নবেম্বর দেশের মানুষের যে রাজনীতি, সে রাজনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছিল। একাত্তর সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ করে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সে স্বাধীনতাকে সুসংহত করার একটা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ এই দিনটিতে নিয়েছিল। এই দিনে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এ কারণে দিনটিকে আমরা সব সময় স্মরণ করে এসেছি। দেশে বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা যিনি পুনরায় প্রবর্তন করেছেন, সেই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে প্রতি বছর এ দিনটিতে আমরা যাই। দুর্ভাগ্যক্রমে এবারই প্রথম আমরা সে অধিকারটুকু থেকেও বঞ্চিত হয়েছি। সিপিএ সম্মেলনের কারণে সংসদ ভবন এলাকায় বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে মহানগর পুলিশ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে প্রধান বিচারপতিকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কায়দায় ভিন্ন মোড়কে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার চেষ্টা করছে সরকার। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় আজ দেশে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফখরুল বলেন, ঢাকায় অংশ নেয়া কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দেশগুলোকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকার বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবে আমরা পাবলিকলি কোন বক্তব্য এখন পর্যন্ত দেইনি। আমরা ইতোমধ্যে তাদের জানিয়েছি যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কী অবস্থা, তা বিভিন্নভাবে আমরা জানিয়েছি। সোমবারও কানাডার একটি পার্লামেন্টারি পার্টির যারা এসেছেন এখানে, তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। বুধবার মালয়েশিয়ার সংসদীয় দল সাক্ষাত করবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে। এছাড়া অনানুষ্ঠানিকভাবেও দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রায় সব দেশকে জানানো হয়েছে। আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ সংসদ জনগণের নির্বাচিত সংসদ নয়, তাই এ সংসদকে আমরা বৈধ মনে করি না। এ সংসদে যে আইনগুলো পাস করা হচ্ছে, তার বৈধতা কতটুকু আছে তা ভবিষ্যত বলে দেবে। আর এ সংসদে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তা কখনই জনগণের পক্ষের সিদ্ধান্ত নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়শ্বের চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ।
×