সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ মহান অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব সোমবার শেষ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে ৪, ৫, ৬ নভেম্বর ২০১৭- এই তিন দিনের উৎসব আয়োজন করে ৩৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন সাংস্কৃতিক পর্ষদ’। এর আগে, গত ৪ নবেম্বর’২০১৭ শনিবার বিকেল ৪টায় উৎসবের শুরুতেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সড়কদ্বীপে গিয়ে শেষ হয়। এরপর উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক পর্ষদের আহ্বায়ক হায়দার আনোয়ার খান জুনো। আলোচকরা বলেন, একশ’ বছর আগে ১৯১৭ সালের ৭ নবেম্বর (রুশ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর) লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লব ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার বছরের শ্রেণী বিভক্ত শোষণভিত্তিক সমাজের অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতন্ত্র। বক্তারা আরও বলেন, সোভিয়েত বিপ্লব শুধুমাত্র উৎপাদন সম্পর্কের বা মালিকানার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণের অবসান ঘটিয়েছিল তা-ই নয়; শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, ক্রীড়া সকল ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছিল। এক অতি উন্নত মানবিক সাংস্কৃতিক মানসম্মত সমাজ গঠন করেছিল এই বিপ্লব।
৫ নবেম্বর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকালে আলোচনা পর্বে অংশ নেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা এবং গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি জাকির হোসেন। এরপর দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে নাচ পরিবেশন করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শিশুরা। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন এবং চারণ-এর শিল্পীরা। এছাড়া ছিল চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাচিক শিল্পীদের পরিবেশনায় আবৃত্তি।
মানবমুক্তির এই মহান বিপ্লবের শতবর্ষ যথাযথভাবে উদ্্যাপনের জন্য ৩৩টি প্রগতিশীল গণমুখী সাংস্কৃতিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন সাংস্কৃতিক পর্ষদ’ নামে মঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এই মঞ্চের উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন করা হচ্ছে কেবলমাত্র একটি মহান ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য নয় বরং একটা শোষণ-বৈষম্যহীন উন্নত মানবিক ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ সমাজ গড়ার দৃঢ় সংকল্প থেকেই। সোমবার ছিল উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিন।
