ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ির ছাদে প্লেন!

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৭ নভেম্বর ২০১৭

বাড়ির ছাদে প্লেন!

মুম্বাইয়ের তরুণ পাইলট আমোল যাদব সাত বছর আগে একদিন তার পরিবার আর বন্ধুদের কাছে ঘোষণা করলেন, তিনি একটা উড়োজাহাজ বানাবেন। তাও আবার বাড়ির ছাদে। তার এই সংকল্পে সন্দিহান বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা প্রশ্ন করলেন, যদি উড়োজাহাজ বানিয়েও ফেল তবে সেটা ছাদ থেকে নামাবে কিভাবে? আমোল উত্তর দিলেন, ‘তা তো জানি না’। ১৯ সদস্যের যাদব পরিবারের বাস মুম্বাইয়ের এক পাঁচতলা বাড়িতে, যে বাড়িতে কোন লিফট নেই। ফলে যত যন্ত্রপাতি: লেদ মেশিন, কম্প্রেসর, ঝালাই মেশিন এবং একটা ১৮০ কেজি ওজনের ইঞ্জিনসহ সবকিছু বাড়ির সরু সিঁড়ি বেয়ে ওঠালেন ছয় তলার ছাদের ওপর। তারপর শুরু হয়ে গেল উড়োজাহাজের কাজ। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবশেষে তৈরি হলো তার ৬ আসনের সত্যিকারের উড়োজাহাজ। আমোল জানান, তার এই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এত শক্তিশালী যে সে প্রায় ৩,৯২০ মিটার (১৩ হাজার ফিট) উঁচুতে উঠতে পারে। একবারে প্রায় ২ হাজার কিমি দূরত্ব পার হবার মতো জ্বালানি রাখা যায় এর ট্যাঙ্কে। এরপর আমাদের কাজ ছিল প্লেনটি মাটিতে নামিয়ে আনা আর সবাইকে দেখানো, ৪১ বছর বয়স্ক আমোল বলেন। ভারত সরকার সে সময় ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নামে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে যেখানে আমোল তার উড়োজাহাজ দেখানোর আবেদন করেন আয়োজকদের কাছে। কিন্তু অনুমতি পাওয়া যায়নি। আয়োজকরা বলেছিলেন উড়োজাহাজটি প্রদর্শনের মতো যথেষ্ট জায়গা নেই। অতঃপর ভাইদের সহায়তায় নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ঘরে বানানো উড়োজাহাজের উপকারিতা’ বিষয়ে আলোচনা করে বান্দ্রার কনভেনশন মাঠে একটু জায়গা যোগাড় করেন আমোল। এবার সেই প্লেন মাঠে পৌঁছাতে হবে তো! তাই উড়োজাহাজের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুলে আলাদা করে নিয়ে সড়কে নামানো হলো। সেখানে দুটো ট্রাক অপেক্ষা করছিল। সেখান থেকে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো প্রদর্শনীর মাঠে এবং তারপর আবার জোড়া লাগানো হলো। কয়েক ঘণ্টা পর প্রদর্শনী শুরু হলে কৌতূহলী দর্শক ভিড় করে আমোলের ‘ঘরে বানানো উড়োজাহাজের কাছে’ এবং সেই ভিড়ে যুক্ত হন ভারতের বিমান চলাচলমন্ত্রী ও রাঘব-বোয়াল নেতা আর ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে সঙ্গেই আমোল যাদবের উড়োজাহাজ হয়ে উঠল গৃহ হতে মুক্ত এবং জনপ্রিয়। আমোল বলেন, ভারতের প্রথম নিজস্ব উড়োজাহাজ বানাতে প্রস্তুত তিনি। বিনিয়োগকারীরাও যথেষ্ট উৎসাহী বলে জানান তিনি। স্থানীয় বিজেপি সরকার ১৯ আসনওয়ালা উড়োজাহাজ বানাতে কারখানা স্থাপনের জন্য ১৫৭ একর জমি বরাদ্দ করবে বলে জানিয়েছে। তবে ভারতের প্রথম বিমান নির্মাতা হবার পথে আমোলের সামনে এখন একটাই বাধা। স্থানীয় সরকার, এমপি আর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অনুরোধ সত্ত্বেও ভারতের আকাশপথ রেগুলেটরি আমোলের এই বিমানকে উড্ডয়ন ক্ষমতার সার্টিফিকেট দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বলছে, সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে এ বিষয়ে ‘নক্সার মান এবং অপেশাদার-নির্মিত যাত্রীবাহী বিমানকে আরও উন্নত করতে হবে’। -বিবিসি
×