ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিত হত্যাকারী সোহেল গ্রেফতার ॥ স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ নভেম্বর ২০১৭

অভিজিত হত্যাকারী সোহেল গ্রেফতার ॥ স্বীকারোক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্লগার ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী ড. অভিজিত রায় হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সোহেল ওরফে সাকিব আদালতে হত্যার দায় করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সেনাবাহিনীতে ক্যু করার ব্যর্থ চেষ্টাকারী বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার নির্দেশের অভিজিতকে হত্যা করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সোমবার সোহেলকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে জবানবন্দী রেকর্ডের আবেদন করেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। জবানবন্দী রেকর্ড শেষে সোহেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ইকবাল রোড থেকে আবু বক্কর সিদ্দিকী সোহেল (৩৪) নামের ওই সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, সোহেল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ইন্টেলিজেন্স শাখার সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটির শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া (পলাতক)। মেজর জিয়ার নির্দেশেই অভিজিতকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি সুইসাইডাল স্কোয়াড হত্যা করে। অভিজিত হত্যাকা-ের পর বাংলা একাডেমি ও আশপাশের অন্তত ৪৬টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাতে সোহেল অভিজিত ও তার স্ত্রীকে অনুসরণ করছিল বলে দেখা গেছে। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে ফুটপাথে কুপিয়ে অভিজিত রায়কে হত্যা করে জঙ্গীরা। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। রাফিদার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল চাপাতির কোপে কেটে পড়ে যায়। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় অভিজিতের পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. অজয় রায় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যাকা-ের প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মুকুল রানা ওরফে শরিফুল গত বছরের ১৯ জুন খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এবং দলের সদস্যরা গ্রেফতার এড়াতে নাম বদল করে আনসার আল ইসলামের নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। অভিজিত হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে। মামলা তদন্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইয়ের একটি দল ঢাকায় এসেছিল। ঘটনা তদন্তে সংগৃহীত প্রয়োজনীয় আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, অভিজিত রায় বাংলাদেশে আসার পরেই চার থেকে পাঁচবার হত্যার টার্গেট নিয়েছিল জঙ্গীরা। সুবিধাজনক জায়গা না পেয়ে সেসব মিশন ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত প্রচ- ঝুঁকি নিয়েই ভিড়ের মধ্যেই অভিজিত রায়কে হত্যা করে। হত্যাকারীদের সাতজনই সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এজন্য আনসার বাংলা সেভেন নামে অভিজিত রায়কে হত্যার দায় স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে টুইট করা হয়ে থাকতে পারে। মেজর জিয়ার নির্দেশে হত্যা ॥ এদিকে, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক, ব্লগার হত্যাকা-ের হোতা জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া কোথায়? মুক্তমনা লেখক ব্লগার অভিজিত রায় হত্যার অভিযোগে রবিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে অভিযান চালিয়ে এবিটি জঙ্গী মোঃ আবু সিদ্দিক সোহেলকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সংগঠনের বড় ভাই জিয়ার (মেজর জিয়া) নির্দেশে সে ওই হত্যাকা-ে অংশ নেয়। বিশ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতা মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া এখনও অধরা। মেজর জিয়াকে যে কোন মূল্যে ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
×